জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সেনাবাহিনী নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।

জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সেনাবাহিনী নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্যান্য আইনশৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। ফলে সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়।


গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা জানিয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ২৯টি নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত নেটওয়ার্ক ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)। অনুষ্ঠানে সংগঠনটির শীর্ষ নেত্রী তালেয়া রেহমান, বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল, রোখসানা খন্দকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি পরিচালিত এ জরিপের ফল প্রকাশ করে ইডব্লিউজি বলছে, দেশের ১১৮টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পরিচালিত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৪ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সেনাবাহিনী নিয়োগ ছাড়া বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।এর কারণ হিসেবে ওই উত্তরদাতাদের ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন, সেনাবাহিনী ছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় যথেষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ আবার এও মনে করেন যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেনাবাহিনী ছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়।গতকাল দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে এই জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনের পরিচালক আবদুল আলিম জানিয়েছেন, আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রাক-নির্বাচনী পরিস্থিতি, প্রচারকাল এবং নির্বাচন-পরবর্তী পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য তারা ৫৫টি জেলার ১১৮টি সংসদীয় এলাকানির্বাচিত করেছেন, যেখানে তাদের কয়েক হাজার কর্মী কাজ করবেন।তিনি জানান, গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই ১১৮টি সংসদীয় এলাকায় পরিচালিত জরিপে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা, নির্বাচনী আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী ইত্যাদিসহ মোট নয়টি প্রশ্ন করেছিলেন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। আর এই জরিপে সমাজের নানা শ্রেণী পেশার প্রায় ১৮শ’ মানুষ অংশ নেন।জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫ শতাংশ মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন সবশেষ যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে, সেখানে কোনো দল বা পক্ষের প্রতি আনুগত্য প্রাধান্য পেয়েছে।নির্বাচনী আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী প্রসঙ্গে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য সশস্ত্র সেনাবাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সেনাবাহিনীকে বাদ দেয়ার বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন।উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সেনাবাহিনী নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ বলে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হলেও ২০০১ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সেনাবাহিনী নিয়োগের বিষয়টি প্রথমবারের মতো নির্বাচনী আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে এটি পরিবর্তন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সেনাবাহিনীকে বাদ দেয়া হয়। আর চলতি বছর বর্তমান নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে যে সংশোধনী এনেছে, সেখানেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে রাখা হয়নি।জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে দেশে পোস্টার নিয়ন্ত্রণ আইন করা হলেও অধিকাংশ মানুষই এটা জানেন না। পোস্টার বা দেয়াল লিখনের জন্য নির্ধারিত জায়গা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ১১৮টি সংসদীয় এলাকার মধ্যে মাত্র আটটি এলাকায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানোর জন্য নির্ধারিত স্থান খুঁজে পেয়েছে।ভোট চাওয়ার জন্য মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করেছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীও তার সরকারি বাসভবন গণভবনে নিজ দলের বিভিন্ন জেলা কমিটির সভা করে তার দলের পক্ষে ভোট চাইছেন।গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, উপজেলা, থানা পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোয় গড়ে মাত্র ৮ দশমিক ১ শতাংশ নারী সদস্য আছেন। আর জেলা পর্যায়ে এই হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment