মহাপরিকল্পনার কথা জানালেন আরিফ



সিলেটের অবৈধ হয়ে যাওয়া ৯টি ছড়া উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে চান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি স্বচ্ছ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ এনে ঢাকার হাতিরঝিলের মতো সিলেট নগরীকে সাজাতে চান। গতকাল সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন। তিনি বলেন, জঞ্জালযুক্ত সিলেট মহানগরীকে জঞ্জালমুক্ত করতে গিয়ে তিনি অনেকেরই রোষানলে পড়ার আশঙ্কা করছেন। ইতিমধ্যে তার এই আশঙ্কা আরও দৃঢ় হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, বেশ কিছুদিন ধরে তার বাসায় ও অফিসে রাতের আঁধারে ৬-৭টি মোটরসাইকেল দিয়ে মহড়া দেয়া হচ্ছে। অপরিচিত যুবকরা এসব মহড়া দিচ্ছে। এ কারণে তিনি রাতে তার বাসার কার্যালয়ে বসাই ছেড়ে দিয়েছেন। গতকাল সকালে তার কার্যালয়ে বিদেশী চাকু পাওয়া গেছে। কে বা কারা এই চাকু ফেলে যায়। পুলিশ সেটি উদ্ধার করে তদন্ত চালাচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচিত মেয়র হয়ে মাত্র একজন বডিগার্ড নিয়ে তাকে চলতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে তার জীবনও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। বিকাল চারটায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। এর মধ্যে শুরুতেই তিনি বলেন, গত নির্বাচনে তিনি নগরবাসীকে বেশ কিছু ওয়াদা দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। মানুষ কাজ করার জন্য তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এ কারণে তিনি চোখ-কান বন্ধ রেখে কাজ করে চলেছেন। তার লক্ষ্য হচ্ছে, যানজট, জলাবদ্ধতামুক্ত নিরাপদ ও আধ্যাত্মিক শহর গড়ে তোলা। আর এভাবে শহরকে গড়ে তুলতে হলে দ্রুত বেগে কাজ করতে হবে। হকার উচ্ছেদ নয় পুনর্বাসন দায়িত্ব পাওয়ার এক মাসের মধ্যে সিলেট নগরীকে অনেকটা হকারমুক্ত করেছেন নতুন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের কাছে প্রথমে এ কথাটিই উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে হকারদের ফুটপাথ থেকে সরানো হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা এটি নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। আমি নিজেই তাদের বাসায় গিয়েছি। অনুরোধ করেছি সরে যেতে। তারা রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকায় হকারদের সরানো সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদ নয় হকার পুনর্বাসন। এ কারণে হকারদের সিলেট সিটি করপোরেশনের খালি পড়ে থাকা নগর মার্কেটের তিনটি ব্লক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা এগুলোতে বসে স্থায়ী ব্যবসা করবেন। আর এই মার্কেটের ব্যবসা যাতে স্বাভাবিক ভাবে হয় সে জন্য কয়েকটি রাস্তা খোলার কথা বলেন মেয়র। ঈদের আগে হকারদের জন্য কিছুটা ছাড়ঈদের আগে সিলেটের হতদরিদ্র হকারদের জন্য কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে বলেও জানান মেয়র। তিনি বলেন, হকারদেরও পরিবার রয়েছে। এই মানবিকতা বিবেচনা করে হকারদের জন্য এক সপ্তাহের জন্য জালালাবাদ পার্ক ও সিলেট রেজিস্ট্রারি ময়দানে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে ১৬ই অক্টোবরের পর তারা আবার বসতে পারবেন না। তখন তাদের নির্ধারিত স্থানে যেতে হবে। মেয়র বলেন, হকারদের নিয়ে বাস্তবমুখী চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। পরে মার্কেট দেয়ার সময় হকারদের ছবি দেখে দেখে তাদের কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে মেয়র অভিযোগ করেন, বেশি হলে অর্ধশতাধিক পরিবার এই হকার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের পরিকল্পনার মধ্য নিয়ে এলে খুব দ্রুত স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি। ফুটপাথে বসানো হচ্ছে গ্রিলসিলেটের ফুটপাথের দখলমুক্ত করে সেখানে গ্রিল লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ফুটপাথে গ্রিল বসিয়ে দেয়ার কারণে হাঁটার ব্যবস্থা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে গোটা শহরের ফুটপাথে গ্রিল লাগানো হবে। একই সঙ্গে মেয়র আরিফ সিলেটের ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করে বলেন, ব্যবসা করবেন দোকানের ভেতর। রাস্তায় নয়। যারা দোকানের বাইরে মালামাল রাখবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের এব্যাপারে নোটিশ জারি করা হয়েছে। তাদের সময় দেয়া হয়েছে। তবে ঈদের পর এব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে।ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড সরানোর নির্দেশরাজনৈতিক দলের ব্যানার-ফেস্টুনের কারণে সিলেট শহর জঞ্জালে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ জন্য তিনি সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে অনুরোধ করেন সিলেট নগরী থেকে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে ফেলতে। নতুবা ঈদের পর সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সিলেট নগরীতে অবৈধভাবে কোন ব্যানার-ফেস্টুন থাকবে না। তবে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সুবিধার জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর কিছু কিছু এলাকায় বিলবোর্ড বসানো হবে। এসব বিলবোর্ডে অস্থায়ীভাবে ভাবে রাজনৈতিক দলের ব্যানার ও ফেস্টুন বসানো হবে বলে জানান মেয়র। একই সঙ্গে নগরীতে ইচ্ছা মতো তোরণ নির্মাণ না করতেও নির্দেশ দেন মেয়র। বলেন, রাস্তা খুঁড়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়। পরে খোঁড়া অংশে পানি জমে রাস্তা ভেঙে যায়। তিনি বলেন, রাস্তা খুঁড়ে তোরণ নির্মাণ কোনভাবে সহ্য করা হবে না। সওজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকসিলেটের সিটি করপোরেশন ও সওজের বেশ কিছু সড়ক রয়েছে। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সওজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র নিজে। আর মতবিনিময় সভায় তিনি বৈঠকের ফলাফল তুলে ধরে জানান, সিটির ভেতরে সকল রাস্তা করপোরেশনের হাতে ছেড়ে দেয়ার আবদার তিনি সওজের কাছে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে হাইওয়ের সকল লিংকরোড তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, নগরীর কিন ব্রিজের নিচের অংশ সওজের রাস্তা। ওই সড়কটি সওজ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করবে। আর রাস্তা হস্তান্তরের কাগজপত্র করপোরেশনে এলেই কীন ব্রিজের নিচের সকল জঞ্জালমুক্ত করার কাজ শুরু হবে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, সওজ কর্মকর্তারা এরই মধ্যে চালিবন্দর ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। খেলার জন্য পশুর হাটবসানো হবে না
ঈদের সময়ই সিলেট সফরে আসবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। এ কারণে ইতিমধ্যে বিসিবি, ক্রীড়া ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খেলোয়াড়দের চলাচলের সুবিধার্থে এবার নগরীতে সিটি করপোরেশন থেকে কোন হাট বসানো হবে না বলে জানিয়েছেন মেয়র। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে হাট না বসাতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কেউ হাট বসায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন মেয়র। তিনি বলেন, খেলোয়াড়রা সিলেট সার্কিট হাউস, রোজভিউ হোটেল সহ বেশ কয়েকটি হোটেলে যাতায়াত করবেন। এ কারণেই এবার কোন পশুর হাটের অনুমতি দেয়নি। তবে, জেলা প্রশাসন শহরের বাইরে পশুর হাট বসালে সিটি করপোরেশন আপত্তি করবে না। ছড়া উদ্ধারে সেনাবাহিনী, টাকা দেবে বিশ্বব্যাংকসিলেটে দখল হয়ে যাওয়া ৯টি ছড়া উদ্ধারে সেনাবাহিনী চাইবে সিলেট সিটি করপোরেশন। এ বিষয়টি তিনি ইতিমধ্যে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে প্রকল্প স্বচ্ছ হলে তারা টাকা দেবেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রোববারের বর্ষণে সিলেট নগরী পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন স্বল্প মেয়াদি কাজ চলছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক এনে আপাতত গোয়ালী ছড়াকে উদ্ধার করতে কাজ শুরু করা হয়েছে। গতকালও তিনি নিজে কয়েকটি বাড়ির দেয়াল ও ল্যাট্রিন ভেঙে দিয়েছেন। এতে করে নাগরিকরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হলেও নগরবাসীর স্বার্থ বিবেচনা করে এই কাজ করতে হচ্ছে বলে মেয়র আরিফ উল্লেখ করেন। এতে অনেকেই নাখোশ হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে বলে আশংকা করেন মেয়র। পানির অবৈধ লাইন বেশিসিলেট নগরীতে পানির অবৈধ সংযোগ বেশি বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র। তিনি বলেন, অবৈধ সংযোগের মালিকদের সুযোগ দেয়া হয়েছে সংযোগ বৈধ করতে। তারা যদি নিজেরা বৈধ সংযোগ করে নেয় কোন অ্যাকশন হবে না। আর যদি না করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মেয়র। এ সময় তিনি বলেন, অনেকেই অনুমতি ছাড়া ডিপ টিউবওয়েল বসিয়েছেন। অবৈধ মোটরও বসিয়েছেন। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সিলেটে অর্থমন্ত্রীর একটি পানির প্রকল্প চলমান। এই প্রকল্পের কাজ ডিসেম্বরে শেষ হবে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের শুরু থেকে নগরীর ৮০ ভাগ মানুষের খাবার পানির সঙ্কট থাকবে না। বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা
সিলেট নগরীর নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ট্রাফিক সিগন্যাল আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফ। তিনি বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর মাধ্যমে অপরাধী নির্ণয়ের পাশাপাশি যানবাহনের যানজটও রোধ করা হবে। যদি কেউ অবৈধ পার্কিং করেন সেটিও ক্যামেরায় ধরা পড়বে। পরে ওই গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যানজট দূর করতে উদ্যোগ সিলেট নগরীর যানজট দূর করতে বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন নতুন এই মেয়র। তিনি বলেন, নগরীতে ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনে ইতিমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সব ট্রাককে টার্মিনালে নেয়া হবে। দক্ষিণ সুরমায় টাউন বাসের জন্য স্ট্যান্ড স্থাপন করা হচ্ছে। আর নগরীর সব স্ট্যান্ডের চালকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে তারা গাড়ি এক সারিতে রাখবেন। কখনও রাস্তার মাঝখানে এনে রাখবেন না। যদি সেটি করেন তাহলে আইনমত ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে সিলেট নগরীর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মার্কেটে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় পার্কিং গড়ে তোলার কথাও জানান মেয়র। বর্জ্য অপসারণরাত ৩টার মধ্যে নগরীর বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, নগরবাসী পলিথিনের মধ্যে বর্জ্য রেখে ছড়ায় ফেলে দেন। এতে ছড়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়। তিনি বলেন, রাত ৩টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সকালে আবার রাস্তায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাত ১২টার মধ্যে দিনের সব বর্জ্য বাসা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রাখতে হবে। সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা সব বর্জ্য নিয়ে আসবে। নির্ধারিত সময়ের বাইরে বর্জ্য না ফেলার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে নগরীর ক্লিনিক ও মেডিকেলের বর্জ্য যত্রতন্ত্র ফেলে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন মেয়র। ফান্ড শূন্য, ঈদের পর নিয়োগ হবে ম্যাজিস্ট্রেটএই মুহূর্তে শূন্য ফান্ড নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, এরপর ছড়া ও খাল উদ্ধারে কাজ চলছে। ফুটপাথ সৌন্দর্যকরণের কাজ চলছে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন সাহায্য করবেন। আশা করা হচ্ছে, তিনি সহায়তা করলে দ্রুত কাজ করা সম্ভব হবে। এদিকে, নগরীর অবৈধ স্থাপনা উদ্ধার সহ নানা কাজে সহায়তার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হচ্ছে। ঈদের পরপরই ম্যাজিস্ট্রেট এসে যোগ দেবেন বলে জানান মেয়র।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment