নাশকতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের মিছিল

পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরসহ ১৮ দলীয় কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে সীতাকুণ্ডের গোটা পৌর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ১৮ দলের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও গুলি ছোঁড়ে। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক গাড়ি ভাংচুর করে, আগুন দেয় দশ-বারোটি যানবাহনে। এ ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।আহতদের মধ্যে স্থানীয় জামায়াতের আমির তৌহিদুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক নার্গিস আক্তার, উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রওশন আরা রয়েছেন। সীতাকুণ্ড হাসপাতালের চিকিত্সক ডা. শাহেদা আক্তার বলেন, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর হলেন সন্দ্বীপের কারিমুল মাওলা (৩৪) ও সীতাকুণ্ড সদরের আবুল বশর (৭০)। এদের মধ্যে কারিমুল মাওলার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে উত্তেজিত ১৮ দল কর্মীরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ দশ-বারোটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও শতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে। সংঘর্ষের জের ধরে ভাটিয়ারী, কুমিরা, দক্ষিণ বাইপাস, পৌরসদরসহ মহাসড়কের ব্যাপক এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের এলকে সিদ্দিকী স্কোয়ার এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হলে মিছিলকারীরা ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মহাসড়কে যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার গোটা এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে। তবে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। এসময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ডে গত ২৫ অক্টোবরের পর থেকে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা বিভিন্ন হরতাল চলাকালে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ২০ দিনে মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ শতাধিক যানবাহন অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর হয়। বেশ কয়েকবার মহাসড়ক ছাড়িয়ে আশপাশের গ্রামগুলোতেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ বিভিন্ন মামলায় আসামি ধরতে গ্রামে অভিযান চালাতে গেলে গ্রামবাসীর সাথেও কয়েকবার সংঘর্ষ হয়। ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ডে বিজিবির ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। গত ৮৪ ঘন্টার হরতালেও সীতাকুণ্ডে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন নেতার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে ভাংচুরসহ ব্যাপক সহিংসতা হয়। এতে সীতাকুণ্ড থানায় চারটি পৃথক মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে মামলার আসামি ধরার নামে নিরীহ লোকজনকে অবাধে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে ১৮ দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। মূলত পুলিশের গ্রেফতারের প্রতিবাদেই গতকাল বিকালে সীতাকুণ্ডে সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচির আয়োজন করে ১৮ দল।নাশকতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের মিছিলঅবশেষে সীতাকুণ্ডে নাশকতা প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে জোড়আমতল থেকে মাদামবিবিরহাট পর্যন্ত মহাসড়কে মোটর সাইকেল ও ট্রাক নিয়ে মিছিল করে নেতা-কর্মীরা।স্থানীয় সাংসদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব এবিএম আবুল কাসেমের নেতৃত্বে এ মিছিলে অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment