উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা আনন্দ উৎসবে সারাদেশ

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে বুধবার সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা।ত্যাগের আনন্দ উৎসবে সারাদেশ

 
মুসলমানদের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসব মঙ্গলবার দেশের শতাধিক গ্রামে উদযাপিত হয়েছে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে।
 প্রতিবারের মতো এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে।রাজধানীতে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঈদগাহে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ লক্ষাধিক মুসুল্লি সেখানে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।নামাজ শেষে দেশের অব্যাহত শান্তি ও উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজের পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুসল্লীদের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় করেন।পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ নিয়ে মনে যে পশু বাস করে, তাকে পরাভূত করতে আসে পবিত্র ঈদুল আজহা। তার প্রতীক হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভে ত্যাগের মন নিয়ে বহু ব্যয়ে কেনা পশু বুধবার কোরবানি করেছেন সামর্থ্যবানরা।
 পবিত্র কোরআনুল কারিমের বর্ণনানুযায়ী, চার হাজার বছর আগে আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) পৃথিবীতে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হিসেবে নিজ সন্তান হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দিতে প্রস্তুত হোন।কিন্তু আল্লাহতায়ালার কুদরতে হজরত ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর মুসলমানরা কোরবানি দেন।প্রতিবছর পবিত্র জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। তবে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, পবিত্র এই মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো দিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। সে হিসেবে ১৭ ও ১৮ অক্টোবরও কোরবানি করা যাবে।ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারাদেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কলেমা খঁচিত পতাকা উত্তোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়।ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও তাঁর সহধর্মিনী রাশিদা খানম, সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও কূটনীতিকদের জন্য সম্বর্ধনার আয়োজন করেন।
 স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খোন্দকার, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী এম ফারুক খান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীগণ সম্বর্ধনায় যোগ দেন।এ ছাড়া সম্বর্ধনায় যোগ দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ, সংসদ সদস্যগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সম্পাদক, সচিব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষাবিদ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিবর্গ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ।বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রধানগণও সম্বর্ধনায় অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অতিথিদের স্বাগত জানান, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং তাদের সমৃদ্ধ জীবন কামনা করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের নেতা-কর্মী ও সর্বস্তরের জনগণের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং দরিদ্রসহ সর্বস্তরের জনগণ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।পরে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তিন বাহিনী প্রধান এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী, মিষ্টান্ন, সেমাই, ফলমূল ও কেক দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করেন।
 বিএনপি চেয়ারপারসনন ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিশিষ্ট নাগরিক এবং সর্বস্তরের জনগণের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।ঈদুল আজহা উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো ঈদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। রেডিও-টেলিভিশনে আয়োজন রয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে ছয় দিনের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে।ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে সরকারি উদ্যোগে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোতে।ঈদের খুশি থেকে বাদ যায়নি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগী, শিশু সদনের অনাথ শিশু, কারাবন্দি কয়েদিরাও। হাসপাতাল, শিশু সদন, আশ্রয়কেন্দ্র ও কারাগারে বিশেষ খাবারের আয়োজন ছিল ঈদের দিনে। এদিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পেয়েছে বিনা টিকিটে জাদুঘর, চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment