বি এন পি ও আওয়ামিলীগের চ্যালেঞ্জের
-বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে জয়ী হয়ে এলেও ক্ষমতা নির্বঘ্ন করার পাশাপাশি জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকারকে কমপক্ষে আরও দশটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এমনটাই মনে করেন। তাদের মতে এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবেলা, দেশী-বিদেশী কূটনীতিকদের সমর্থন আদায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর চাপ সামলিয়ে দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। এছাড়াও বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর অব্যাহত সমর্থন আদায় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অন্যতম। এর বাইরে সুশীলসমাজের সমর্থন আদায়ও একটি বড় কাজ। অবশ্য সরকার সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তারা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত। ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছেন।
জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এখন প্রয়োজন দৃশ্যমান সংলাপের আয়োজন। এ সংলাপ যত দ্রুত হয়, ততই ভালো। তা না হলে নতুন ধরনের সমস্যা হবে। বিএনপির অফিস খুলে দেয়া এবং ২-১ নেতার মুক্তির মাধ্যমে এর ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আরও জানান, সরকারের ওপর ঘরে-বাইরের চাপ আছে। তিনি বলেন, যেভাবে নির্বাচন হয়েছে- সেখানে বৈধতার প্রশ্ন আছে। যারা মন্ত্রিসভায় রয়েছেন, তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া নিয়মের মাধ্যমে এসেছেন। তাই সরকারের নৈতিক ভিত্তি বাড়াতে হলে ঘরে-বাইরে যে চাপ আছে অর্থাৎ তারা সংলাপ ও নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলছেন। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি কি হবে- তা নির্ধারণ করা দরকার। পাঁচে জানুয়ারী যে নিরভাচন হয়েছে তা কি আসলে বৈদতা আছে
কি না তাও মিলিয়ে দেখতে হবে । এবং দুই দলকে এক টেবিলে বসতে হবে এক সাথে ।।
রাজনীীতির সম্যসার গুলো বাংলাদেশে অর্থনীতিক অবস্থা বিিপরজয়ের দিকে ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের মধ্য থেকে আতংক দূর করা সরকারের প্রধান কাজ। নির্বাচন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও এবং অব্যাহতভাবে মানুষ হত্যার কারণে জনমনে আতংক রয়েছে। সরকার কঠোরভাবে নিষ্ঠুরতম এ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করবে বলে তিনি আশাবাদী। আর তা করতে পারলেই সেটা হবে তার সরকারের সফলতা। নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিধর দেশগুলোর চাপের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হানিফ বলেন, তারা ইতিমধ্যেই সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি মনে করেন গণতন্ত্রের প্রতি এসব দেশের সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। কারণ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কাজেই এ নিয়ে আর কারও অস্বস্তিতে ভোগার কারণ নেই। হোক তা বিরোধী দলবিহীন, তারপরও এ নির্বাচন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের আগের অবস্থানেই রয়েছেন। তাই ঘরে-বাইরে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে একটি কার্যকর সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হলেও সে ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ নেই তাদের। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আইনের শাসন, সুশাসন এবং জনগণের মধ্যে যে আতংক রয়েছে তা দূর করতে সরকারি দলের নেতারা বদ্ধপরিকর। ঐকমত্যের মন্ত্রিসভা গঠন এবং তাদের পরবর্তী পদক্ষেপে এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করে।
বিশেষ করে মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে- তাদের প্রায় সবাইকে বিদায় দেয়া হয়েছে। ড. হাছান মাহমুদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, ডা. দীপু মনি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী বলে পরিচিত জাহাঙ্গীর কবির নানকদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি। এদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র, মেধাবী এবং সৎ ও যোগ্য বলে পরিচিত নেতাদের নিয়ে একটি শক্তিশালী মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে- যেখানে সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ থেকে শুরু করে হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন, সৎ হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ও ইয়াফেস ওসমান এবং তরুণ, মেধাবী শাহরিয়ার আলম, নসরুল হামিদ বিপু, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং জুনায়েদ আহমেদ পলকরা রয়েছেন। ইতিমধ্যে বিএনপির জেলে আটক নেতাদের মুক্তি দেয়া শুরু হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিনও পাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকলে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকার আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। যা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান বলে মনে হয়েছে। অন্যদিকে জনগণের মন থেকে আতংক দূর করতে সব ধরনের নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস কর্মকাণ্ডকে ইঙ্গিত করে তিনি এসব কথা বলেন। তার এ ঘোষণার পরপরই যৌথ বাহিনী সারা দেশে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী পাকড়াও অভিযান শুরু করেছে। এর ফলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলতে গেলে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণে সরকারের। যা জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তাতে কোন সন্দেহ নাই এবং তাদের সকল ক্ষমতা দিয়ে সব কিছু রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছৃন । এদিকে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবেলায় বিভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোতে শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে কয়েক মাস ধরে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনও। আগামী দিনগুলোতে মূলত দেশের মানুষ নির্বাচনকেন্দ্রিক উৎসবে যাতে ব্যস্ত থাকে সে ব্যবস্থা করতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার। এছাড়াও বিরোধী দলকে মোকাবেলায় আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। নিষ্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে দলের সক্রিয় নেতাদের কাজ করার সুযোগ দেয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। রয়েছে সামনে সাংগঠনিক সফর কার্যক্রম। শনিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নিষ্ক্রিয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সরকার সুশীলসমাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার দেশের বরেণ্য ও গুণী ব্যক্তিদের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীতে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের কর্মসূচিও রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার। এসব মতবিনিময় থেকে তিনি সরকার পরিচালনায় পরামর্শ গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে জনসম্পৃক্ত করে স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে দলটিকে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বিএনপিকে ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। প্রথমেই সংগঠনের দিকে নজর দিতে হবে। সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নেতাদের কারামুক্তি, আন্দোলনের কর্মকৌশল চূড়ান্ত, কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখা, সরকারের দমন-পীড়ন মোকাবেলা, জামায়াত এবং হেফাজত প্রশ্নে দলটির অবস্থান স্পষ্ট করাসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বিএনপিকে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকা দলটির জন্য কঠিন হবে বলেও মনে করছেন তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এ মুহূর্তে বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দিয়ে দল চালানো হচ্ছে। এটা সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দলের মহাসচিব পদটি স্থায়ী করার দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। এছাড়াও আরও যেসব সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নিতে হবে। জামায়াতের সঙ্গে যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সে বিষয়েও বিএনপির নতুন করে ভাবা উচিত- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে এ মুহূর্তে জামায়াতকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি কিছুটা কৌশলী আচরণ করবে বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, এ মুহূর্তে জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়া হলে আওয়ামী লীগ সুবিধা নিতে পারে বলে বিএনপির আশংকা। তবে দুই দলের মধ্যে দৃশ্যমান সংলাপ শুরু হলেই জামায়াতের বিষয়টি একটি এজেন্ডা হিসেবে চলে আসবে। জামায়াতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হলে বড় দুই দলের মধ্যে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আর ঐক্যের হওয়ার সুযোগ থাকবে না ।।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন