সংলাপে সমাধানের আশা ক্ষীণ মনে করছে বিএনপি

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপের দিনক্ষণ ঠিক করতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি এ বিষয়ে আর উদ্যোগ নেবে না। ফলে সংলাপের মাধ্যমে সংকট কাটানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
তবে সংলাপ না হওয়ার দায় নিতে চায় না দলটি। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আবার বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি।তবে বর্তমান অবস্থায় সরকারকে চাপে ফেলতে রাজপথে আন্দোলন আরও জোরদার করতে চায় বিএনপি। পাশাপাশি কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টাও অব্যাহত রাখবে তারা। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে টানা তিন দিন অবরোধ বা হরতাল ও পরের সপ্তাহেও এ ধরনের কর্মসূচিতে যাওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ দুই নেত্রীর ফোনালাপের মাধ্যমেই শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিকে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এতে পরবর্তী সময়ে একটি সমঝোতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।স্থায়ী কমিটির অন্য একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা নিজ থেকে সংলাপে যাচ্ছি না। আবার আলোচনার জন্য আমাদের যে শর্ত (নির্দলীয় সরকার) তাও সরকার মানবে না। এ অবস্থায় আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না।’
তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার  বলেন সবকিছু নির্ভর করছে সরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর ওপর। আমরা সংলাপের জন্য সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু সরকার একেক সময় একেক কথা বলছে। আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। এ নিয়ে সংলাপ চাই।বিএনপি নিজ থেকে সংলাপের উদ্যোগ নেবে কি না জানতে চাইলে এম কে আনোয়ার বলেন আমরা কীভাবে উদ্যোগ নেব যেতে হবে তাদের বাড়িতে। তারা না বললে আমরা কীভাবে যাব তিনি সরকারের নেওয়া সংলাপের উদ্যোগকে নাটক হিসেবে অভিহিত করেন।দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির গত মঙ্গলবারের বৈঠকে সংলাপকে ডেড ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও খালেদা জিয়া নিজে বিশেষ কোনো কথা বলেননি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নেতা   বলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে খালেদা জিয়া যে অবস্থান নিয়েছিলেন, স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ সদস্য তার প্রশংসা করেছেন।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে  তাঁরা মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন ও আমন্ত্রণ ছিল মূলত একটি ফাঁদ। সংবিধান সংশোধনের সময় যেভাবে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত ‘প্রধানমন্ত্রীর নিজের’ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, এবারও সে রকমই হবে। সর্বদলীয় সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে বিরোধীদলীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিএনপির দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়েছিল প্রথমে মহাসচিব পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক একটি আলোচনার মাধ্যমে দুই নেত্রীর আলোচনার স্থান, সময়, বিষয় ঠিক করা হবে। এ জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ‘কৌশলী’ ভূমিকা নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীই বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানান।
সে আমন্ত্রণে তাৎক্ষণিক সাড়া না দিলেও বিএনপি প্রথমে ভেবেছিল হরতাল কর্মসূচি শেষে প্রয়োজনে খালেদা জিয়া নিজে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে গণভবনে যাবেন। এ জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। কূটনৈতিকভাবেও বিএনপি চেষ্টা করেছিল দুই পক্ষে কিছু ছাড় দিয়ে আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাতে কোনো সফলতা আসেনি।
বিএনপি এখন মনে করছে, সরকারকে নির্দলীয় সরকার নিয়ে আলোচনায় বসাতে হলে রাজপথে কঠোর আন্দোলন আর কূটনৈতিক চাপে ফেলতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সতর্ক করেছেন খালেদা: গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে তাঁর অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দলের কেউ কেউ রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। সেটি হবে না। কে, কী করছেন, না করছেন তা তিনি জানেন।বিএনপি থেকে সরকারের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে ভূমিকা রাখতে দায়িত্ব দেওয়া আছে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। সংলাপ নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার পর স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য তাঁকে খোঁচা দিয়ে বা কটাক্ষ করে বৈঠকে বক্তব্য দেন।বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত দুজন সদস্য বলেন স্থায়ী কমিটির ওই সব সদস্যের কথায় মহাসচিবও ক্ষুব্ধ হন। এ পর্যায়ে তিনি সংলাপের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও বলেন। তবে এরপর আর এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment