প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে নিতে বিরোধী শিবিরের ব্যাপক প্রস্তুতি

সরকারেরসবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ প্রশাসনিক দফতর সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। সম্প্রতি বিরোধী দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে আন্দোলন কর্মসূচির রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজপথের আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিলে সচিবালয়ে কর্মরত বিরোধী শিবিরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবেন। আর পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে ও নেপথ্যে থেকে পরিচালনা করতে তিন কর্মকর্তাকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।গোপন বৈঠক : বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে সচিবালয়ের ১২ কর্মকর্তা (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার) বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করেন। সেখানে সচিবালয় থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একজন সহকারী সচিব তারা বিএনপির স্থায়ী কমিটির ৬ সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে সবকিছু ঠিক করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা ওএসডি হওয়া কিংবা চাকরি হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন তাদের খুব শিগগির প্রকাশ্যে সক্রিয় হতে দেখা যাবে। তবে রাজপথের আন্দোলন বেগবান না হলে তারা আপাতত প্রকাশ্যে বড় কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। তিনি জানান, আন্দোলন বেগবান হলে জনতার মঞ্চের আদলে ভিন্ন নামে তারা সচিবালয়ের আশপাশে মঞ্চ তৈরি করবেন।সমন্বয়ক নিয়োগ : সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী শীর্ষ এই প্রশাসনিক দফতর থেকে নানা প্রক্রিয়ায় আন্দোলন গড়ে তুলতে তিন কর্মকর্তাকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রকাশ্যে থাকবেন একজন সহকারী সচিব (নন-ক্যাডার) এবং পেছনে থেকে পলিসিসহ সার্বিক সহায়তা প্রদান করবেন আরও দু’জন ক্যাডার কর্মকর্তা। এদের একজন উপসচিব ও অপরজন যুগ্মসচিব (ক্যাডার)। এরা পদোন্নতিবঞ্চিত ওএসডি কর্মকর্তা। এছাড়া সিভিল প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিরোধী শিবিরের সবকিছুর মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন সাবেক একজন সচিব। যিনি চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। যাকে জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাও বলা হয়।পরিকল্পনা বিরোধী শিবিরের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, আন্দোলন পরিচালনার বিস্তারিত পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ সম্পর্কে এখন কিছুই বলা যাবে না। আপাতত এক ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বা আন্দোলন ফর্মুলা ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন করা হবে। কেননা প্রতি মুহূর্তে তাদের পেছনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা লেগে আছে। তারা জানান, যেমন রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তা আবার পরিবর্তনও করা হয়েছে। একজন জানান, ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত এক ধরনের নেপথ্য আন্দোলন হবে। এটা সেভাবে দৃশ্যমান নাও হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, শেষ কর্মদিবসে কিছু একটা মুভমেন্ট হবে।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একজন ক্যাডার কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কী হবে বা কী হতে পারে- ধরে নেন তা কেউই জানে না। পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট সব বলে দেবে। তাছাড়া তারা চান না, এসব তথ্য আগাম মিডিয়ায় প্রকাশ হোক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্দার আড়ালে নানাভাবে প্রস্তুতির কাজ চলছে। আর যা গোপন তা তো গোপনই। এ কর্মকর্তা বলেন, আসলে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা জানতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আন্দোলন পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপর এক উপসচিব বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বিএনপি যেভাবে প্রশাসন সাজিয়ে গেছে তাতে চারদিকে শুধু বিএনপি ও জামায়াতের কর্মকর্তা।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য ছিল শতভাগ সত্য। এ কারণে প্রথম থেকেই সরকার অনেক ভুল করেছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের লোকই চিনতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ভেবে বিরোধী শিবিরের অনেক কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে। আবার অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে অহেতুক সরকারের বদনাম হয়েছে। অথচ সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের সরাতেও পারেনি। তিনি মনে করেন, এসব ভুল সরকার সামনের দিনগুলোতে বুঝতে পারবে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ দফতরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রেও প্রথম থেকে সরকার চরম ভুল করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক ক্ষেত্রে উদার ও আন্তরিক থাকলেও কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বহু কর্মকর্তা দফায় দফায় পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। বছরের পর বছর ওএসডি থেকেছেন। তাই সুযোগ পেলে এসব ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা তো বসে থাকবেন না। তবে তারা এখন সার্বিক পরিস্থিতি নানাভাবে বিশ্লেষণও করছেন।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিবালয়ে কর্মরত সরকার সমর্থক কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিরোধী শিবিরের কোনো প্রস্তুতিই কাজে আসবে না। তারা মনে করেন, সরকার শক্ত হাতে ও আইনগতভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। বিএনপি আন্দোলন কতটুকু করতে পারবে আর কোন পর্যন্ত যেতে পারবে তা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক আগেই পরিমাপ করা হয়ে গেছে। তাই শুধু ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে লাভ হবে না। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ শক্তিশালী দল। একেবারে রুট লেবেল পর্যন্ত রয়েছে এর ব্যাপক কর্মী-সমর্থক। তাই যা ভাবা হচ্ছে তার কিছুই হবে না। আর মঞ্চ বানানো তো দূরের কথা সচিবালয়ের মধ্যে ওরা একটি মিছিল বের করার সাহসও পাবে না ।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment