বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ
আইন’ পাসের উদ্যোগ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে আবার সংগঠিত হচ্ছে হেফাজতে
ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটি রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে আগামী
নভেম্বর মাসে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য এসব কর্মসূচির তারিখ
এখনো প্রকাশ করা হয়নি।হেফাজতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, আগামী ১৫
নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে কওমি মাদ্রাসা-ভিত্তিক
সংগঠনটির। ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে একাধিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশ বা শানে
রেসালত সম্মেলন করা হবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সিলেট ও খুলনায় সমাবেশ
করার লক্ষ্যে স্থানীয় হেফাজত নেতাদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এর আগে
আগামী শনিবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পার্বতী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ
করার ঘোষণা রয়েছে।জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী স্বীকার করে গতকাল বলেন সব বিভাগীয় শহরে আমরা সমাবেশ করব। এর মধ্যে ১৫ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’গতকাল বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতের ঢাকা
মহানগর কমিটি আগামী শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে
বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। পরে সন্ধ্যায় হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী
শুক্রবারের এই কর্মসূচি স্থগিত করার নির্দেশ দেন।এর কারণ জানতে চাইলে মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, একই দিন
আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল ও বিরোধী দলের কর্মসূচি রয়েছে। তাই সাংঘর্ষিক
পরিস্থিতি এড়াতে শুক্রবারের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে অন্যান্য
কর্মসূচি বহাল আছে।
আল্লাহ, পবিত্র কোরআন, মহানবী (স.) ও ইসলামের অনুশাসনের
বিরুদ্ধে কটূক্তিকারী কথিত ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ১৩ দফা
দাবিতে গত এপ্রিল থেকে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। তবে সংগঠনটি পুরোনো ১৩
দফার সঙ্গে এবার সামনে আনছে সরকারের প্রণীত প্রস্তাবিত কওমি মাদ্রাসা
শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইনকে।কওমি আলেমদের বড় একটি অংশ মনে করছে, এই কর্তৃপক্ষের
মাধ্যমে সরকার মূলত কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব আরোপের
জন্য একটি আইনি বাধ্যবাধকতায় জড়ানোর চেষ্টা করছে। তাই শুরু থেকেই কওমি
ধারার আলেমরা সরকারের এই কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাসের
উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছেন। এ আইন পাস হলে ‘দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে’ বলে
সরকারকে হুঁশিয়ার করে বক্তব্য দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও কওমি
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফী।এদিকে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইনটি পাস করার
লক্ষ্যে এর খসড়া অনুমোদনের জন্য গত সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিবেচিত
বিষয়ের তালিকায় রাখা হয়েছিল। পরে তা প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষা
মন্ত্রণালয়। অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন আইনটি আরও যাচাই-বাছাই করার লক্ষ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।হেফাজতে ইসলামের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, তাঁদের
আশঙ্কা, সরকার যেকোনো সময় এ আইন পাস করিয়ে নিতে পারে। এ জন্য তাঁরা
আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা জানান, ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন,
আলেম-ওলামাদের নামে দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার হওয়া
নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাস না করার
দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে হরতালের মতো
কর্মসূচিও আসতে পারে।এর আগে গত ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ এবং এরপর ৫ মে
ঢাকা অবরোধের পর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক
আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম। অবশ্য ৫ মে মধ্যরাতে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির
যৌথ অভিযানের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হেফাজত। এর ছয় মাসের মাথায় সংগঠনটি
আবার সক্রিয় হতে যাচ্ছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন