সংলাপ- আগ্রহ নেই সরকারের



লুৎফর রহমান: নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপের আগ্রহ নেই সরকারের। সঙ্কট সমাধানে বিকল্প চিন্তা নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল ও সরকার। আগামী ২৪শে অক্টোবরের আগেই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরা হবে। সরকারের সার্বিক অবস্থান ও নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাখ্যাসহ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও ভাষণের বিষয়বস্তু ও দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ পরিস্থিতির আলোকে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। এ ভাষণেই নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হবে। এর আগে বিরোধী দলের সঙ্গে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই ক্ষমতাসীন দল ও সরকারে। তবে দু’দলের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতার বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন নেতারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, দু’দলের শীর্ষ পর্যায় ছাড়া আলোচনা হলে তা কার্যকর হবে না। এ কারণে মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। নেতারা জানিয়েছেন, শীর্ষ নেতৃত্ব সমঝোতার মনোভাব পোষণ করলে সংবিধানের মধ্য থেকে নির্বাচন পদ্ধতি ও সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমঝোতায় পৌঁছতে পারলে সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন করা সম্ভব। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অতীতে সঙ্কট সমাধানের জন্য মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এতে কোন ফল আসেনি। তাই এখন এ ধরনের বৈঠক থেকেও কোন সমাধান আসবে না। এ ছাড়া সংলাপের জন্য বিরোধী নেত্রীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছিলেন মে মাসে। কিন্তু বিরোধী নেত্রী তাতে সাড়া না দিয়ে হেফাজতকে উসকে দিয়েছিলেন। তবে এখনও এ সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। যদি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর মধ্যে আলোচনা হয় তাহলে হয়তো একটি সমাধান বের হয়ে আসতে পারে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলকেই আগ্রহ দেখাতে হবে। দলের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আলোচনার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের মাধ্যমেই সমাধানের একটি দিকনির্দেশনা তুলে ধরবেন। এতে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা থাকবে। যাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল সমঝোতায় আসতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের নির্ধারিত দিনক্ষণের বিষয়ে দলের কোন সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, যেহেতু নির্বাচন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে দিকনির্দেশনা থাকবে তাই তা ২৪শে অক্টোবরের আগেই দেয়া হবে। তবে এখনও ভাষণের বিষয়বস্তু ও দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি। আগামী রোববার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকদের এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বিষয়বস্তু ও দলের করণীয় চূড়ান্ত করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সঙ্কট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্য সব ধরনের বিকল্প নিয়ে চিন্তা করছেন। দলের নেতাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামতও নিচ্ছেন। তবে তার পক্ষ থেকে এখনও কোন ধরনের মনোভাব পোষণ করেননি। সূত্র জানায়, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে বর্তমান মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। তবে রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ২৪শে অক্টোবর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো পরিচালনা করবে। তবে এ ধরনের সরকার পরিচালনার কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে সংসদের ভোটের অনুপাতে দলগুলো প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ধরনের সরকার গঠন হলে এ সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় সংসদের স্পিকারকে বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। সংবিধানের আলোকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে বলে নেতারা মনে করছেন। সর্বশেষ সঙ্কট সমাধানে দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে চীনা রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে। বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলে বিরোধী নেত্রীও তাতে সায় দেন। তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তারা আলোচনার বিষয়ে আগ্রহী। কিন্তু কিভাবে আলোচনার সূত্রপাত হবে এ নিয়ে স্পষ্ট কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। চীনা রাষ্ট্রদূত গতকালও এক অনুষ্ঠানে সঙ্কট সমাধানে দুই দলের সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে সংলাপ আহ্বান জানিয়ে দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। একই আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্রের দূতরাও সংলাপের তাগিদ দেন। যদিও এ পর্যন্ত সংলাপের বিষয়ে দুই জোটের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোন সাড়া মেলেনি।
২৫শে অক্টোবর থেকে মাঠ দখলে পরিকল্পনা: বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবিলায় আগামী ২৫শে অক্টোবর থেকে মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলের কেন্দ্র ও ইউনিটভিত্তিক নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার কাজ চলছে। বিরোধী দলের সংগ্রাম কমিটির বিপরীতে সরকারি দলও কমিটি গঠন করছে। ইতিমধ্যে রাজধানীতে দেড় হাজার কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ঈদের পর ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীদের সার্বক্ষণিকভাবে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পাড়া-মহল্লায় দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের তৎপর থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ বৈঠক থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। আজ আবার বর্ধিত সভা করবে নগর আওয়ামী লীগ। সভায় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ওয়ার্ড নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগকেও মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে আগামী রোববার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক থেকে দলের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করে সারা দেশে নির্দেশনা পাঠানো হবে।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment