কঠোর অবস্থান ঘোষণা
-
আন্দোলনদমনে সরকারের কঠোর অবস্থান ঘোষণা সত্ত্বেও নমনীয় হবে না বিরোধী দল, বরং
জোটভুক্ত দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তারা সর্বাত্মক আন্দোলনের
প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা
সোমবার যুগান্তরকে জানিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে তারা ২৫ অক্টোবরের ঢাকার
জনসভা সফল করবেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে চাপ সৃষ্টির জন্য
ধাপে ধাপে তারা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবেন।সূত্রমতে, ২৫ অক্টোবর ঢাকায়
জনসভা করার জন্য সরকার অনুমতি না দিলেও জনসভা স্থলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন
দলটির নেতাকর্মীরা। সরকার এতে কঠোর হলে পুরো ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি নেয়া
হবে। পাশাপাশি ঘোষণা করা হবে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি। তবে পরিস্থিতি যাই
দাঁড়াক, এবার আর পিছু হটবে না বিরোধী দল। দলটির নেতাকর্মীদের যেকোনো
পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এ প্রশ্নে শীর্ষ
পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, গত পাঁচ বছরের
আন্দোলনে বিরোধী দল একবারের জন্যও সহিংসতা সৃষ্টি করেনি। ধৈর্য ধরে
পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। তিনি বলেন, এখনও আমরা আশা করব সরকার গণতান্ত্রিক
আচরণ করে দেশে সংঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকবে। ঢাকায় তারা জনসভার অনুমতি
দেবে। আর একান্ত না দিলে সে পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে।
সরকারকে মোকাবেলার প্রশ্নে এবারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।মহানগরী বিএনপির
আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় জনসভা আমরা করবই। কারণ
এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার এতে বাধা দেবে বলে আমরা মনে করি না।
তবে একান্তই তারা যদি এতে বাধা দেয় সে পরিস্থিতিও আমরা মোকাবেলা করব। কারণ
দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে অনেক ছাড় দেয়া
হয়েছে। আর নয়।এদিকে ঢাকার জনসভা সফল করার জন্য মহানগরী বিএনপির যৌথসভায়
সোমবার দলের নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া
হয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা সভায় দলের নেতাকর্মীদের পরিস্থিতি মোকাবেলায় দা,
কুড়াল ও বল্লম হাতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সভায় ফখরুল যা বলেন :
মহানগরী বিএনপির যৌথসভায় সোমবার দেয়া বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী
লীগ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। কারণ তারা জানে,
সংসদের মেয়াদ শেষ হলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই আওয়ামী লীগ এই কৌশল
নিয়েছে। তবে যে দিনই সংসদ ভেঙে দেয়া হবে সেদিন থেকেই সারাদেশে আওয়ামী লীগের
কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। দেশের মানুষ তৈরি হয়ে আছে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য
দিয়ে সরকারের পতন ঘটাবে। ২৫ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগর
বিএনপির যৌথসভা সোমবার নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সাদেক
হোসেন খোকার সভাপেিত্ব অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে মহানগর বিএনপির
সদস্যসচিব আবদুস সালাম, যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল বাশার, আবদুল কাইয়ুম, মোঃ
শাহাবউদ্দিন, আবদুল নকিসহ মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতারা উপস্থিত
ছিলেন।২৫ অক্টোবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন,
কোয়ার্টার, সেমি ফাইনাল শেষ। এখন ফাইনাল রাউন্ডে খেলার সময় মাত্র ৭ দিন।
এরমধ্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। এই খেলায় জয়ী হতে হবে। অন্যথায়
অস্তিত্ব থাকবে না। ব্যর্থ হলে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন,
এখন পথ একটাই দুর্বার গণআন্দোলন, দুর্বার গণআন্দোলন, দুর্বার গণআন্দোলন এবং
সরকারের পতন। ২৫ তারিখ সমাবেশে বাধা আসতে পারে। তা মোকাবেলা করে সামনে
এগিয়ে যেতে হবে, সমাবেশ সফল করতে হবে। তারপর খালেদা জিয়া যে কর্মসূচি দেবেন
তা শতভাগ সফল করতে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব বলেন, সমগ্র দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আমরা বারবার চেষ্টা করেছি শান্তিপূর্ণভাবে ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার
সমাধান করার। কিন্তু সরকার সমঝোতার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে
নির্বাচন চায় না বলেই তারা সংলাপে বসেনি। কারণ তারা জানে নির্বাচন হলে আবার
তাদের ভোট দিয়ে জনগণ নির্বাচিত করবে না। এজন্যই তারা সংবিধান পরিবর্তন
করেছে।ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার জঙ্গিবাদের অপবাদ দিয়ে বিদেশীদের
বুঝাতে চায় বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। বিএনপিকে বাদ দিয়ে
নির্বাচন করতে হবে। সেজন্য কোনো আলাপ-আলোচনা চায় না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে
তিনি বলেন, এই শেষ মুহূর্তে এসে কোনো নির্যাতন বেইমানি ও মোনাফেকি করলে
জনগণ ছাড়বে না। পালাবার পথ পাবেন না। আমরা জানতে পেরেছি আওয়ামী লীগের অনেক
নেতাকর্মী ইতিমধ্যে বিদেশে চলে গেছেন। অনেকে বিদেশে বাড়ি তৈরি করেছেন।সভাপতির
বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ২৫ তারিখের জনসভায় আমরা
কোনো প্রকার আক্রমণের শিকার হলে কিংবা বিগত সময়ের মতো লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ
হত্যার চেষ্টা হলে প্রয়োজনে দলের নেতাকর্মীরা দা, কুড়াল, বল্লম, কাতরা,
সরকি, টেঁটাসহ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সারা বাংলাদেশে পাল্টা আক্রমণ
করবে। দরকার হলে কোরবানি হয়ে যাব তবুও আন্দোলন সফল করব এমন ঘোষণা দিয়ে তিনি
বলেন, আমাদের দুটি বিষয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এক সমাবেশ সফল করা, দ্বিতীয়ত
আক্রমণ হলে যে কোনোভাবে মোকাবেলা করা। এবার কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন