চলমান
হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। গত দুই
দশকের অর্থনৈতিক অর্জন আজ মলিন হইয়া পড়িয়াছে। আমদানি-রপ্তানি মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। কমিয়া গিয়াছে বিনিয়োগ ও ঋণ প্রবাহ। দুই গুরুত্বপূর্ণ
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত গার্মেন্টস রপ্তানি ও রেমিট্যান্স হরাস
পাইয়াছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল হইতে উত্পাদনের উপকরণ সরবরাহ ও উত্পাদিত পণ্যের
বাজারজাতকরণ উভয়ই বিঘ্নিত হইতেছে। সহিংস আন্দোলনের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
ও স্বল্প আয়ের মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। যারপরনাই
ঝুঁকির মধ্যে আছেন দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সমাজ। মাসান্তে তাহাদের
অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খাইতেছেন। তাহাদের ঋণ
খেলাপি হইবার আশঙ্কা বাড়িতেছে। অথচ যাহারা এইসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড
চালাইয়া যাইতেছেন তাহাদের অনেকের অর্থনৈতিক জোগান নিয়া ভাবিতে হয় না
বলিয়াই প্রতীয়মান হয়।এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ঢাকা চেম্বার ও
বিজিএমইএ'র হিসাব মতে, প্রতিদিন হরতাল-অবরোধে ক্ষতি হইতেছে দেড় হাজার
কোটি টাকা। গত দেড় মাসে ক্ষতি হইয়াছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলিতেছেন, গত ৪২ বত্সরে অর্থনীতিকে এতটা
বিপর্যস্ত হইতে দেখা যায় নাই আর কখনও। ইতোমধ্যে আইএমএফ চলতি ২০১৩-১৪
অর্থবত্সরে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশে নামিয়া আসিতে পারে বলিয়া আশঙ্কা ব্যক্ত
করিয়াছে। অথচ প্রায় এক দশক ধরিয়া আমাদের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশের উপর।
দেখা যাইতেছে চলমান সংকটের জন্য দায়ী রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী। কিন্তু ইহার
জন্য কোন প্রকার রাজনীতি করেন না বা বোঝেন না এমন সাধারণ মানুষকেই বেশি
মূল্য দিতে হইতেছে। তাহাদের উপর চালানো হইতেছে নির্মম ও বর্বরোচিত
হত্যাযজ্ঞ। দিনে-দুপুরে পেট্রোল বোমা ছুঁড়িয়া মারা হইতেছে, আগুন লাগাইয়া
দেওয়া হইতেছে বাড়ি-ঘরে। এইসব বিবেকবর্জিত কর্মকাণ্ড কোন মতেই গ্রহণযোগ্য
নহে।ইতিহাসের দিকে তাকাইলে দেখা যায়, শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচির
মাধ্যমে অনেক বড় অর্জন সম্ভবপর হইয়াছে। এ জন্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড
চালাইতে হয় নাই। আর এখন দাবি আদায়ের জন্য দিনের পর দিন ও মাসের পর মাস
হরতাল-অবরোধ দিয়া দেশের অর্থনীতির ধ্বংস করা হইতেছে। নব্বইয়ের
গণআন্দোলনের পর সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিটি
সরকারই তাহার মেয়াদ পূর্ণ করিতে সক্ষম হইয়াছে। মেয়াদের আগে শত আন্দোলন
করিয়াও সরকারের পতন ঘটানো যায় নাই। এইরকম বাস্তবতায়ও আমাদের বোধোদয়
হইতেছে না। বর্তমানে রাত্রেও হরতাল-অবরোধ দেওয়া হইতেছে। তাহা হইলে সাধারণ ও
খাটিয়া খাওয়া মানুষ যাইবেন কোথায়? এই ধরনের সিরিজ রাজনৈতিক কর্মসূচির
কারণে গার্মেন্টেসের বিশ্ববাজার হাতছাড়া হইয়া যাইতেছে। ক্রেতারা চলিয়া
যাইতেছেন প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন দেশে। তাই স্বাভাবিক ও সংগত কারণে প্রশ্ন
উঠিতে পারে, এই ধরনের ক্ষতিকর কর্মসূচি দেওয়ার হেতু কী? বহির্বিশ্বের যেইসব
শক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করিয়া হীনবল করিয়া রাখিতে চাহে,
তাহাদের খুশি বা লাভবান করিতেই কি এমন আত্মঘাতী কর্মসূচি দেওয়া হইতেছে? অথচ
বাংলাদেশ এই রকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ার পরও তাহারা আগের মতো দেশের
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বুলি আওড়াইয়া যাইতেছেন। তাহারাই
প্রতিপক্ষের প্রতি ভিন্ন দেশের এজেন্ট বলিয়া অঙ্গুলি নির্দেশ করিতেছেন। ইহা
কি স্ববিরোধিতার মধ্যে পড়ে না? যাহারা জাতীয় অর্থনীতি ধ্বংস করিতেছেন,
তাহারাই আসলে বিদেশী এজেন্ট বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়া
গেলে ঘুরিয়া দাঁড়ানো ছাড়া সাধারণ মানুষের গত্যন্তর থাকে না। যাহারা
নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও সর্বস্বান্ত হইতেছেন, তাহারা আজ হউক আর কাল হউক
জাগিয়া উঠিবেনই। কবির ভাষায়, 'দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে
ঋণ'। এই ঋণ একদিন কড়ায়-গণ্ডায় অবশ্যই শোধ করিতে হইবে। ধ্বংসাত্মক
কর্মকাণ্ডের জন্য মূল্য দিতে হইবে সংশ্লিষ্ট সকলকেই
- Blogger Comment
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন