আডলফ হিটলার এর কথা



আডলফ হিটলার ছিলেন অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ তিনি ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশের ফিউরার ছিলেন। হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ভাইমার প্রজাতন্ত্রে নাৎসি পার্টির নেতৃত্ব লাভ করেন। অভ্যুত্থান করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে কারণে তাকে জেল খাটতে হয়েছিল। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ এবং সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। এভাবেই এক সময় জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। নাৎসিরা তাদের বিরোধী পক্ষের অনেককেই হত্যা করেছিল, রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিল, সামরিক বাহিনীকে নতুন নতুন সব অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেছিল এবং সর্বোপরি একটি সমগ্রতাবাদী ও ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন যাতে সকল লেবেনস্রাউম যাকে জীবন্ত অঞ্চল দখল করে নেয়ার কথা বলা হয়। ১৯৩৯ সালে জার্মানরা পোল্যান্ড অধিকার করে এবং ফলশ্রুতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।যুদ্ধের অক্ষ শক্তি তথা জার্মান নেতৃত্বাধীন শক্তি মহাদেশীয় ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু অবশেষে মিত্র শক্তি বিজয় লাভ করেন। ১৯৪৫ সালের মধ্যে জার্মানি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। হিটলারের রাজ্য জয় এবং বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয়। ইহুদি নিধনের সে ঘটনা ইতিহাসে হলোকস্ট নামে পরিচিত।১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে হিটলার বার্লিনেই ছিলেন। রেড আর্মি যখন বার্লিন প্রায় দখল করে নিচ্ছিল সে রকম একটা সময়ে ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি ফিউরারবাংকারে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন।
হিটলারের কৈশোর ও যৌবনকাল
হিটলারের বাবা Alois বৈধভাবে কোন জাতে ছিলেন না। এক কথায় বলতে গেলে জারজ ছিলেন। তিনি জীবনের অনেকটা সময় শেষ নাম হিসেবে মায়ের নাম Schicklgruber ব্যবহার করেছিলেন। ১৮৭৬ সালেই Alois প্রথম হিটলার নামটি গ্রহণ করেন। তার ছেলে অ্যাডলফ ও কখনও হিটলার ছাড়া অন্য কোন শেষ নাম ব্যবহার করেনি।সরকারী কাস্টম্‌স থেকে অবসর গ্রহণের পর হিটলারের বাবা সপরিবারে আপার অস্ট্রিয়ার লিন্‌ৎস শহরে চলে আসেন। সেখানেই হিটলারের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। এই কারণে সারাজীবন তিনি লিন্‌ৎসকে ভালবেসে গেছেন কোন শহরকে এর উপরে স্থান দিতে পারেননি। বাবাকে তিনি খুব পছন্দ করতেন না বরং ভয় করতেন। কিন্তু মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালবাসার কোন কমতি ছিল না। ১৯০৩ সালে বাবা মারা যান। বাবার রেখে যাওয়া পেনশন এবং সঞ্চয়ের অর্থ দিয়েই তাদের সংসার কোনমতে চলতে থাকে। অনেক ভোগান্তির পর ১৯০৭ সালে মাতাও মারা যান। হিটলার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। পড়াশোনায় বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। এক সময় ভিয়েনায় যান। কিন্তু চিত্রশিল্পী হবার স্বপ্ন নিয়ে আবার লিন্‌ৎসে ফিরে আসেন। আবার ভিয়েনায় যান। সামান্য যা ভাতা পেতেন তা দিয়ে ভিয়েনার মত শহরে চলতে ফিরতে তার বেশ কষ্ট হতো। শিল্পী হিসেবেই তার বেশ সম্ভাবনা ছিল। সেই উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়ার একাডেমি অফ ফাইন আর্টস এ ভর্তি পরীক্ষা দেন। কিন্তু সুযোগ পাননি।


হিটলারের লেখা গ্রন্থ হল মেইন কামফ।অজ্ঞতা বেশ কবছর তাকে একাকী এবং বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে হয়। সে সময় পোস্টকার্ড ও বিজ্ঞাপনের ছবি এঁকে সামান্য উপার্জন করতেন। সেই অর্থ দিয়ে ভিয়েনার এক হোস্টেল থেকে আরেক হোস্টেলে বাস করতে থাকেন। সে সময় তার মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছিল যেগুলো তার পরবর্তী জীবন সম্বন্ধে আমাদের কিছু ধারণা পেতে সাহায্য করে। যেমনঃ একাকীত্ব, গোপনীয়তা, প্রাত্যহিক অস্তিত্বের বোহেমীয় ভাব এক কথায় ছন্নছাড়া জীবন-যাপন, কসমোপলিটানিজ্‌মের প্রতি ঘৃণা এবং ভিয়েনার বহুজাতিক অবস্থার প্রতি বিতৃষ্ণা।
এর পর ১৯১৩ সালে মিউনিখে চলে যান। ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রীয় সামরিক বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন। স্বাস্থ্যগত কারণে সৈনিক হবার সুযোগ পাননি। তাকে সামরিক বাহিনীর জন্য আনফিট ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ছিলেন ১৬তম বাভারিয়ান রিজার্ভ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে। যুদ্ধের পুরোটা সময় জার্মানিকে সেবা দিয়ে গেছেন। ১৯১৬ সালের অক্টোবরে আহত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন। তাছাড়া যুদ্ধের বাকিটা সময় সক্রিয় থেকেছেন। অধিকাংশ সময়ই সম্মুখ সারিতে থেকে হেডকোয়ার্টার্স রানার হিসেবে কাজ করেছেন। যুদ্ধে সাহসিকতা এবং বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে সেকেন্ড ক্লাস আয়রন ক্রস লাভ করেন। ১৯১৮ সালের আগস্টে তাকে ফার্স্ট ক্লাস আয়রন ক্রস দেওয়া হয়। একজন করপোরালের পক্ষে এটা বেশ বড় প্রাপ্তি। হিটলার খুব উৎসাহের সাথে যুদ্ধ করেছেন।
হিটলারের রাজনীতিতে প্রবেশ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি হেরে যায়। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে হিটলার রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯১৯ সালের মে বা জুনের দিকে জার্মানির বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে মিউনিখের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন। সেপ্টেম্বরে মিউনিখের ক্ষুদ্র দল জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি-তে সামরিক রাজনৈতিক এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯২০ সালে তাকে এই দলের প্রচারণার দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলের ভেতরে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন। সে বছরই দলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় National-sozialistische Deutsche Arbeiterpartei নাৎসি পার্টি। জার্মানির তৎকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরনের একটি রাজনৈতিক দলের উত্তরণের বেশ ভাল সম্ভাবনা ছিল। কারণ যুদ্ধের বিভীষিকা এবং শান্তি চুক্তিতে জার্মানির বিশাল পরাজয়ের কারণে জনমনে অসন্তোষ দানা বেধে উঠেছিল। তার সাথে ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা। বাভারিয়াতে সেই অবস্থা ছিল আরও বিরূপ। সেখানে বার্লিনের প্রজাতন্ত্রী সরকারের তীব্র বিরোধিতা প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল। হিটলারও বাভারিয়ার মিউনিখ শহরেই তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯২০ সালেই একটি ডানপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বার্লিনে সামরিক ক্যু করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সে ক্যু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।


আডলফ হিটলারের যৌনজীবন
আডলফ হিটলারের যৌনজীবন নিয়ে দীর্ঘদিন ইতিহাসবিদ এবং পন্ডিতদের মধ্যে অনেক বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই জানে পুরো জীবনে কিছু সংখ্যক মেয়ের সাথে তার রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল এবং একই সাথে সমকামিতার প্রতি তার বিদ্বেষ দেখা গেছে। তিনি সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তার নাম অনেক মেয়ের সাথেই যুক্ত হয়েছে যাদের মধ্যে দুজন আত্মহত্যা করেছে। অন্যান্য ঘটনার মধ্যে আছে একজন আত্মহত্যা চেষ্টার ৮ বছর পর মারা গিয়েছিল এবং আরেকজন একটি ব্যর্থ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল। হিটলারকে সবাই জানত একজন ঘরোয়া জীবন বাদে একজন চিরকুমার মানুষ যিনি তার পুরো জীবন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও রাষ্ট্রের জন্য উৎসর্গ করেছেন। ইভা ব্রাউনের সাথে তার ১৪ বছরের প্রেমের সম্পর্ক বাইরে এবং ভেতরের কেউ জানত না। ব্রাউনের জীবনীলেখক হেইকে গোরটেমা উল্লেখ করেছেন যেঃ এই জুটির স্বাভাবিক যৌন জীবন উপভোগ করত। হিটলার এবং ব্রাউন ১৯৪৫ সাল এর এপ্রিলের শেষ দিকে বিয়ে করেছিলেন এবং আত্মহত্যার পূর্ব পর্যন্ত ৪০ ঘন্টারও কম সময় একসাথে ছিলেন।
এলিস কর্তৃক যুদ্ধের সময়ের দুইটি প্রতিবেদনে হিটলারকে মানসিকভাবে বিশ্লেষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে ওয়াল্টার সি ল্যাঙ্গার দি আমেরিকান অফিস অব স্ট্র্যাটিজিক সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলেন হিটলারের অবদমিত সমকাম প্রবণতা ছিল এবং আরো বলেন হিটলার পুরুষত্বহীন কর্পোহিল ছিলেন। হেনরি মুররে এবং নাৎসি পার্টি বিরোধী অট্টো স্ট্রেসার আলাদা আলাদা প্রতিবেদনে একই মত দেন। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ স্যার ইয়ান কারশাও স্ট্রেসারের মতকে হিটলার বিরোধী প্রোপাগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করেন।
হিটলার সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য
হিটলারের যৌনজীবন নিয়ে নানা ধরণের গুজব আর জল্পনা-কল্পনা আছে সেগুলোর অনেকগুলোই আবার রাজনৈতিক শত্রুদের দ্বারা মশলাযুক্ত হয়েছে। যেখানে হিটলারের কাছাকাছি অনেকেই তার যৌন পছন্দ সম্পর্কে জানতেন কিন্তু তার যৌনতা নিয়ে চুড়ান্ত কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। হিটলারের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে যা প্রমাণ পাওয়া যায় তার প্রায় সবগুলোই তার আশেপাশের লোকজনের কাছে পাওয়া। আশেপাশের এসব লোকজনের মধ্যে আছেন তার সহকারী তার সেক্রেটারি অ্যালবার্ট স্পিয়ার রিচার্ড ওয়াগ্নার পরিবার ইত্যাদি। প্রমাণ আছে পুরো জীবনে কিছু সংখ্যক মেয়ের সাথে তার রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল এবং একই সাথে সমকামিতার প্রতি তার বিদ্বেষ দেখা গেছে। তিনি সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ স্যার ইয়ান কারশাও বর্ণনা করেন যে ভিয়েনার একজন যুবক হয়ে হিটলার নিজেকে সমকামিতা ও পতিতাবৃত্তিসহ যেকোণ ধরণের যৌন কর্মকান্ড থেকে নিজেকে নিরস্ত রাখেন। সে আসলে যৌনতার মাধ্যমে ছড়ানো রোগগুলোর ভয় পেতেন । হারমান রাউশনিং অভিযোগ করেন যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কোর্ট মার্শালর বিষয়ে মিলিটারে রেকর্ডে একটা অনুচ্ছেদে দেখা যায় এক অফিসারের সাথে হিটলারের গোপন সমকাম সম্পর্ক ছিল। রাউশনিং আরো অভিযোগ করেন যে মিউনিখে অনুচ্ছেদ ১৭৫ এর ভাঙ্গার অপরাধে হিটলার অপরাধী ছিলেন যা সমকামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি অভিযোগগুলোর।হিটলার যুবকথাকা অবস্থায় কিছু সাময়িক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সে তার চেয়ে ১৯ বছরের ছোট এক দুঃসম্পর্কের ভাগ্নি গেলি রাউবালের সাথে গভীরসম্পর্কে যুক্ত ছিলেন। ১৯২৫ সালে মেয়েটির মা হিটলারের গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হলে সে হিটলারের বাসায় থাকা শুরু করে। যদিও সম্পর্কের আসল প্রকৃতি এবং ব্যাপ্তি সম্পর্কে অনেককিছু অজানা হলেও কারশাও এটাকে সুপ্ত যৌন নির্ভরতা হিসেবে অভিহিত করেন। সমসাময়িককালে গুজব ছিল যে তাদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক আছে। ১৯৩১ এর সেপ্টেম্বরে গেলি হিটলারের বন্দুক দিয়ে মিউনিখের সেই এপার্টমেন্টে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় হিটলার গভীর ব্যথা পেয়েছিলেন। মিউনিখের প্রথম দিনগুলোতে হিটলারের আশেপাশের মানুষের মধ্যে একজন আর্নেস্ট হানফসটায়েঙ্গি লেখেন যে, "আমার মনে হয় হিটলার এমন একটা মানুষ ছিল যে মাছও নন মাংসও নন আবার পাখিও নন। যে পুরো সমকামীও নন আবার পুরো বিপরীতকামীও নন। আমি তাকে নপুংসক হস্তমৈথুন বিরত মানুষ বলে অভিযুক্ত করেছিলাম। তাছাড়া হানফসটায়েঙ্গি হিটলারকে বিপরীতকামীতা নিয়ে অভিযুক্ত করেন যে হিটলার এবং আমেরিকান এম্বাসেডরের মেয়ে মার্থা ডডের সাথে রোমান্টিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তার মতে ফিল্মমেকার লেনি রিফেনস্টাহি হিটলারের সাথে সম্পর্ক করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হিটলার মেয়েটিকে প্রত্যাখ্যান করেন।
হিটলারের সময়ে সমকামীদের নির্যাতন করা হত। প্রায় ৫০০০ থেকে ১৫০০০ সমকামীকে পাঠানো হয়েছিল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যাদের মধ্যে ২৫০০ থেকে ৭৫০০ জন মারা যায়। নাইট অফ দি লং নাইভস এর পরে হিটলার আর্ন্সট রুহম এবং অন্যান্য এসএ নেতার সমকামিতাকে নিতিভ্রষ্টতা এবং ব্যাভিচার হিসেবে ব্যাখ্যা দেন। ১৯৪১ সাল এর আগস্টে হিটলার ঘোষণা দেন যে সমকামিতা প্লেগের মত সংক্রামক ও বিপজ্জনক এবং হেইন্রিখ হিমম্লারের মিলিটারি ও এসএস থেকে সমকামী সরানোর উদ্যোগ সমর্থন করেন। ছেলেদের সমকামিতা ছিল অবৈধ এবং দোষীদের সরাসরি জেল অথবা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হত।তিনি ক্ষমতার কারণে মেয়েদের কাছে নিজেকে আকর্ষনীয় মনে করতেন। হিটলারের বন্ধু অ্যালবার্ট স্পিয়ার তার একটা পছন্দের কথা বলেন যে সে কম বুদ্ধিমান মেয়দের সময় কাটাতে ভালোবাসে যেসব মেয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না। কারশাও ধারণা করেন যে হিটলার সেইসব যুবতী মেয়েদের পছন্দ করতেন যাদের খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব ফলানো যায়। তিনি উল্লেখ করেন যে হিটলারের মেয়ে সহযোগীদের মধ্যে কমপক্ষে ৩ জন ছিল তার থেকে অনেক বেশি কম বয়সের। ব্রাউন তার থেকে ২৩ বছরের ছোট ছিলেন রাউবাল ছিলেন ১৯ বছরের ছোট এবং রেইটার ছিলেন ২১ বছরের ছোট।ইভা ব্রাউনের সাথে তার ১৪ বছরের প্রেমের সম্পর্ক বাইরে এবং ভেতরের কেউ জানত না। আশেপাশের সবার মাঝে তিনি ব্রাউনকে নিয়ে খোলামেলা ছিলেন। বারচটেনসগাডেন এ তারা জুটি হিসেবে বাস করতেন। হিটলারের ভৃত্য হেইঞ্জ লিঞ্জ জানান হিটলার আর ব্রাউনের আলাদা আলাদা শোবার ঘর এবং বাথরুম ছিল। তাদের শোবার ঘরের মাঝে একটা দরজা ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত শুধুমাত্র তারা দুজন একসাথে পড়তেন। ব্রাউন ড্রেসিং গাউন কিংবা হাউজ কোট পরতেন এবং ওয়াইন পান করতেন আর হিটলার চা । ব্রাউনের জীবনীলেখক হেইকে গোরটেমা উল্লেখ করেছেন যে এই জুটির স্বাভাবিক যৌন জীবন উপভোগ করত। ব্রাউনের বন্ধু এবং আত্মীয়রা ১৯৩৮সাল এ ফটোগ্রাফার নেভিলি চেম্বারলিনের তোলা মিউনিখে হিটলারের ফ্ল্যাটের সোফায় তার বসা ছবি দেখে হাসাহাসি করত এবং বলতেন কি হয়েছে সেটা সেই জানে আর সোফা জানে ।
হিটলারের চিঠি প্রমাণ করে যে হিটলার ব্রাউনকে পছন্দ করতেন এবং খেলা বা অন্য কারণে চায়ের টেবিলে দেরী হলে চিন্তিত হতেন। তার ব্যাক্তিগত সচিব ট্রাউডল জাঙ্গে বলেছেন যুদ্ধের সময় হিটলার এবং ব্রাউন নিয়মিত কথা বলতেন। ব্রাউন যখন মিউনিখে তার থেকে দূরে ছিলেন তখন তিনি তার নিরাপত্তার ব্যাপারে অবগত ছিলেন এবং ব্রাউনকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। জাঙ্গে একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন তিনি বিয়ে করেননি। হিটলার উত্তর দিয়েছিলেন যে আমি আসলে বউকে বেশী সময় দিতে পারব না। হিটলার আরো বলেছিল যে সে সন্তান চায় না। কারণ খুব কঠিন সময়। কারণ সন্তানরা তার বিখ্যাত বাবা মায়ের মত বিখ্যাত হওয়ার মত ক্ষমতা আছে বলে ধরে নেওয়া হয় এবং সন্তানরা যদি মাঝারি হয় তাহলে মেনে নেওয়া যায় না।


হিটলারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অভিযোগসমূহ
হিটলারের মৃত্যুর পর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে তার যৌনতার প্রকার নিয়ে নানারকম মত আছে। অনেকে বলে সে সমকামী অনেকে উভকামী আবার অনেকে বলে তার মধ্যে যৌন অনুভুতিই নেই। তবে কোনটারই কোন প্রমাণ নেই।১৯৯৫ সালে স্কট লাইভ্লি এবং কেভিন আব্রাহামের লেখা দি পিঙ্ক স্বস্তিকা বইয়ে উল্লেখ করা হয় যে নাৎসি পার্টির উপরের সারির নেতাদের বেশীরভাগ নেতা সমকামী ছিল এবং সেই সমকামীরা দুর্ধর্ষ এবং বিপজ্জনক ছিল। প্রধান ধারার ইতিহাসবিদেরা ওই বইটিতে তথ্য বিকৃতির জন্য সমলোচনা করেন। সাউদার্ণ পোভার্টি ল সেন্টারের লেখক বব মোজার বলেন বইটি সমকামবিরোধী গ্রুপের দ্বারা প্রচারিত হয়েছিল এবং ইতিহাসবিদরা একমত হয়েছেন যে বইটির তথ্য ডাহা মিথ্যা।ইউনিভার্সিটি অব ম্যাচাচুয়েটস লোয়েলের জ্যাক নাউসান পোর্টার ১৯৮৮ সালে লেখেনঃ যে হিটলার কি সমকামীদের ঘৃণা করতেন? সেকি নিজে তার সমকামীতার জন্য লজ্জিত ছিলেন? সেসবই আমাদের জানার সীমানার বাইরে। আমার মতে সাধারণ চোখে তিনি পুরো যৌন উদাসীন একজন ব্যাক্তি এবং আসলে তিনি একজন উদ্ভট যৌন ফেটিশধারী ব্যাক্তি।

ইতিহাসবিদ লোথার ম্যাচটান দি হিডেন হিটলারের সমকামিতা নিয়ে বিতর্ক করেন। বইটিতে ভিয়েনায় হিটলারের যুবক বন্ধুদের সাথে অভিজ্ঞতা নিয়ে ধারণা করা হয় তার প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সম্পর্ক ছিল রূহম হানফসটাএংল এবং এমিল মাউরাইসে সঙ্গে এবং বইটিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের সহযোগী হ্যান্স মেন্ডের ১৯২০ সালের এর সে দশকের প্রথম দিকে মিউনিখ পুলিশের কাছে অভিযোগগুলোর বিশ্লেষণ নিয়ে এ স্টাডি অব মেন্ড প্রোটকল সিরিজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমেরিকান সাংবাদিক রন রোজেনবাউম মাচটানের কাজের খুব সমলোচনা করেন এবং বলেন যে প্রমাণ এতই কম যে সেটা প্রমাণ বলার যোগ্যতাই রাখে না। বেশীরভাগ পন্ডিত মাচটারনের অভিযোগ উড়িয়ে দেন এবং বিশ্বাস করেন যে হিটলার বিপরীতকামী। ২০০৪ সালে এইচবিও মাচটানের তত্ত্বের উপর হিডেন ফাহরার ডিবেটিং দি এনিগ্মা অব হিটলারস সেক্সুয়ালিটি শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে ।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment