গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগি্নকাণ্ড ঘটেছে। রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত কারখানার একজন কর্মকর্তাসহ ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারখানার দুটি দোতলা এবং একটি তিনতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভবনে থাকা যন্ত্রপাতি, সুতা, তৈরি পোশাকসহ সব মালামাল পুড়ে গেছে। হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ৫০ শ্রমিক আহত হয়েছে।শ্রীপুরের বেরাইদেরচালা এলাকার পলপল গ্রুপের আসওয়াদ কম্পোজিট কারখানায় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে প্রথম পালার কাজ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে আগুন লাগে। তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ডায়িং বিভাগের ভেজা কাপড় শুকানোর যন্ত্রের তাপ নির্গমনের পাইপ ফেটে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।তবে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আকতারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এ মুহূর্তে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছেন না।ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহনেওয়াজ দিলরুবা। তিনি জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিনকে প্রধান করে গঠন করা এ কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক রফিক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অগি্নকাণ্ডের পর কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (নিটিং) রাশেদুল ইসলাম, ফিডারম্যান নাঈম মিয়া, শ্রমিক রাজুসহ ৯জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রাশেদুলের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বেলবাড়ী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নজরুল ইসলাম। রাজু কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাঠি গামের মুগুল মিস্তিরির ছেলে। অন্যজনের গ্রামের ঠিকানা জানা যায়নি।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুটি ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তখনো পর্যন্ত তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছিল। ওই তলার ডায়িং সেকশনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর সেখান থেকে ৯টি পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন ভালুকা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অফিসার সাজেদুল কবীর জোয়ারদার। গাজীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার সনজিৎ কুমারও ৯টি লাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।ওই সময় কারখানার আশপাশে নিখোঁজদের স্বজনরা আহাজারি করছিল। তারা বলছিল, ওই লাশগুলোর মধ্যে তাদের স্বজনদের লাশও আছে।কারখানার নিটিং বিভাগের শ্রমিক জুলহাস জানান, তাঁর ছোট ভাইও নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ থাকা কয়েক ব্যক্তির নাম জানা গেছে, স্বজনদের দাবি অনুযায়ী তাঁরা নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন নিটিং বিভাগের কর্মী রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ধলাপাড়া গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে রুবেল এবং পীরগঞ্জ উপজেলার বেলবাড়ী গ্রামের সফিউর রহমানের ছেলে খলিলুর রহমান।গুরুতর আহত ১৫ জনকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা একে মেমোরিয়াল ও বিল্লাল মাস্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।শ্রমিকরা জানায়, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আগুন লাগলেও গাজীপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসেছেন সোয়া ৭টার দিকে। ২০০ গজ দূরে ফায়ার সার্ভিসের ওই গাড়ির তেল ফুরিয়ে যায়। সেটিকে ঠেলে তাঁরা কারখানা পর্যন্ত নিয়ে আসেন। এরপর একে একে ভালুকা, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, উত্তরা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসেন।কারখানার ডায়িং বিভাগের শিফট ইনচার্জ জুয়েল রানা বলেন, তাঁর বিভাগের ভেজা কাপড় শুকানোর যে যন্ত্র রয়েছে সেটা থেকে তাপ নির্গমন পাইপ ফেটে আগুন লাগতে পারে।কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা জানায়, কারখানায় 'এ' (প্রথম) শিফটের উৎপাদন চলাকালে দ্বিতীয় তলায় ডায়িং ফ্লোর থেকে সুতায় আগুন লেগে পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে আগুন কারখানার বিভিন্ন তলায় ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর শ্রমিকরা ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে। কারখানার সীমানার বাইরে ১০০ গজ দূর পর্যন্ত অগি্নস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ায় শ্রমিকসহ স্থানীয় লোকজন আগুন নেভাতে পারেনি। কারখানার নিজস্ব অগি্ননির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও দক্ষতা না থাকায় কাজে লাগাতে পারেনি কর্মচারীরা।ওই সময় দোতলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় কারখানার পরিচালক এমদাদুল হকসহ কর্মকর্তারা সাপ্তাহিক উৎপাদন-সংক্রান্ত বৈঠক করছিলেন।শ্রমিকরা আরো জানায়, আগুন লাগার পর বিভিন্ন ফ্লোরে কর্মরত শ্রমিকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রাণভয়ে চিৎকার করতে করতে বাইরে বের হয়ে আসে। হুড়াহুড়ি ও আগুনের তাপে কারখানার পরিচালকসহ অন্তত ৫০ শ্রমিক আহত হয়।রাত ১২টার দিকে কারখানার পরিচালক এমদাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। তবে আগুন নেভানোর পর ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করা হবে। তিনি জানান, নিহতদের দাফনসহ অন্যান্য ব্যয় কারখানা কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এ ছাড়া সরকারি বিধি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।উল্লেখ্য, এর আগে সাভারের তাজরীন ফ্যাশনসে অগি্নকাণ্ডে কয়েক শ শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। গাজীপুরেও এর আগে পোশাক কারখানায় আগুনে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
গাজীপুরে পোশাক কারখানায় আগুনে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
-গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগি্নকাণ্ড ঘটেছে। রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত কারখানার একজন কর্মকর্তাসহ ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারখানার দুটি দোতলা এবং একটি তিনতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভবনে থাকা যন্ত্রপাতি, সুতা, তৈরি পোশাকসহ সব মালামাল পুড়ে গেছে। হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ৫০ শ্রমিক আহত হয়েছে।শ্রীপুরের বেরাইদেরচালা এলাকার পলপল গ্রুপের আসওয়াদ কম্পোজিট কারখানায় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে প্রথম পালার কাজ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে আগুন লাগে। তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ডায়িং বিভাগের ভেজা কাপড় শুকানোর যন্ত্রের তাপ নির্গমনের পাইপ ফেটে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।তবে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আকতারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এ মুহূর্তে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছেন না।ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহনেওয়াজ দিলরুবা। তিনি জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিনকে প্রধান করে গঠন করা এ কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক রফিক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অগি্নকাণ্ডের পর কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (নিটিং) রাশেদুল ইসলাম, ফিডারম্যান নাঈম মিয়া, শ্রমিক রাজুসহ ৯জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রাশেদুলের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বেলবাড়ী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নজরুল ইসলাম। রাজু কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাঠি গামের মুগুল মিস্তিরির ছেলে। অন্যজনের গ্রামের ঠিকানা জানা যায়নি।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুটি ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তখনো পর্যন্ত তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছিল। ওই তলার ডায়িং সেকশনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর সেখান থেকে ৯টি পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন ভালুকা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অফিসার সাজেদুল কবীর জোয়ারদার। গাজীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার সনজিৎ কুমারও ৯টি লাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।ওই সময় কারখানার আশপাশে নিখোঁজদের স্বজনরা আহাজারি করছিল। তারা বলছিল, ওই লাশগুলোর মধ্যে তাদের স্বজনদের লাশও আছে।কারখানার নিটিং বিভাগের শ্রমিক জুলহাস জানান, তাঁর ছোট ভাইও নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ থাকা কয়েক ব্যক্তির নাম জানা গেছে, স্বজনদের দাবি অনুযায়ী তাঁরা নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন নিটিং বিভাগের কর্মী রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ধলাপাড়া গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে রুবেল এবং পীরগঞ্জ উপজেলার বেলবাড়ী গ্রামের সফিউর রহমানের ছেলে খলিলুর রহমান।গুরুতর আহত ১৫ জনকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা একে মেমোরিয়াল ও বিল্লাল মাস্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।শ্রমিকরা জানায়, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আগুন লাগলেও গাজীপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসেছেন সোয়া ৭টার দিকে। ২০০ গজ দূরে ফায়ার সার্ভিসের ওই গাড়ির তেল ফুরিয়ে যায়। সেটিকে ঠেলে তাঁরা কারখানা পর্যন্ত নিয়ে আসেন। এরপর একে একে ভালুকা, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, উত্তরা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসেন।কারখানার ডায়িং বিভাগের শিফট ইনচার্জ জুয়েল রানা বলেন, তাঁর বিভাগের ভেজা কাপড় শুকানোর যে যন্ত্র রয়েছে সেটা থেকে তাপ নির্গমন পাইপ ফেটে আগুন লাগতে পারে।কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা জানায়, কারখানায় 'এ' (প্রথম) শিফটের উৎপাদন চলাকালে দ্বিতীয় তলায় ডায়িং ফ্লোর থেকে সুতায় আগুন লেগে পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে আগুন কারখানার বিভিন্ন তলায় ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর শ্রমিকরা ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে। কারখানার সীমানার বাইরে ১০০ গজ দূর পর্যন্ত অগি্নস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ায় শ্রমিকসহ স্থানীয় লোকজন আগুন নেভাতে পারেনি। কারখানার নিজস্ব অগি্ননির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও দক্ষতা না থাকায় কাজে লাগাতে পারেনি কর্মচারীরা।ওই সময় দোতলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় কারখানার পরিচালক এমদাদুল হকসহ কর্মকর্তারা সাপ্তাহিক উৎপাদন-সংক্রান্ত বৈঠক করছিলেন।শ্রমিকরা আরো জানায়, আগুন লাগার পর বিভিন্ন ফ্লোরে কর্মরত শ্রমিকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রাণভয়ে চিৎকার করতে করতে বাইরে বের হয়ে আসে। হুড়াহুড়ি ও আগুনের তাপে কারখানার পরিচালকসহ অন্তত ৫০ শ্রমিক আহত হয়।রাত ১২টার দিকে কারখানার পরিচালক এমদাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। তবে আগুন নেভানোর পর ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করা হবে। তিনি জানান, নিহতদের দাফনসহ অন্যান্য ব্যয় কারখানা কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এ ছাড়া সরকারি বিধি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।উল্লেখ্য, এর আগে সাভারের তাজরীন ফ্যাশনসে অগি্নকাণ্ডে কয়েক শ শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। গাজীপুরেও এর আগে পোশাক কারখানায় আগুনে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন