বিএনপির ১৬ গুরুত্বপূর্ণ নেতাকরমীকে কারাগারে আতক করে রাখা হয়েছে

বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠক করে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গতকাল সোমবার রাতে আটক হন ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী।
এর আগের দিন দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার পরপরই গ্রেপ্তার হন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তাঁকে ঢাকার বাংলামোটরে পুলিশ হত্যা মামলায় আসামি করা হয়। এ মামলায় গতকাল তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বিএনপি বলছে, যখনই কোনো নেতাকে দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেওয়া হয়, তখনই তাঁকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
এর আগে বিএনপির মুখপাত্র ও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দুই দফা গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি পরে জামিনে বের হলেও এখন গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগই পুলিশের ধরপাকড়ের মুখে আত্মগোপনে আছেন।
মির্জা ফখরুল আত্মগোপনে যাওয়ার পর দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পান যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে লম্বা সময় ধরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হননি। সেখানে থেকেই দলের বক্তব্য ও কর্মসূচি গণমাধ্যমে তুলে ধরছিলেন। গত ৩০ নভেম্বর ভোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে রিজভীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই দিনই তাঁকে ধরার জন্য তাঁর বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। তিনি আত্মগোপনে গিয়ে কয়েক দিন অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে দলীয় বক্তব্য ও কর্মসূচি দেন।
এরপর কয়েক দিন গণমাধ্যমে দলীয় বক্তব্য তুলে ধরেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনিও এখন আত্মগোপনে চলে গেছেন।
এভাবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১৬ জন কারাগারে আছেন। বাকি নেতাদের অধিকাংশই আত্মগোপনে। যাঁদের গ্রেপ্তারের আশঙ্কা কম, কেবল তাঁরাই প্রকাশ্যে রয়েছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, বিএনপিতে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও আইনজীবী নেতাদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম বলে মনে করা হয়। এই দুই ঘরানার নেতাদের এখন প্রকাশ্যে দেখা যায়। যদিও গত রোববার মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদকে এবং তার আগে ২৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা নেতারা দাবি করেন, ২৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর টানা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে দলের প্রায় ছয় হাজার নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন। পরে তাঁদের অনেকে ছাড়াও পেয়েছেন। এরপর ঢাকা অভিমুখে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণার পর আটক হয়েছেন আরও প্রায় দেড় হাজার জন। তবে তাঁদের সবাই বিএনপির কর্মী নন; সাধারণ মানুষও আছেন অনেক।
তবে এ মুহূর্তে সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির মোট কতজন নেতা কারাগারে আছেন, সে সম্পর্কে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের কারও কাছে সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে দলটির দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, গত এক মাসে বিভিন্ন মামলায় ৫০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা আসামি থাকায় নেতা-কর্মীরা সবাই গ্রেপ্তার-আতঙ্কে থাকেন। কেননা, কাউকে সামনে পেলেই পুলিশ আটক করে ওই সব মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে।
কারাবন্দী ১৬ নেতা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারজন নেতা এখন কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁরা হলেন: মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং আ স ম হান্নান শাহ। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টু ও মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ১২ জন নেতা এখন কারাগারে আছেন। তাঁরা হলেন: ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, শমসের মবিন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় সদস্য বেলাল আহমেদ, রওশন আরা ফরিদ ও সাংসদ শাম্মী আক্তার।
এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গসংগঠনের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মীর শরফত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বজলুর করিমকে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হরতাল-অবরোধের সময় করা মামলার বাইরে অন্য মামলায় আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কারাবন্দী আছেন।
এ ছাড়া ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি দেওয়ার পর দুই দিন ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যাঁকে পাচ্ছে তাঁকেই গ্রেপ্তার করছে। কাউকে দলের কোনো দায়িত্ব দেওয়া মাত্রই তাঁকে ধরার জন্য পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, কেউ সেখানে গেলেই আটক করা হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় কৌশলগত কারণে অনেক নেতাকে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment