ওয়াটলিং সেঞ্চুরি করে তার আনন্দ এভাবেই প্রকাশ
করলেন। কারণ তারই কারণে বাংলাদেশ শিবিরে এখনো হতাশার কালো মেঘ। (ডানে)
মমিনুল করলেন হাফ সেঞ্চুরি। পাশে দাঁড়িয়ে মার্শাল আইয়ুব : এএফপি
বিশ্ব রেকর্ড হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।
স্বীকৃত ব্যাটসম্যানের মতোই বাজে বলের জন্য অপেক্ষা। মারার বলটা কখনো
উড়িয়ে, কখনো গ্রাউন্ড শটে বাউন্ডারি পার করছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট ও ওয়াটলিং।
১২৭ তো করেই ফেলেছিলেন। ১৬৩ শেষ উইকেট জুটিতে রান তোলার বিশ্বরেকর্ড। খুব
তো দূরে ছিল না। যেভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন বা অল আউট করা গেছে, সেটাও থার্ড
আম্পায়ার অনেকক্ষণ নিরীক্ষণ করেই। তার অর্থ দলীয় স্কোর ৩৯২ থেকে নিয়ে যান
তারা ৪৬৯-এ। আগের দিন পিটার ফুলটন জানিয়েছিলেন ৪০০ করে চাপ তৈরি করতে চাই
প্রতিপক্ষের ওপর। সেখানে রান হলো প্রায় পৌনে ৫০০। বাংলাদেশ একটু নয়, বেশ
ভালোই চাপে পড়েছে চট্টগ্রাম টেস্টে।
আসলে বিস্ময় জাগছিল বাংলাদেশ দলের বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে খেলোয়াড়দের বডি
ল্যাংগুয়েজ দেখে। আউট করতে হবে দ্রুত, সে মানসিকতা ক্রমেই কমে গিয়ে কী
করবেন তারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। টেস্ট ক্রিকেটের একটা মেজাজ রয়েছে প্রতিটা
মুহূর্তেই ম্যাচটা হাতে রাখার। সে জন্য থাকে চেষ্টা সাধনা। গতকাল সকালে
কিছুক্ষণ ভালো বোলিং করে কয়েকটি উইকেট নিয়ে কিছুক্ষণ পর যেন আর খুঁজে পাওয়া
যাচ্ছিল না বাংলাদেশকে। যখন ওই দুই ব্যাটসম্যান খেলছিলেন একেবারে
দুর্দান্ত ক্রিকেট। কেন এমনটাÑ এর কোনো উত্তর নেই। হতে পারে দীর্ঘ দিন পর
পর টেস্ট খেলতে নামছেন, সে জন্যই। মুশফিক এক এক করে তার সব অস্ত্র ব্যবহার
করেছেন। কাজ হয়নি। উপায় না দেখে আট নম্বর বোলারের খোঁজে নেমে মমিনুলের
হাতে দেন বল। শেষ পর্যন্ত সেই মমিনুলই স্ট্যাম্পিং করে সেঞ্চুরি হাঁকানো
ওয়াটলিংকে আউট করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট
বোল্ট শেষ পর্যন্ত থাকলেন অপরাজিতই, থাকলেন ক্যারিয়ার সেরা ৫২ করে।
ম্যাচে এ পরিস্থিতির অবতারণা হতো না যদি ব্যক্তিগত ৪ রানের সেই আউটটা হয়ে
যেত ওয়াটলিং। চলেও গিয়েছিলেন তিনি বাউন্ডারি লাইনের কাছাকাছি। নো-বল হয়েছিল
কি না, থার্ড আম্পায়ারের সিগনাল পেলে আবার ফেরেন ক্রিজে। এরপর তো সেঞ্চুরি
হাঁকিয়েই ছাড়লেন নিউজিল্যান্ডের এ ব্যাটসম্যান। তবে ওয়াটলিংয়ের এ
সেঞ্চুরির ক্রেডিট মূলত পাওয়ার কথা বোল্টেরই। শেষ ব্যাটসম্যান হয়েও ১৪৭
মিনিট ক্রিজে থেকে আবার হাফ সেঞ্চুরিও করা। সত্যিই। অবশ্য এর কারণটা আব্দুর
রাজ্জাকই ভালো বলেছেন। ‘উপমহাদেশের শেষের দিকের ব্যাটসম্যান ও ওদের শেষের
দিকের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অনেক পার্থক্য। তারা খুবই ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাটিং
করেন।’ তা ছাড়া মাঠে ওই দুই ব্যাটসম্যানকে আউট না করতে পারার কারণও তিনি
জানিয়েছেন। ‘তারা আসলে সেভাবে ট্রাই করেনি। খেলছিলেন দেখেশুনে। মারার বল
পেলেই মেরেছেন। তা ছাড়া উইকেট থেকেও সে রকম সাপোর্ট পাওয়া যাচ্ছিল না।’
প্রশ্ন ছিল শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের আউট করতে আবার উইকেটের সাপোর্টের
প্রয়োজন হয় কিনা। রাজ্জাক বলেন, ‘তারা আসলে খুবই ভালো ব্যাটিং করে। তা ছাড়া
ওয়াটলিংয়ের ক্যারিয়ারটাও বেশ ভালো। দেখেছি ফার্স্টকাস ক্রিকেটেও তার ভালো
স্কোর রয়েছে।’ তবে বোল্ট তার ক্যারিয়ারের সব ধরনের ক্রিকেটেরই সর্বোচ্চ
রান করেছেন কাল বাংলাদেশের বিপক্ষে। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার
আব্দুর রাজ্জাক গতকালও হতাশা প্রকাশ করেছেন উইকেট নিয়ে। ‘আসলে প্রত্যাশা
অনুসারে উইকেট আমরা পাইনি। ব্যাটসম্যানদের জন্য দারুণ উইকেট। এখানে একবার
সেট হলে তাকে আউট করা কঠিন। নিউজিল্যান্ডের শেষ উইকেট জুটির ব্যাপারে কথা
বলতে গিয়েই ওই কথা জানান দেন তিনি। তাই বলে ১২৭ রানের পার্টনারশিপ খেলে
ফেলবে? প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রায়ই দেখা যায়, শেষের দিকে ২-১
উইকেটে রান তোলে ম্যাচের সব চিত্র পাল্টে দেয়। রাজ্জাক বলেন, ‘আসলে এটা
হতেই পারে। খুলনায় আমাদের রাজু ও (আবুল হোসেন, পেস বোলার তথা লোয়ার অর্ডার)
তো সেঞ্চুরি পেয়ে গিয়েছিল। সুযোগ পেলে কেউই ছাড়তে চায় না। তারা করেছেন।’
নিউজিল্যান্ডের লোয়ার অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান ১২৭ রানের জুটি খেলে দলের
স্কোরটা বিশাল করে ফেললেও আমাদের ওপেনিং জুটি একেবারেই ব্যর্থ। তামিম ০,
এনামুল বিজয় ৩। রাজ্জাক বলেন, যখন একটি দল ১৪০-১৫০ ওভার ব্যাটিং করে ফেলে
তখন ওই দীর্ঘক্ষণ ফিল্ডিং করে কান্ত থাকেন ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে নামা
ব্যাটসম্যানরা। তামিম ও বিজয়ের বেলায়ও এমনটাই হয়েছে।’ ম্যাচে বাংলাদেশ কোন
অবস্থানে সেটা জানাতে গিয়ে বলেন, অবশ্যই ভালো একটা ব্যাটিং করতে হবে
আগামীকাল (আজ)।’ উইকেটের যে ধরন এবং মমিনুল যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন
মার্শালকে নিয়ে তাতে অসম্ভব কিছু নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম
সেরা স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক।
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড
টস : নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : (৮৯.৫ ওভার, আগের দিনের ২৮০/৫, ফুলটন ৭৩,
উইলিয়ামসন ১১৪)
রান বল ৪ ৬
মার্টিন ক মুশফিক ব রুবেল ১ ৯ ০ ০
এন্ডারসন ক নাসির ব রাজ্জাক ১ ৫ ০ ০
ওয়াটলিং স্ট্যা. মুশফিক ব মমিনুল ১০৩ ১৮২ ৬ ২ ব্রেসওয়েল ব সোহাগ ২৯ ৭২ ৩ ১
সোধি এলবিডব্লিউ ব সাকিব ১ ৫ ০ ০
বোল্ট অপ: ৫২ ১৩৭ ৪ ৩
অতি: (বা-৪, লেবা-৬, নো-২) ১২
মোট : ৫ উইকেটে (১৫৭.১ ওভার) ৪৬৯
উইকেট পতন : ১/৫৭, ২/১৮৩, ৩/২৪৪, ৪/২৭৬, ৫/২৮০, ৬/২৮২, ৭/২৮২, ৮/৩৩৯,
৯/৩৪২, ১০/৪৬৯।
বোলিং : রবিউল ১৩-৩-২৩-০, রুবেল ২০-২-৭৭-১, রাজ্জাক ৫৫-১০-১৪৭-৩, সোহাগ
৩২-৬-৭৯-২, সাকিব ২৪-৫-৮৯-২, মার্শাল আইয়ুব ২-০-১৫-০, নাসির ৫-১-১৯-১,
মমিনুল ৬.১-০-১০-১।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস
তামিম ক উইলিয়ামসন ব বোল্ট ০ ১ ০ ০
এনামুল এলবিডব্লিউ ব ব্রেকওয়েল ৩ ১১ ০ ০
মার্শাল আইয়ুব ব্যাটিং ২১ ৭৪ ১ ০
মমিনুল ব্যাটিং ৭৭ ৭১ ১৩ ০
অতি: (ও-১, নো-১) ২
মোট (২৬ ওভার ২ উই:) ১০৩
উইকেট পতন : ১/১, ২/৮।
বোলিং : বোল্ট ৩-২-৫-১, ব্রেসওয়েল ৪-০-২৫-১, মার্টিন ৩-০-২০-০, সোধি
৮-০-২৭-০, এন্ডারসন ৩-২-৮-০, উইলিয়ামসন ৫-১-১৮-০।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন