পৌষের
রোদ ঝলমল বিকালে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের সবুজ চত্বরে
দেশের শীর্ষস্থানীয় কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের
মিলনমেলা বসেছিল। এ মিলনমেলায় মধ্যমণি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রীয় শত ব্যস্ততা ফেলে রাষ্ট্রাচারের বৃত্তের বাইরে এসে তিনি বিশিষ্ট
ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে অন্যরকমের সময় কাটান। প্রায় তিন ঘণ্টার এ মিলনমেলায়
ছোট বোন শেখ রেহানাও প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন।
তৃতীয় দফায়
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের ৫ দিন পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গতকাল
বিকালে গণভবনে দেশের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের চা চক্রের
আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রিতদের গণভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে গতকাল ছিল না কোন
কড়াকড়ি। আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও রাজনীতিবিদ এবং নতুন মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য
এ আয়োজনে শরিক হন। তবে সেখানে রাজনীতির লেশমাত্র ছিল না। গণভবনের এই সবুজ
চত্বরে ছোটাছুটি, শীতের গরম পিঠে পুলি, মুখরোচক ফুসকা, হরেক রকমের
ফল-ফলাদি খেয়ে, আর ঘুরেফিরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং ছোট্ট মঞ্চে
প্রথিতযশা শিল্পীদের গানের মূর্ছনা, কবিতা আবৃত্তির মধ্যে যেমন মুখরিত
ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথিরা, তেমনি রাজনীতির বাতাবরণের বাইরে এসে প্রাণ খুলে
এক অন্যরকমের আড্ডায় মেতে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর এই দুই কন্যা।
অনুষ্ঠানকে
ঘিরে গণভবনের সবুজ চত্বর বাঙালির ঐতিহ্যবাহী লোক সংস্কৃতিকে ধারণ করে এক
অন্যরকম সাজে সাজানো হয়েছিল। ছোট ছোট কুঁড়েঘর, বাঁশ ও শতরঞ্জি দিয়ে তৈরি
করা হয় ছোট মঞ্চ। কুঁড়েঘরগুলোতে গরম ভাঁপা পিঠে, চিতই পিঠে, পুলি,
মিষ্টান্ন, পাটিসাপ্টা, জিলাপি ও বিভিন্ন ধরনের ঝাল পিঠে বানাতে ব্যস্ত
ছিলেন সবাই। মাঠের কোনায় ছিল ফুসকা ও চটপটির ব্যবস্থা। পর্যটন
কর্পোরেশনের কর্মীরা সারাক্ষণ গরম চা-কফি পরিবেশন করে অতিথি আপ্যায়নে
ব্যস্ত সময় কাটান। মাঠের এক প্রান্তে তৈরি করা হয় একটি বড় প্যান্ডেল।
সেখানে মুরগি, গরু ও খাসির কাবাবের সঙ্গে পরাটা ও নান রুটির সঙ্গে ছিল
সুস্বাদু হরেক প্রকার সালাদ। যে যার পছন্দ মতো খাবার প্লেটে নিয়ে পুরো
মাঠ জুড়ে ঘুরে ঘুরে খাচ্ছেন আর প্রিয়জন ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কুশল
বিনিময় করছেন। গোটা সবুজ চত্বর জুড়ে ছোট ছোট শিশুদের ছোটাছুটি ছিল
লক্ষ্যণীয়। খেলাধুলা ও ছোটাছুটিতে ব্যস্ত এসব শিশুদের সঙ্গে ক্ষণিকের জন্য
মিশে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। কোন কোন শিশুকে কাছে টেনে আদরও করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে প্রথমে পৌঁছেন শেখ রেহানা। অল্পক্ষণের মধ্যে
হাস্যোজ্জ্বল শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত হন। তারা ঘুরে ঘুরে অতিথিদের
সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে অনেকে আপ্লুত
হয়ে পড়েন। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নানা আবেগের কথা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনাকে কিছু বলার জন্য সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পিড়াপিড়ি করা হয়। কিন্তু
তিনি প্রথমে তাতে রাজি হননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ কোন বক্তব্য নয়,
রাজনীতিও নয়। আজ শুধু আড্ডা দিতে এসেছি। গান শুনে আর খাওয়া-দাওয়ার মধ্য
দিয়েই আপনাদের সাথে সময় কাটাতে চাই। তবে অনেক অনুরোধের পর এক পর্যায়ে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরীহ মানুষের গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারা কোন
ধরনের রাজনীতি? আমার রাজনীতি জনগণের জন্য নিবেদিত। জনগণের কল্যাণের কথা আমি
সব সময় ভাবি। দেশের মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করে যাব আমি।
এতো
গেল প্রধানমন্ত্রীর কথা। আড্ডার পুরো সময়টা বেশ উচ্ছ্বল ছিলেন শেখ
রেহানা। মাঠে প্রবেশ করেই তিনি এক পর্যায়ে দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত
সম্পাদক তাসমিমা হোসেনকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় তারা দুজন অতীতের বিভিন্ন
স্মৃতিচারণ করেন। চেনা-জানা যাকেই পেয়েছেন সবার কাছে কুশল জানতে চান। অনেক
ছোট ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করেছেন। অতিথিদের সাথে ফটোসেশনও করেন।
বাঁশ
ও শতরঞ্জি দিয়ে তৈরি মঞ্চে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
উপস্থাপনায় ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। চঞ্চল মাহমুদ ও
পাপিয়া সারোয়ারের রবীন্দ্র সঙ্গীত, প্রখ্যাত শিল্পী রফিকুল আলমের
দেশত্ববোধক গান, সুবীর নন্দির আধুনিক গান, হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের লালন
সঙ্গীত, নবনিতা চৌধুরীর হাসান রাজার গান সবাইকে আনন্দ দেয়। এছাড়া
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আসাদুজ্জামান নূর, নাসির উদ্দিন ইউসূফ, কবি
ডা. কামাল আবদেল নাসের চৌধুরীর কবিতা এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব তারানা হালিমের
'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' নাটিকার কিছু অংশের উপস্থাপনা অনুষ্ঠানের পরিবেশ
আরো আনন্দঘন করে তোলে। মঞ্চের সামনে শ্রোতাদের প্রথম সারিতে বসে
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
সবশেষে 'ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা' মুক্তিযুদ্ধের এই গানটি
সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়। এই গানের সাথে ঠোট মেলান শেখ হাসিনা ও শেখ
রেহানাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী ফিরে যান
বাসভবনে।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডা. শিরীন
শারমিন চৌধুরী, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া
চৌধুরী, সাহারা খাতুন, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ড. গওহর রিজভী, ড. মসিউর
রহমান, ডা. দীপু মনি, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, ইয়াফেস ওসমান, আহমেদ হোসেন,
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডা. বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাব্লিউ, আব্দুল মতিন খসরু,
ফজলে রাব্বি মিয়া, আরিফ খান জয়, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর
প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক,
শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সৈয়দ শামসুল হক,
সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশীদ,
ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জহির, ড. এম
শামসুজ্জামান, দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন,
হাবিবুর রহমান মিলন, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, এ কে আজাদ চৌধুরী,
এমদাদুল হক মিলন, ফরিদুর রেজা সাগর, হাসান শাহরিয়ার, শফিকুর রহমান,
মোজাম্মেল হক বাবু, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, নঈম নিজাম, সাইফুল আলম, শাহ
আলমগীর, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, শাহিন রেজা নূর, ফরিদ হোসেন, মাসুদা ভাট্টি,
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, গোলাম কুদ্দুস, আলী যাকের, সারা যাকের, পিযুষ
বন্দোপাধ্যায়, লায়লা হাসান প্রমুখ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন