চোখের জলে বিদায় দেওয়া হল দেবী দুর্গাকে


চোখের জলে বিদায় দেওয়া হল দেবী দুর্গাকে। গতকাল ভক্ত ও অনুরাগীদের কাঁদিয়ে দেবী ফিরে গেলেন কৈলাসে স্বামীর ঘরে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব দুর্গাপূজার বিজয়া শুভযাত্রা পলাশী মোড় থেকে গতকাল শুরু হয় বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। সোমবারই ছিল বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিন। সারা দেশের মতো রাজধানীতেও এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হল দুর্গোত্সব।বিজয়া শোভাযাত্রা শহীদ মিনার, হাইকোর্ট মাজার, ইংলিশ রোড, জনসন রোড দিয়ে ওয়াইজ ঘাটে গিয়ে শেষ হয়। প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে মা দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যান বলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটল।রাজধানীর অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হয় সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে। এর আগে শোভাযাত্রাসহ প্রতিমা নিয়ে পলাশীর মোড়ে জড়ো হন ভক্তরা। প্রতিমা বিসর্জনের পালা শুরু হয় বিকাল থেকেই। এর আগেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা জড়ো হতে থাকে পলাশীর মোড়ে। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনি বাদ্যের সঙ্গে আধুনিক উচ্চ স্বরের সাউন্ড সিস্টেমে দেবী বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে কয়েক হাজার মানুষের এ শোভাযাত্রা বের হয়। এ সময় বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট। পলাশী থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গা তীরে শেষ হয় শোভাযাত্রা।বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয় রথখোলা রোডের আদি মরণচাঁদ মণ্ডপের প্রতিমা। এরপর ভাসানো হয় পাতলা খান লেনের সবুজ স্বপন সংঘ মণ্ডপের প্রতিমা।ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বসুদেব ধর জানান, রাজধানীর ২১৪টি মণ্ডপের দেবী প্রতিমা বীণাস্মৃতি স্নানঘাট, তুরাগ নদের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট ও পোস্তগোলায় বিসর্জন দেওয়া হয়।প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন ভক্তকুল। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের এ পর্ব রাত পর্যন্ত চলে।এদিকে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয় সোমবার বেলা আড়াইটা থেকে। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, আর পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ভিড় করেন লাখো ভক্ত-অনুরাগী। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম ও শ্রেণী-বর্ণের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় পুরো এলাকা।এর আগে বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বিজয়া শোভাযাত্রা নিয়ে পূজারী ও ভক্তরা জড়ো হতে শুরু করেন পতেঙ্গা সৈকতে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও কর্ণফুলী নদীর ঘাটে গিয়ে এই শোভাযাত্রা শেষ হয়। এরপর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের পালা।শঙ্খ উলুধ্বনির পাশাপাশি বাদ্যের ঘণ্টা বাজিয়ে ‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ বলে একের পর এক প্রতিমা ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগরে। বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে প্রতিমা বিসর্জন।এদিকে বিকাল ৩টার দিকে চসিক মেয়র এম মন্জুর আলম প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তিনি সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান।পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ছাড়াও আনোয়ার পার্কি সমুদ্রসৈকত, দক্ষিণ কাট্টলীর রানি রাসমনি বারুণী স্নানঘাট, কর্ণফুলী নদীর পাথরঘাটায় গঙ্গাবাড়ি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment