ইউরেনিয়াম ত্যাগের পশ্চিমা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।

ইউরেনিয়াম ত্যাগের পশ্চিমা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। এ ধরনের ইউরেনিয়ামের কোনো অংশই দেশের বাইরে নেয়ার অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য ইউবেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকারে সামান্যতম ছাড় দেবে না তার দেশ।ইরানের বিতর্কিত পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী পশ্চিমা প্রতিনিধিরা ইরানের ইউরেনিয়াম উত্পাদন ও এর নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরির উপযোগী ২০ শতাংশ সমৃদ্ধকরণ বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেছিল, ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুতের একটি অংশ বিদেশে পাঠিয়ে দিক।মজুতের একটি অংশ বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার দাবিটি পশ্চিমাদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।কিন্তু রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ওই পদার্থ বিদেশে পাঠানো আমাদের সীমার বাইরের বিষয়।’ তিনি বলেন, জেনেভায় ছয় জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে আসন্ন আলোচনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা এবং ইরানি জনগণের পরমাণু অধিকার রক্ষা করার বিষয়টি তেহরানের ‘লাল সীমারেখা’ (রেড লাইন) হিসেবে বিবেচিত হবে। আন্তর্জাতিক সনদের মাধ্যমে ইরানি জনগণকে যেসব অধিকার দেয়া হয়েছে—তা থেকে আমরা ‘এক বিন্দু পরিমাণও পিছু হটবো না’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির জন্য ইরানের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এতদিন ধরে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়টিও লাল সীমারেখা হিসেবে গণ্য হবে এবং ইরানের এক গ্রাম ইউরেনিয়ামও দেশের বাইরে পাঠানো হবে না।তবে ইরান আসন্ন আলোচনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পরিমাণ ও মাত্রা নিয়ে আলোচনা করবে উল্লেখ করেন তিনি। আরাকচি বলেন, উইন-উইন বা দু’পক্ষের স্বার্থ রক্ষা হয়—এমন একটি আলোচনার জন্য পরিমাণ ও মাত্রার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেহরান। রুহানি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই হবে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর প্রথম বৈঠক।ইরানের পরমাণু ইস্যু নিয়ে আজ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ইরানি প্রতিনিধিদের বৈঠকের কথা রয়েছে। এর ঠিক আগে পশ্চিমাদের প্রধান একটি দাবি ইরান প্রত্যাখ্যান করল।ইরানের সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফর্দো পরমাণু প্রকল্পও বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো।কিন্তু ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে আরাকচি বলেছেন, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত বাদ দেয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।তিনি বলেন, ‘কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ বা এ বিষয়ে আত্মসমর্পণ করব না। এমনকি এক গ্রাম ইউরেনিয়ামও আমরা দেশের বাইরে যেতে অনুমতি দেব না।’এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের কূটনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে জেনেভা বৈঠকের আগ মুহূর্তে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করলেন।
আজ ও আগামীকাল ইরান এবং ছয় জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
আমেরিকান-ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি বা আইপ্যাক-এর সম্মেলনে কেরি বলেছেন, ‘এ মুহূর্ত থেকে কূটনীতির জানালা খুলে যাচ্ছে। তবে আমরা যেহেতু শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইছি, সে কারণে ইরানকে কথার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কাজ করতে হবে।’একইসঙ্গে জন কেরি বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যে কোনো ধরনের সমঝোতায় যাওয়ার আগে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করা হবে। কেরি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি খারাপ চুক্তির চেয়ে কোনো চুক্তি না করাই ভালো।’ এর আগে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি গতকাল বলেছেন, পরমাণু ইস্যুতে পশ্চিমা সব উদ্বেগের নিরসন করা হবে জেনেভা বৈঠকে। এ বৈঠকে ইরান বাস্তবভিত্তিক ও উদ্দেশ্যপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে চায়।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment