পরিবার
স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শত প্রতিবন্ধকতা ঠেলে নাড়ির
টানে বাড়ি ফেরা মানুষগুলোর চোখে মুখে উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হলেও বুকের ভেতরে
কাজ করছে শঙ্কা-সংশয়। ঈদ পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে মনে ভর করা
আতঙ্ক ঈদের আনন্দকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি
বিশেষ করে সন্তানদের সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।
ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পরই ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি
কর্মসূচি ও বিরোধী দলের সরকার হঠানোর একদফার ঘোষণায় তারা অনেকটাই নিশ্চিত
হয়ে গেছেন যে, ঈদের পর দেশের রাজনীতি সহিংসতায় রূপ নেবে। আর এটি নিয়ন্ত্রণ
করতে না পারলে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলেও শঙ্কা অনেকের। তাদের
মতে, সংবিধান অনুযায়ী দেশে যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কারণে
জরুরি অবস্থা জারি করা যায়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের
চেয়ারপার্সনের বক্তব্যে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা এই প্রশ্ন ঘনীভূত
হচ্ছে সব মহলে। অনেকের ধারণা অনড় অবস্থানের কারণে আবারো ফিরে আসতে পারে
জরুরি অবস্থা কিংবা ১/১১। ঢাকায় একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ফজলে
এলাহী আরিফ। কিশোরগঞ্জে মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়িতে যাচ্ছেন একরাশ
উৎকণ্ঠা নিয়ে। গতকাল সোমবার তিনি মানবকণ্ঠকে বলেন, গত রমজানের ঈদে বাড়ি
গিয়েছিলাম জামায়াত-শিবিরের হরতাল-নৈরাজ্য মাথায় নিয়ে। এবার যাচ্ছি বিরোধী
জোটের দেশ অচল করার কর্মসূচি সামনে রেখে। পরিস্থিতি কী হবে, নিরাপদে ঢাকায়
ফিরতে পারব কি না, সে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
আরিফের মতোই শঙ্কায় আছেন হোসনা আক্তারও। তার স্বামী ঢাকায় একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে সাংবাদিকদের সবসময়ই সামনে থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। এ কারণে তার যত ভয় স্বামীকে নিয়ে। তিনি বলেন, এবারের ঈদে আনন্দ করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। দেশের এই পরিস্থিতিতে সামনে কী হয় তা কেবল আল্লাহ জানেন।
সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে আছেন ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম আরজু। ঈদের পর মেয়ে তন্বী ও ছেলে তমালের সমাপনী পরীক্ষা। দেশের পরিস্থিতি সংঘাতময় হলে পরীক্ষার কী হবে এ সংশয় সারাক্ষণ তার মন ভারি করে রাখে। হতাশ স্বরে তিনি উল্টো প্রশ্ন তোলে বলেন, আনন্দ করার মতো পরিস্থিতি কি দেশে আছে?
নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে হবে ২৪ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। সে হিসেবে আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত এ বিধান সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩(ক) উপদফায় উল্লেখ রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই আগামী ২৭ অক্টোবরের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কী হবে, মন্ত্রিসভা থাকবে কি থাকবে না, সে বিষয়ে জটিল তর্কে মেতেছে উভয় জোট। তার মাঝে আবার সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ নিয়েই দেশে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এর আগে অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদ চালানোর কথা বলা হয়েছিল একাধিকবার। স্পিকারও অধিবেশন শুরু দিনে একই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিনিয়র এমপিদের পরামর্শে সরকার আগের অবস্থান পাল্টে ফেলেছে। সংসদ এবং মন্ত্রিসভা বহাল রেখেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে সরকার। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে যাবে না বিরোধীদলীয় জোট। তাদের এক দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ কারণে তারা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে ২৫ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। প্রতিরোধের ডাক দিয়ে পাল্টা সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগও। এ রকম যুদ্ধংদেহী অবস্থানের কারণেই ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বাড়ছে অস্থিরতা, শঙ্কা। কী হবে ২৫ অক্টোবর।
রাজনীতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষ বলছেন, এ রকম পরিস্থিতি ঘটেছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও চারদলীয় জোটের মধ্যে ঢাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিপক্ষ দলের কর্মীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদ থেকে ইয়াজউদ্দিন পদত্যাগ করেন। সে কারণেই বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল। এবারো অক্টোবর মাসেই দেশ অচলের আন্দোলন শুরু হচ্ছে। ফলে সংঘাত অনিবার্য ভেবেই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। - See more at: http://www.manobkantha.com/2013/10/15/143074.html#sthash.uE9Ung9Z.dpuf
আরিফের মতোই শঙ্কায় আছেন হোসনা আক্তারও। তার স্বামী ঢাকায় একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে সাংবাদিকদের সবসময়ই সামনে থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। এ কারণে তার যত ভয় স্বামীকে নিয়ে। তিনি বলেন, এবারের ঈদে আনন্দ করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। দেশের এই পরিস্থিতিতে সামনে কী হয় তা কেবল আল্লাহ জানেন।
সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে আছেন ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম আরজু। ঈদের পর মেয়ে তন্বী ও ছেলে তমালের সমাপনী পরীক্ষা। দেশের পরিস্থিতি সংঘাতময় হলে পরীক্ষার কী হবে এ সংশয় সারাক্ষণ তার মন ভারি করে রাখে। হতাশ স্বরে তিনি উল্টো প্রশ্ন তোলে বলেন, আনন্দ করার মতো পরিস্থিতি কি দেশে আছে?
নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে হবে ২৪ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। সে হিসেবে আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত এ বিধান সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩(ক) উপদফায় উল্লেখ রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই আগামী ২৭ অক্টোবরের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কী হবে, মন্ত্রিসভা থাকবে কি থাকবে না, সে বিষয়ে জটিল তর্কে মেতেছে উভয় জোট। তার মাঝে আবার সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ নিয়েই দেশে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এর আগে অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদ চালানোর কথা বলা হয়েছিল একাধিকবার। স্পিকারও অধিবেশন শুরু দিনে একই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিনিয়র এমপিদের পরামর্শে সরকার আগের অবস্থান পাল্টে ফেলেছে। সংসদ এবং মন্ত্রিসভা বহাল রেখেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে সরকার। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে যাবে না বিরোধীদলীয় জোট। তাদের এক দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ কারণে তারা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে ২৫ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। প্রতিরোধের ডাক দিয়ে পাল্টা সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগও। এ রকম যুদ্ধংদেহী অবস্থানের কারণেই ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বাড়ছে অস্থিরতা, শঙ্কা। কী হবে ২৫ অক্টোবর।
রাজনীতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষ বলছেন, এ রকম পরিস্থিতি ঘটেছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও চারদলীয় জোটের মধ্যে ঢাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিপক্ষ দলের কর্মীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদ থেকে ইয়াজউদ্দিন পদত্যাগ করেন। সে কারণেই বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল। এবারো অক্টোবর মাসেই দেশ অচলের আন্দোলন শুরু হচ্ছে। ফলে সংঘাত অনিবার্য ভেবেই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। - See more at: http://www.manobkantha.com/2013/10/15/143074.html#sthash.uE9Ung9Z.dpuf
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন