নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে তাঁরা সবাই গাইবান্ধায়। ৫ জানুয়ারি স্থগিত হয়ে যাওয়া গাইবান্ধার তিনটি আসনের নির্বাচন কাল বৃহস্পতিবার। আর এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতেই এই বিপুল তত্পরতা।
ব্যালট না পৌঁছানোর কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গাইবান্ধার অন্তত দেড় শ কেন্দ্রে ভোটই শুরু করা যায়নি। এ ছাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আরও অর্ধশত কেন্দ্র। ফলে তিনটি আসনের ২০৬টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করতে হয়।
কিন্তু আজ বুধবার বিকেলে জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কোনো সমস্যা ছাড়াই স্থগিত ২০৬টি কেন্দ্রে বিকেল পাঁচটার মধ্যে ব্যালট পৌঁছে গেছে। কোথাও কোনো সহিংসতার খবর নেই। গাইবান্ধার প্রশাসন বলছে, আগে যেখানে একটি কেন্দ্রে একজন সশস্ত্র পুলিশ ছিল, এবার সেখানে প্রতি কেন্দ্রে পুলিশ-আনসারের ২৭ জন করে সশস্ত্র সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া কেন্দ্রের বাইরে থাকছে বিপুলসংখ্যক র্যাব-বিজিবি এবং সেনাবাহিনী। সব মিলিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে পুরো জেলাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। এখন অপেক্ষা কেবল ভোটারের। তবে ভোটাররা যাঁদের ভোট দেবেন, সেই প্রার্থীদের তত্পরতা নেই বললেই চলে। তিনটি আসনের ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সর্বশেষ ফলাফলে যাঁরা এগিয়ে ছিলেন, কেবল তাঁরাই এখন নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী।
সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলামকে ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। নতুন দায়িত্বে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে এসেছেন এহছানে এলাহী। আজ বিকেলে কথা হয় তাঁর কার্যালয়ে। আলাপকালে তিনি ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচনের জন্য আমাদের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি আসনে ১৫ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসারসহ মোট ২৭ জন সশস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবেন। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য থাকবেন। এবার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া কোথাও গাছ কেটে অবরোধ করলে বা রাস্তা কাটা হলে তখনই সেটা ঠিক করার সব ব্যবস্থা থাকছে।’
এত নিরাপত্তার পরও ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন কি না, জানতে চাইলে এহছানে এলাহী বলেন, ‘আমি নিজে অর্ধশত কেন্দ্রে গিয়েছি। এলাকায় গিয়ে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের জানিয়েছি, কেউ ভোট দিতে এলে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা আশা করছি মানুষজন এবার নির্ভয়ে ভোট দিতে আসবে।’
গাইবান্ধা শহরের সুকনগর এলাকার কলেজশিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর কখনোই জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এত সদস্য আমরা দেখিনি। ৫ জানুয়ারিতে যারা সহিংসতা দেখে যারা ভয় পেয়েছিল, তাদের ভয় কেটেছে। তবে এত কিছুর পরও ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন কি না, তা ভোটের দিনই বলা যাবে।’
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের দিন গাইবান্ধার মানুষের মধ্যে ছিল শঙ্কা। হরতাল-অবরোধের মধ্যে ভোট নিয়ে মানুষ ছিল আতঙ্কিত। বিকেলে থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়ার খবর আসছিল। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারাও ছিলেন আতঙ্কিত। এসব কারণে ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। ভোটের দিন গাইবান্ধা-৪ আসনের গোবিন্দগঞ্জের পুনতাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ভোট নেওয়া শেষে উপজেলা সদর দপ্তরে ফেরার পথে জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার হন। পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে এখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিত্সাধীন।
তবে এবার নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের কোনো তত্পরতা নেই। এই দুই দলের নেতারা ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারি তাঁরা তাদের শক্তি দেখিয়েছেন। এখন সারা দেশে নির্বাচন হয়ে গেছে। সরকার গঠন হয়ে গেছে। কাজেই ১৬ জানুয়ারির নির্বাচন হওয়া, না-হওয়া নিয়ে কারও কোনো আগ্রহ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাউছুল আযম আজ রাতে ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি একদলীয় ও অগণতান্ত্রিক নির্বাচন করেছে। ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আমাদের নেতা-কর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। ফলে বৃহস্পতিবারের নির্বাচন ঠেকাতে আমরা মাঠে থাকব না। তবে জনগণকে আমরা কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
About juwel ishlam
This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন