শারদীয় দুর্গা পূজা শুরু আজ দেবীর বোধন



আনোয়ার আলদীন
দেশে বৈদিক ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধানতম ধর্মীয় উত্সব শারদীয় দুর্গাপূজা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর ষষ্ঠী তিথির সূচনা হয়েছে। সেই অনুযায়ী আজ দুর্গোত্সবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে মন্দিরে মন্দিরে আর পূজামণ্ডপে। ঘরে ঘরে শুরু হবে অতিথি আপ্যায়ন। উত্সব-আনন্দে মেতে উঠবে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী। বাহারী পোশাকে আর অঙ্গসজ্জায় নিজেদের সাজিয়ে রাঙ্গিয়ে তারা মন্দিরে-মণ্ডপে ভীড় করবে স্বজন আর বন্ধুজনের ঘরে ঘরে যাবে। দেবী দুর্গার নামে পরস্পরের কল্যাণ কামনা করবে। মা দুর্গার আশীর্বাদ চাইবে পরস্পরের সু-স্বাস্থ্য আর দীর্ঘায়ু কামনায়।গত সোমবার এবং পরদিন মঙ্গলবারও প্রকৃতিতে বর্ষার আবহ থাকলেও গতকাল বুধবার তাতে শারদীয় পরিবেশ ফিরে এসেছে। আকাশে আবার দেখা দিয়েছে শরতের মেঘের লুকোচুরি খেলা। মনে হয় আজ দুর্গোত্সবের মূল আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে প্রকৃতি তার শারদীয় সহযোগিতা অক্ষুণ্নভাবে বজায় রাখবে। সবার জন্য অনুকূল পরিবেশে চলবে শারদীয় উত্সব।বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে আজ পূর্বাহ ৯-৫৭ মধ্যে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ , সায়ংকালে দেবীর বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাস। গতকাল সন্ধ্যা ৭-১০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের পর ষষ্ঠী তিথির সূচনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮-২৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড অব্দি তিথি থাকবে। অতঃপর শুরু হবে মহাসপ্তমী তিথি। কাল মহাসপ্তমীর প্রভাতে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহিত পূজা। ১২ অক্টোবর মহা অষ্টমীর দিন সকালে কুমারীপূজা ও রাতে সন্ধিপূজা। ১৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী। আসছে বছর আবার এসো-এ ভারাক্রান্ত মিনতি রেখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোত্সব। সাধারণত আশ্বিন শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাত্ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাত্ দশমী অবধি পাঁচ দিন দুর্গোত্সব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বাত্সরিক লক্ষ্মীপূজার দিন। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উত্সবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি। পশ্চিমবঙ্গের কোনও কোনও পরিবারে অবশ্য পনের দিন দুর্গোত্সব পালনের প্রথা আছে। এ বছর সারা দেশে ২৮ হাজারেরও বেশি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীতে এবার ২১৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানায় সবচেয়ে বেশি ৩৫টি মণ্ডপে পূজা হবে। গত বছর থেকে ১০টি মন্ডপ বেড়েছে এবার। শারদ উত্সব উদযাপনের সব প্রস্তুতি শেষ। কেনাকাটার ধুম শেষ হয়নি। পূজা উপলক্ষে ১৪ অক্টোবর সরকারি ছুটি। দুর্গোত্সব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পৃথক বিবৃতিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন: আবহমান কাল ধরে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায় বিপুল উত্সাহ-উদ্দীপনা ও উত্সবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা পালন করে আসছে। দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমি আশা করি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় উন্নয়নে সবাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অবদান রাখবেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন: বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আমার প্রত্যাশা, বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব। শারদীয় দুর্গোত্সব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সকল নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment