
সেই
পুরনো সংস্কৃতি। গরু কিনলে ছাগল ফ্রি। প্রাথমিকভাবে এভাবেই ক্রেতাকে
আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে বিক্রেতারা। কিন্তু গরুর মূল্য শুনে ক্রেতার মাথায় হাত।
এত! দ্বিগুণেও বেশি? ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সেই তুলনায় পশুর সংখ্যা এখন
পর্যন্ত কম। আর বিক্রেতাদের দাবি আকাশচুম্বী হওয়ায় কেনা-বেচাও তেমন হচ্ছে
না। আজ শুক্রবার ভিড় আরো বাড়বে বলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই বক্তব্য।
কোরবানির পাঁচ দিন বাকি থাকলেও এই হচ্ছে রাজধানীর পশুহাটগুলোর সার্বিক
চিত্র। কোনো কোনো হাটে এখনো পর্যাপ্ত পশু না আসায় ক্রেতারা শুধুই ঘুরে
বেড়াচ্ছেন। আশানুরূপ গরু-ছাগল না পাওয়ায় তারা সাধ ও সাধ্য এক করতে পারছেন
না। এ দিকে গরু বেপারি-বিক্রেতা এবং বহনকারী যানবাহনের চালকদের অভিযোগ,
‘চাঁদাবাজিতে দিশেহারা তারা’।
নগরীর ১৯ হাটের মধ্যে গাবতলীতে এখন উপচে পড়া ভিড়। দেশ-বিদেশ থেকে আসা নানা
জাতের পশুতেও কানায় কানায় ভর্তি পুরো গাবতলী হাট। বিক্রি হচ্ছে খুবই
সামান্য। ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের ধার্যকৃত হাসিলের চেয়ে বেশি
অর্থ আদায় করছেন তারা। দালালদের উৎপাতেও দিশেহারা ক্রেতারা। গতকাল গাবতলী
হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশী গুরুর চেয়ে ভারত ও নেপালের গরু অনেক বেশি। বিদেশী
গরুর মধ্যে-ভারতের হরিয়ানা, খাসিয়ানা, সিøকি, ফিজিয়ানা এবং নেপালের
সম্বলপুরী গরু ছিল দৃষ্টি কাড়ার মতো। এ ছাড়া উটও রয়েছে অন্য বছরের তুলনায়
অনেক বেশি। বিক্রেতারা কিছু উটকে সৌদি আরব এবং ইরাকের বলে উল্লেখ করলেও
ওগুলো মূলত ভারতের রাজস্থান থেকেই এসেছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ দিকে
ভারতের খাসিয়ানার একটি গরু কিনলে একটি ছাগল ফ্রি বলে বিক্রেতারা হ্যান্ড
মাইকে ঘোষণা দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। খাসিয়ানা গরুটির দাম
হাঁকিয়েছেন তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে সেখানে ক্রেতার চেয়ে উৎসুক জনতার
উপস্থিতি ছিল বেশি।
দেশী গরুর পাশাপাশি সীমান্ত পথেও শত শত গরু আসছে। প্রবেশপথে গরুপ্রতি
সরকারি রাজস্ব ৫০০ টাকা ধার্য থাকলেও ঘাটে ঘাটে বেপারিদের চাঁদা দিতে
হচ্ছে। একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, পথে পথে তাদেরকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এ কারণে
গরুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। এসব চাঁদার মধ্যে ট্রাফিকরা প্রতি ট্রাক গরুর জন্য
বিশেষ টোকেন নিতে পাঁচ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে। এ ছাড়া ফেরিতে ওঠার আগে
৩০০ টাকার স্থলে ১২০০ টাকা দিতে হয়েছে দৌলদিয়াঘাট শ্রমিক লীগ নেতাদের।
সেখান থেকে মানিকগঞ্জ আসার পর আবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামে ৫০০ টাকা চাঁদা
দিতে হয়েছে। সর্বশেষ সাভারে ট্রাফিক পুলিশ নিয়েছে ৩০০ টাকা। বিষয়টি
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও চাঁদা নেয়া থামছে না। এ দিকে
সীমান্তে আমদানিকৃত গরুর কাগজপত্র তৈরি নিয়ে সময় ক্ষেপণের অভিযোগ
বেপারিদের। আব্দুল খালেক নামে এক বেপারি জানান, তাদেরকে কাগজপত্র তাৎক্ষণিক
না দিয়ে এক দিন পর দেয়া হচ্ছে। এতে তাদের খরচ বাড়ছে।
গাবতলী পশুহাটের ৯ নম্বর হাসিলঘরের সুপারভাইজার ইউসুফ জানালেন, গড়ে এখন
তিন-চার হাজার গরু বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, শুক্রবার থেকে আশা করি
পুরোপুরি বেচাকেনা শুরু হবে। হাসিলের ব্যাপারে তিনি বলেন, এবার হাজারে ৩৫
টাকা করে হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি কেউ বেশি নিয়ে থাকে তাহলে আমাদের
কাছে অভিযোগ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অন্য দিকে হাট ঘুরে দেখা
গেছে, এক হাজার টাকায় ৩৫ টাকা হাসিল ধার্য থাকলেও বেশির ভাগ হাসিলঘরে ঈদ
বকশিশের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এ দিকে পশুহাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিñিদ্র নিরাপত্তা প্রদানের কথা বললেও
এখন পর্যন্ত তার কোনো আলামত নেই। গাবতলী হাটে গতকাল একটিমাত্র পুলিশের টহল
টিম দেখা গেছে রাস্তার বেড়িবাঁধের ওপর। কামরুল, আশরাফ, আলতাফসহ বেশ কয়েকজন
বিক্রেতা অভিযোগ করেছেন, তারা আতঙ্কিত। দালাল বেশে যেসব লোক অবাধে ঘোরাঘুরি
করছে তাদের মধ্যে অনেকেই দুর্বৃত্ত রয়েছে বলে তাদের আশঙ্কা। সিসি টিভি
বসানোর কথা থাকলেও তা লক্ষ্য করা যায়নি।
আরমানিটোলা হাটও কানায় কানায় পূর্ণ। এখানে মূল হাট ছাড়িয়ে পশু চলে এসেছে
রাস্তায়ও। এখানকার বিক্রেতারা জানালেন, আগে থেকে তারা পশু নিয়ে এলেও এখন
পর্যন্ত কেনাবেচা জমেনি। তারা জানান, আজ শুক্রবার থেকে কেনাবেচা পুরোদমে
শুরু হবে বলে তাদের আশা।
কমলাপুর হাটের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। এখানে এখনো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পশু
আসেনি। তবে এখনো সময় আছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের কযেকজন
অভিযোগ করেছেন, রাজধানীর ভেতরের হাটগুলোতে পশুবাহী গাড়ি ঢুকতে পুলিশ বাধা
দিচ্ছে।
এ দিকে রাজধানীতে ১৯টি হাটের ইজারা প্রদান করা হলেও কিছু এলাকায় অবৈধ হাট
বসেছে বলে জানা যায়। স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা এসব হাট বসাচ্ছেন বলে
অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় রাস্তার ওপরও হাট বসেছে। এতে ওইসব এলাকায়
তীব্র যানজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে
This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন