এখন দেখতে পাচ্ছি এটা নিয়েও রাজনীতি করছেন আপনারা। সরকারি তরফের ভাষ্য, এটা বিরোধীদের কাজ। বিরোধীরা বলছে, এটা ক্ষমতাসীনদের কাজ। বিরোধীরা প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় (বগুড়া, বরিশাল, নেত্রকোনা, কক্সবাজার আওয়ামী লীগের কর্মীদের অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ দেখিয়েছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, কে বা কারা হামলা করল তা সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব সরকারের। অন্তত ব্যর্থতার এ দায় তারা এড়াতে পারবে না কোনোমতেই। অথচ সরকার লোক দেখানো কিছু অভিযান চালিয়েছে। এতে জনমনে প্রশ্ন জাগে, এটা কি সরকারের ইচ্ছে করেই ব্যর্থ হওয়া? কারণ এই হামলার সুফল কিন্তু যাচ্ছে সরকারের পকেটেই। সরকারি দলের লোকজনের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তায় সন্দেহ আরো বাড়ছে জনমনে। দেশের এহেন জঘন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি কিন্তু বহু আগে থেকেই দেখে আসছি আমরা। নিজ দলের নেতাকর্মীকে মেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর সংস্কার আজকের নয়।
ফেসবুকে একজন লিখেছেন তরমুজ চাকুর ওপর পড়ুক কিংবা চাকু তরমুজের ওপর, কাটবে তরমুজই। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকুক, কিংবা বিএনপি-জামাত, ঘর পুড়ে হিন্দুরই। কেন এমন হবে এই হিন্দুরাই কেন বারবার বিভিন্ন দলের ক্ষমতায় যাবার সিড়ি হবে আবার তারাই হামলার লক্ষ্য হবে। আওয়ামী লীগ তাদের অঘোষিত অভিভাবকের দাবিদার। তারাই নাকি ওই সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ঠিকাদার। সেই আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। তারপরও কেন হিন্দুরা আজ হামলার শিকার স্থানীয় প্রশাসন কি জানতো না যে, নির্বাচনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন হামলার মুখে পড়বেন? নাকি হিন্দুদের ওপর হামলার সুযোগ দিয়ে সেই ফায়দা তোলার অপচেষ্টা এটা
নির্বাচনের আগ থেকেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে আনন্দবাজারসহ একাধিক দৈনিকে প্রকাশ হয়েছে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন হবে! যদি এই তথ্য তাদের কাছে থাকে তাহলে আমাদের গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না কেন? তারা কি বসে বসে ভারতীয় ঘোড়ার ঘাস কাটল? সরকারের কাছে এই তথ্য ছিল না-এমটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
শোনেন হে সরকার বাহাদুর।
৩ মাসের জন্য অনির্বাচিত ব্যক্তিদের অধীনে নির্বাচনে আসতে অনীহা ছিল আপনাদের। অথচ ১৫৩ জন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে ৫ বছর সরকারে রাখতে লজ্জা করবে না? কেন এই দ্বৈত-নীতি? ৫ জানুয়ারি দলীয় সরকারের অধীনে এক তরফা নির্বাচনেই যে ভোট জালিয়াতির নজির স্থাপন করেছেন, তাতে করে বিরোধী দলগুলো না এসে কি কোন ভুল করেছে? অবশ্যই কোনো ভুল করেনি তারা।
আপনাদের ব্যর্থতার ৫৯টির মতো ইস্যু ছিল, যেগুলোর যে কোনো একটির কারণেও সরকারের পতন হতে পারতো। নীতিহীন বিএনপি তাদের পাহাড়সমান দুর্নীতির কারণে কোনঠাসা। জনগণ তাই তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে তাদের আন্দোলন আতুড়ঘরেই মারা পড়েছে। তারা এখন আত্মগোপনে গিয়ে ভিডিওবার্তা দিয়ে কর্মসূচীর ডাক দেয়। গণতন্ত্রে বিরোধীদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ। সেই বিরোধীদলকে হাতপা বেধে রেখেছেন আপনারা। এতেও আপত্তি নেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ এই দুপক্ষের মাঝে পড়ে জান-মাল হারাবে কেন? সরকারের কঠোরতা আর বিরোধী দলের বিধ্বংসী কর্মসূচীর কারণে সর্বসাধারণের জীবন আজ যায় যায়। গণ-ই যদি না থাকে কোথায় গণতন্ত্র?
শোনেন হে সরকার বাহাদুর।
জনগণের শক্তি আপনারা বারবার পরখ করেন, কিন্তু ভুলে যান। জনগণ আবার তৈরি হয়েছিল, ভোটে জবাব দিতে। পারেনি। কিন্তু নিরবতার শক্তি কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে তারা। ভোটশূণ্য কেন্দ্র কিন্তু ভোটারে ঠাসা কেন্দ্রের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। পাঁচ ট্রাক বালি দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করতে চান, বালি কি তা পারে, নাকি পেরেছে কোনোদিন? গোটা বাংলাদেশের এটেল মাটি দিয়েও কিন্তু ক্ষমতা ঠেকানোর বাধ দিতে পারবেন না।
আপনারা বলবেন, ''হামলার বেশিরভাগই চালাচ্ছে বিরোধী জোটের কর্মী-সমর্থকরা।'' ঠিক আছে, অপরাধীদের ধরুন। আওয়ামী লীগও কিন্তু বসে নেই। তারাও সমানে সঙ্গোপনে চালাচ্ছে হামলা-লক্ষ্য সেই হিন্দু সম্প্রদায়। লাভের লাভ, ধরা না পড়লে বলে দেয়া যাচ্ছে এটা বিরোধীদের কাজ। (বিরোধীদের ওপর দোষ চাপাতে নিজের স্কুলে নিজেই আগুন দিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী বগুড়ার প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান। সূত্র : কালেরকণ্ঠ)| পেট্রোল বোমা হাতে ধরা পড়া ছাত্রলীগ কর্মীদের কথা কিন্তু ভুলিনি কিন্তু। নিজের দলের লোককে মেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দেয়া পুরানা কৌশল; জানি আমরা। বিএনপি করেছে, পূতপবিত্র আওয়ামীরাও করেছে, করছে। অতীতে ভুড়িভুড়ি নজীর দেখেছি। এখনও দেখছি। সুতরাং আম-কাঁঠাল মনে করবেন না আমাদের।
জনগণকে নিয়ে খেলার এসব দায় আপনারা এড়াতে পারেন না। কোনমতেই না। সাইলেন্ট পিপল মুখ খুলতে শুরু করলে আপনারা মুখ লুকানোর জায়গা পাবেন না। মাইন্ড ইট।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন