মিস লায়লা একজন ডাইনী

ওটা ছিল জীবনের প্রথম ট্রেন ভ্রমন । সে বার বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না হঠাৎ করে ইচ্ছে হওয়ায় আর ঈদ পুজর ছুটি পড়াতে প্রচন্ত রকমের ভীড় ছিল । কিছু লোকের সিট হয়েছিল কিছু লোককে দাড়িয়ে যেতে হয়েছিল । মিসেস লায়লা ট্রেনেই পরিচয় । ভদ্র মহিলা সপ্তাখানেক আগে টিকেট কেঁটে রেখেছিলেন । তার সিটটি অন্য আরেক জনের দখলে চলে গেছে । ও সিটটি এ জনমে আর পূর্ণ দখলে আনা সম্ভব নয় ।

ট্রেন তার গন্তব্যের উদ্ধ্যশে ছাড়লো । চেপে ওঠলাম । ট্রেন কিছুক্ষন চলার পরে ভদ্র মহিলা ওখানে দাড়াতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই তাকে কবির ভাই তার সিট ছেড়ে দিয়ে মিস লায়লা কে বসতে দিলেন ।
কবির ভাই উনার দেশের বাড়ি কুমিল্লা দিনাজপুর তার শশুর বাড়ি তাই এবার উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শশুর বাড়ি ঈদ করবেন । তাই তার দিনাজ পুরে যাওয়া । কবির ভাইয়ের সাথে ট্রেনে পরিচয় । কথায় কথায় কবির ভাইকে তার শ্ত্রী সন্তানের কথা জিজ্ঞাসা করলাম উনি বললেন আপনার ভাবী বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে তার বাবার শরীর অসুস্থতার খবর শুনে গত এক মাস আগেই চলে গেছেন ।
আমাদের কথার মাঝে ট্রেন চলছে তার গতিতে এর মধ্যে সারে তিন ঘন্টার মত অতিক্রম করছে ট্রেন ময়মনসিংহ পৌঁছে গেছে অথচ এখন আমরা দাড়ানো অবস্থায় । এখানে বেশ কিছু লোক নেমে গেল সিটও বেশ কিছু ফাঁকা হয়েছে । কবির ভাই আমি সহ আমরা বেশ কয়েক জন লোক ফাঁকা সিটগুলোতে বসে পড়লাম ।
এবার আমার ও কবির ভাইয়ের সাথে বেশ কয়েকজন যোগ দিলেন সকলের গন্তব্য দিনাজপুর ।
কথায় কথায় বিকেল পার হয়ে সন্ধা নেমে এসেছে সকলের পেটে কিছু হালকা খাবার দেওয়া দরকার । কথাটা কবির ভাইকে বলতে উনি পকেট থেকে টাকা বের করতে পকেটে হাত দিলেন । কিন্তু মিস লায়লা বললেন ভাইয়া টাকাটা আমি দেই ? কবির ভাই বললেন সে কি বলছেন তা কি করে হয়, আমরা এতগুলো পুরুষ লোক থাকতে আপনি টাকা দিবেন, না তা হয় না । মিস লায়লা বললেন দেখেন ভাইয়া এখানে ছেলে মে বলে কেন অহেটুক দেওয়াল তৈরি করছেন তা ছাড়া আপনেরা সকলে আমার ভাইয়ের মত ।
কবির ভাই বললেন আচ্ছা বুঝেছি বোন তোমার সাথে কথায় পারবো না দেও দিতে যখন চাইছ দেও ।
পাশে থেকে লিমন ভাইকে ডেকে তার হাতে টাকা দিলেন এবং বললেন নাস্টা আনার জন্য । লিমন ভাই নাস্টা নিয়ে আসলেন সকলে মিলে নাস্টা পর্ব শেষ করলাম ।
শুরু হলো আরেক ধাপ আড্ডা এ আড্ডায় আমাদেরকে লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে দিলেন । ওখানে রাতের খাবার শেষ করলাম । এবার লঞ্চে উঠলাম প্রায় তিন ঘন্টা সময় লেগে গেল নদী পার হতে ।
লঞ্চ থেকে নেমে আবার ট্রেনে উঠলাম এখন শরীর বেশ ক্লান্ত তাই এখন আর আড্ডা না এখন কিছুটা সময় বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন । সকলে যার যার সিটে একটু হেলান দিয়ে বসলাম । ট্রেন চলছে কে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম তা বলতে পারি না ।
হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গতে চেয়ে দেখি ট্রেন বন্ধ চলছে না বাহিরে দিনের আলো ঘড়িতে চেয়ে দেখি সকাল আটটা বাজে । পাশের সিটে চোখ পড়লো দেখি মিস লায়লা নেই ভাবলাম হয়ত টয়েলেটে গেছেন তাই টেনশন নিলাম না । কবির ভাই লিমন ভাই তারা তখন উঠেন নাই ।
বেশ কিছুক্ষন পার হয়ে গেল মিস লায়লা আসছেন না এবং ট্রেন চলতেছে না । এর মধ্যে আমার চোখ যেয়ে পড়লো যেখানে আমার ব্যাগ ও জিনিস পত্র রেখেছিলাম দেখি আমার কিছুই নেই ।লাফ দিয়ে উঠলাম পরে দেখি লিমন ভাইয়ের একটি ব্যাগ ছিল,কবির ভাইয়ের একটি ব্যাগ ছির তাও নেই ।
কবির ভাইকে ডাক দিলাম কবির ভাই ঘুমের ঘরে বললেন কি হয়েছে বাড়িতে ডাকাত পড়েছে ? আমি বললাম ভাই ডাকাত পড়েছে তবে বাড়িতে নয় গাড়িতে, বলার সাথে সাথে কবির ভাই চট করে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেলেন ।
কবির ভাই প্রশ্ন কি হয়েছে আমি বললাম ভাই কিছুই নেই কবির ভাই বললো কিছু নাই মানে আমি বললাম কিছু নাই মানে আপনার আমার ও লিমন ভাইয়ের ব্যাগ ও জিনিস পত্র কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না । কবির ভাই বললো তাহলে । এর মধ্যে লিমন ভাইও জেগে গেলেন কি হয়েছে ভাই কবির ভাই বললেন কি হয়েছে উঠে দেখুন ।লিমন ভাইও উঠলো লিমন ঘটনা শুনে বললো মিস লায়লা কোথায় তা ছাড়া উনার জিনিস পত্রও দেখছি না ।
ততক্ষনে আমাদের বোঝা হয়ে গেল এ ঘটনা মিস লায়লা ডাইনী ছাড়া আর কেও করেনি ।

আমার জীবনের প্রথম ট্রেন ভ্রমনের কথা ।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment