দোষীদের শাস্তির দাবি
সুপ্রিম কোর্টের বিধি মানছেন না কেউ
টানা
দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে রাজনৈতিক
হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল এখানে বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত আইনজীবীদের
সঙ্গে আওয়ামী মহিলা যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ইট ও জুতা ছোড়াছুড়ি হয়।
সুপ্রিম কোর্টের বিধিমালা অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট
প্রাঙ্গণে মিছিল-সমাবেশ করাই নিষেধ। ২০১২ সালে সর্বশেষ সংশোধিত সুপ্রিম
কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) বিধিমালা, ১৯৭৩-এর বিবিধ অধ্যায়ে বলা হয়েছে,
আইনজীবী, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী অথবা যেকোনো ব্যক্তি আদালত প্রাঙ্গণে
বা আদালত ভবনের কোনো অংশে মিছিলের আয়োজন বা অংশ নিতে বা স্লোগান দিতে
পারবেন না, অথবা বিক্ষোভ প্রদর্শন বা সভা করতে পারবেন না। প্রায়ই এই বিধি
ভঙ্গ করে আদালত চত্বরে সভা-সমাবেশ বা মিছিল করেন আইনজীবীরা, এমনকি আদালত
ভবনের ভেতরেও উচ্চ স্বরে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। তবে আদালত চত্বরে
আইনজীবীদের ওপর চড়াও হয়ে এমন মারধরের ঘটনা বিরল।
গত রোববার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে
নৈরাজ্য শুরু হয়। মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়া
বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী
সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ওই হামলায় দুই নারী আইনজীবী সিমকী ইমাম খান ও
রেহানা পারভীনকে লাথি, কিল-ঘুষি মারা হয় এবং লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এ সময়
আহত হন আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী। আর দর্শকের ভূমিকা পালন করেন কোর্ট
প্রাঙ্গণের বাইরে থাকা পুলিশ সদস্যরা।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ আইনবিদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক গতকাল প্রথম আলোকে
বলেন, ‘দুই দিন ধরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যা ঘটেছে, তাতে দেশের
সর্বোচ্চ আদালতের মান-মর্যাদা-সম্মান সব ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। একজন বিচারক
বলেছেন, যা ঘটেছে তাতে সুপ্রিম কোর্টের জানাজা পড়া হয়ে গেছে। কতটা দুঃখ
পেলে তিনি এ কথা বলতে পারেন?’
মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের
বিধিমালার উল্লেখ করা হলে রফিক-উল হক বলেন, ‘সারা দেশেই রুলস নেই, সুপ্রিম
কোর্টের রুলসে থাকলে আর কী হবে?’
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের
অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট আইনবিদ
ও আইনজীবীদের কয়েকটি সংগঠন। তদন্ত করে অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির
আওতায় আনার দাবিসহ আজ মঙ্গলবার সারা দেশের আদালতগুলোতে কর্মবিরতি কর্মসূচি
ডেকেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। আইনজীবীদের ওপর হামলা ও নির্যাতন
বন্ধের জন্য সরকারের যথাযথ উদ্যোগের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন
ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
২০০৬ সালেও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এক তিক্ত অভিজ্ঞতার
মুখোমুখি হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তৎকালীন
রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিটের
পরিপ্রেক্ষিতে ওই ঘটনা ঘটে। তবে সেবারের নৈরাজ্যের সঙ্গে বহিরাগতরা
সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, আইনজীবীরাই আদালত ভবনে নির্বিচারে ভাঙচুর
চালিয়েছিলেন। বহিরাগতদের হাতে আইনজীবীদের প্রহূত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম
ঘটল।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর বহিরাগতদের
ন্যক্কারজনক হামলায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী
সমিতি। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী
পরিষদ এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে
বিশ্বাসী আইনজীবীদের এসব সংগঠন একে অন্যকে দোষারোপ করে দায়ী ব্যক্তিদের
শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আজ সারা
দেশের আদালতগুলোতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। নারী
আইনজীবীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে
বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান
ও ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। আইনজীবী না হয়েও তাঁরা আইনজীবীদের
মিছিলে অংশ নেন এবং বিক্ষোভ দেখান।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক, সুপ্রিম কোর্টের
আইনজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল বিবৃতি
দিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। বিবৃতিতে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক
ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এবং এসব হামলা ও নির্যাতন বন্ধে সরকারের যথাযথ
উদ্যোগের দাবি জানানো হয়।
About juwel ishlam
This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন