দুই-তিন দিন ধরে মনটা খুব খারাপ। শচীন টেন্ডুলকারের শেষ ইনিংসের প্রায়
প্রতিটি বলই দেখেছি। আশায় ছিলাম শেষটা হবে সেঞ্চুরি দিয়ে রাঙানো। হলো না।
মন খারাপের সেটা একটা কারণ। তবে সবচেয়ে বড় কারণ বুকের ভেতর গুমোট বাষ্প হয়ে
থাকা শূন্যতা। শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ে ক্রিকেট-ব্রহ্মাণ্ডে শূন্যতা
সৃষ্টি হলো, সেটা যে আর কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।
আমি মানুষ হিসেবে ভাগ্যবান, ভাগ্যবান ক্রিকেটার হিসেবেও। মানুষ হিসেবে ভাগ্যবান কারণ আমি শচীন টেন্ডুলকারের খেলা দেখেছি। ক্রিকেটার হিসেবে ভাগ্যবান, আমি শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে খেলেছি বলে। এত বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে আর কোনো দিন আর কোনো ক্রিকেটার খেলতে পারবে বলে মনে হয় না। আমি ভবিষ্যদ্বক্তা নই, তবু বলে দিতে পারি, টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে পৃথিবীতে এত বড় ক্রিকেটার আর আসবে না কোনো দিন।
টেন্ডুলকারকে প্রথম দেখি ২০০৩ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে চাইলে এককথাতেই রাজি হয়ে গেলেন। পরের বছর ভারতীয় দল বাংলাদেশে এলে হোটেলের লিফটে কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। শেষবার কথা হয় ২০০৭ সালে, ঢাকায়। উনি আমার চোটের কথা জানতেন। স্টেডিয়ামে একদিন দেখা হলে টেন্ডুলকার তাই শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমার বোলিংয়ে কোনো সমস্যা নেই। শুধু শরীরটা ঠিক রেখো।’
নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি বোলার হিসেবেও, কারণ টেস্ট-ওয়ানডে দুই ধরনের ক্রিকেটেই আমার পকেটে আছে টেন্ডুলকারের দুটি উইকেট। ২০০৪ সালের সিরিজে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে আমার বলে ব্যক্তিগত ২৮ রানে টেন্ডুলকারের ক্যাচ ফেলেছিলেন সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার)। সে সুবাদে দিন শেষে অপরাজিত থাকলেও পরদিন দিনের প্রথম বলেই ৩৬ রানে এলবিডব্লু করেছিলাম টেন্ডুলকারকে। আরেকটা উইকেট নিলাম গত এশিয়া কাপে। সেটার কথা তো এর আগে টেন্ডুলকারকে নিয়ে লেখা এক কলামে সাকিবই বলে দিয়েছে। বাংলাদেশের বোলারদের নেওয়া টেন্ডুলকারের সর্বশেষ উইকেট হয়ে থাকবে আমার নেওয়া ওই উইকেটটাই। তবে এটাও বলে নিই, আমি যে টেন্ডুলকারকে দুবার আউট করেছি সেই টেন্ডুলকার শুরুর দিকের আক্রমণাত্মক টেন্ডুলকার নন। ব্যাটিংয়ের ধরন বদলে তত দিনে অনেকটাই খোলসের ভেতর তিনি। সেটা না হলে বাংলাদেশকেও হয়তো টেন্ডুলকারের অন্য চেহারাই দেখতে হতো। আমার মতো নগণ্য এক বোলারকে তো বটেই।
টেন্ডুলকারকে বল করা সব সময় সব বোলারের জন্যই ছিল চ্যালেঞ্জিং। কোনো বোলার তাঁকে আক্রমণ করলে পাল্টা-আক্রমণ চালিয়ে জয়ী হতেন টেন্ডুলকারই। সব বোলারেরই বল হাতে আশা থাকত টেন্ডুলকারের উইকেট নেওয়ার। বল করার পরই কেবল বোঝা যেত কাজটা কত কঠিন।
টেন্ডুলকারের বিপক্ষে বোলিং নিয়ে আমরা তাই কখনোই বিশেষ কোনো পরিকল্পনা করিনি। করে লাভটা কী? শত্রুর যেকোনো পরিকল্পনা মাটি করে দেওয়ার সামর্থ্যই যে তাঁর ছিল! ড্রেসিংরুম থেকে একটা নির্দেশনাই থাকত—ভালো জায়গায় বল করো। টেন্ডুলকার ভুল করলে উইকেট পেলেও পেতে পারো। একবারের ঘটনা মনে আছে। কোনো একটা টেস্টে টেন্ডুলকারকে একটা বল করেই মনে হলো খুব ভালো বোলিং হয়েছে তো। কিন্তু দেখলাম ব্যাকফুটে গিয়ে কী অসাধারণ এক পাঞ্চে ওই বলটায় বাউন্ডারি মেরে দিলেন! নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে হচ্ছিল তখন।
ব্যাটিং যদি হয় একটা শিল্প, তো সেই শিল্পের সবচেয়ে বড় শিল্পীর নাম শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ব্যাট তাঁর হাতে বর্ণিল এক রং-তুলি, প্রতিটি শট যেন ক্রিকেটকে রঙিন করে তোলা তুলির একেকটা আঁচড়। পৃথিবীতে ক্রিকেটার অনেক এসেছে, অনেক আছে এবং আরও অনেক আসবে। কিন্তু শচীন টেন্ডুলকারের মতো আরেকজন শিল্পী কি আসবেন? আর কাউকে কি কোনো দিন বলা হবে ‘ক্রিকেটের ঈশ্বর’? মনে হয় না। সেই ‘ক্রিকেট-ঈশ্বর’ অবশেষে বিদায় নিলেন।
আমি মানুষ হিসেবে ভাগ্যবান, ভাগ্যবান ক্রিকেটার হিসেবেও। মানুষ হিসেবে ভাগ্যবান কারণ আমি শচীন টেন্ডুলকারের খেলা দেখেছি। ক্রিকেটার হিসেবে ভাগ্যবান, আমি শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে খেলেছি বলে। এত বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে আর কোনো দিন আর কোনো ক্রিকেটার খেলতে পারবে বলে মনে হয় না। আমি ভবিষ্যদ্বক্তা নই, তবু বলে দিতে পারি, টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে পৃথিবীতে এত বড় ক্রিকেটার আর আসবে না কোনো দিন।
টেন্ডুলকারকে প্রথম দেখি ২০০৩ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে চাইলে এককথাতেই রাজি হয়ে গেলেন। পরের বছর ভারতীয় দল বাংলাদেশে এলে হোটেলের লিফটে কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। শেষবার কথা হয় ২০০৭ সালে, ঢাকায়। উনি আমার চোটের কথা জানতেন। স্টেডিয়ামে একদিন দেখা হলে টেন্ডুলকার তাই শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমার বোলিংয়ে কোনো সমস্যা নেই। শুধু শরীরটা ঠিক রেখো।’
নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি বোলার হিসেবেও, কারণ টেস্ট-ওয়ানডে দুই ধরনের ক্রিকেটেই আমার পকেটে আছে টেন্ডুলকারের দুটি উইকেট। ২০০৪ সালের সিরিজে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে আমার বলে ব্যক্তিগত ২৮ রানে টেন্ডুলকারের ক্যাচ ফেলেছিলেন সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার)। সে সুবাদে দিন শেষে অপরাজিত থাকলেও পরদিন দিনের প্রথম বলেই ৩৬ রানে এলবিডব্লু করেছিলাম টেন্ডুলকারকে। আরেকটা উইকেট নিলাম গত এশিয়া কাপে। সেটার কথা তো এর আগে টেন্ডুলকারকে নিয়ে লেখা এক কলামে সাকিবই বলে দিয়েছে। বাংলাদেশের বোলারদের নেওয়া টেন্ডুলকারের সর্বশেষ উইকেট হয়ে থাকবে আমার নেওয়া ওই উইকেটটাই। তবে এটাও বলে নিই, আমি যে টেন্ডুলকারকে দুবার আউট করেছি সেই টেন্ডুলকার শুরুর দিকের আক্রমণাত্মক টেন্ডুলকার নন। ব্যাটিংয়ের ধরন বদলে তত দিনে অনেকটাই খোলসের ভেতর তিনি। সেটা না হলে বাংলাদেশকেও হয়তো টেন্ডুলকারের অন্য চেহারাই দেখতে হতো। আমার মতো নগণ্য এক বোলারকে তো বটেই।
টেন্ডুলকারকে বল করা সব সময় সব বোলারের জন্যই ছিল চ্যালেঞ্জিং। কোনো বোলার তাঁকে আক্রমণ করলে পাল্টা-আক্রমণ চালিয়ে জয়ী হতেন টেন্ডুলকারই। সব বোলারেরই বল হাতে আশা থাকত টেন্ডুলকারের উইকেট নেওয়ার। বল করার পরই কেবল বোঝা যেত কাজটা কত কঠিন।
টেন্ডুলকারের বিপক্ষে বোলিং নিয়ে আমরা তাই কখনোই বিশেষ কোনো পরিকল্পনা করিনি। করে লাভটা কী? শত্রুর যেকোনো পরিকল্পনা মাটি করে দেওয়ার সামর্থ্যই যে তাঁর ছিল! ড্রেসিংরুম থেকে একটা নির্দেশনাই থাকত—ভালো জায়গায় বল করো। টেন্ডুলকার ভুল করলে উইকেট পেলেও পেতে পারো। একবারের ঘটনা মনে আছে। কোনো একটা টেস্টে টেন্ডুলকারকে একটা বল করেই মনে হলো খুব ভালো বোলিং হয়েছে তো। কিন্তু দেখলাম ব্যাকফুটে গিয়ে কী অসাধারণ এক পাঞ্চে ওই বলটায় বাউন্ডারি মেরে দিলেন! নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে হচ্ছিল তখন।
ব্যাটিং যদি হয় একটা শিল্প, তো সেই শিল্পের সবচেয়ে বড় শিল্পীর নাম শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ব্যাট তাঁর হাতে বর্ণিল এক রং-তুলি, প্রতিটি শট যেন ক্রিকেটকে রঙিন করে তোলা তুলির একেকটা আঁচড়। পৃথিবীতে ক্রিকেটার অনেক এসেছে, অনেক আছে এবং আরও অনেক আসবে। কিন্তু শচীন টেন্ডুলকারের মতো আরেকজন শিল্পী কি আসবেন? আর কাউকে কি কোনো দিন বলা হবে ‘ক্রিকেটের ঈশ্বর’? মনে হয় না। সেই ‘ক্রিকেট-ঈশ্বর’ অবশেষে বিদায় নিলেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন