প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুর্নীতির প্রমাণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুর্নীতির প্রমাণ শিগগিরই প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। জয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায় এসেছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বলেছে, তিনি কালেকশন এজেন্সি (চাঁদাবাজি বা ঘুষ নেয়ার সংস্থা) খুলেছেন। শিগগিরই তার সব দুর্নীতির তথ্য হাতে পাওয়া যাবে জানিয়ে বলা হয়েছে, হাতে এলেই এসব প্রমাণ প্রকাশ করা হবে।স্থানীয় সময় রোববার রাতে নিউইয়র্কের ফুড কোর্টে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতারা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সজীদ ওয়াজেদ জয় কালেকশন এজেন্সি খুলেছেন। এর মাধ্যমেই ঘনিষ্ঠজনদের ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। জয়ের দুর্নীতির প্রমাণসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আমার দেশ সম্পাদককে ১০ মাস জেল খাটতে হয়েছে। জয়ের দুর্নীতির আরও প্রমাণ আমরা পাবো। হাতে পেলেই তা প্রকাশ করা হবে।’ দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টির জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে বিএনপি নেতারা বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী মিথ্যুক হিসেবে প্রমাণিত। সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে কলঙ্কিত করেছেন। এমন প্রতারক প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।’
সংবাদ সম্মেলনে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, এ দাবিতে ২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র কনস্যুলার অফিস ঘেরাও করা হবে। এরপরও সমঝোতায় না ফিরলে বিশ্বের সব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা গিয়াস আহমেদ ও জিল্লুর রহমান জিল্লু। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ সম্রাট।আবদুল লতিফ সম্রাট বলেন, একদলীয় বাকশালের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন শেখ হাসিনা। জনদাবিতে চলমান আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে তিনি র্যাব-পুলিশের নির্যাতন সেল খুলেছেন। সরকারি খরচে সভার আয়োজন করে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা ২৪ অক্টোবরের পর মাঠ দখলের হুমকি দিচ্ছেন। এই বেপরোয়া আচরণের জন্যই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দরকার। তিনি বলেন, সরকার সমঝোতায় না এসে একদিনও মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করলে বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
গিয়াস আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছেন। গণমাধ্যমের রিপোর্টের সূত্র ধরে আমরা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছি। জাতিসংঘ, সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন এবং সাউথ-সাউথ নিউজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে, ২০১১ সালে বাংলাদেশ সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। ২০১৩ সালে এই অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের তালিকায় শেখ হাসিনা কিংবা বাংলাদেশের নাম নেই। ১২ ও ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকার কোথাও তার নাম পাবেন না।
তিনি বলেন, মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জনগণের কাছে মিথ্যাচার ধরা পড়ায় আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে শেখ হাসিনার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির সংবাদটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি। অবিলম্বে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে অপরাধের দায় স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তিনি শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড পাননি এবং এটি জাতিসংঘের কোনো পুরস্কার নয়  এরপর আরও কিছু গণমাধ্যমও খবরটি প্রকাশ করে। সর্বশেষ গত ১৩ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড জাতিসংঘ প্রদত্ত পদক নয় কিংবা এটি জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অন্য কোন সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত কোনো পুরস্কারও নয় বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ সদর দফতর। এছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ বছরের সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড পাননি বলেও জানিয়েছে এই পুরস্কারের দুই উদ্যোক্তা সংগঠন সাউথ সাউথ নিউজ ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো-অপারেশন (আইওএসএসসি)। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জনকারী দেশগুলোকে উত্সাহ প্রদানের লক্ষ্যে তাদের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের কয়েকটি অঙ্গ সংস্থার সহযোগিতায় সাউথ সাউথ নিউজ নামের নিউইয়র্কের একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এ পুরস্কারটি দেয়া হয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।’প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগী মুখপাত্র এবং এশিয়ার দেশগুলোর বিষয়ে দায়িত্ব পালনকারী মোরানা সং বলেন, সাউথ সাউথ নিউজ এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজনে জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) অন্য আরও কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে মিলে সাউথ সাউথ নিউজকে সাহায্য করে থাকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)-এর নিউইয়র্কস্থ লিয়াজোঁ অফিসের প্রধান গ্যারি ফাউলি গতকাল এক লিখিত বার্তায় এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রথমেই বলে রাখা ভালো ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’ জাতিসংঘের কোনো পদক নয়। এর উদ্যোক্তা সাউথ সাউথ নিউজ। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জনকারী দেশগুলোকে উত্সাহ প্রদানের লক্ষ্যে তাদের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সাউথ সাউথ নিউজের পক্ষ থেকে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।’
গিয়াস আহমেদ আরও বলেন, এই মিথ্যুক, প্রতারক, দুর্নীতিবাজ ও খুনি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। অবিলম্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় যেভাবে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদ ও এক-এগারো সরকারকে বিদায় জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনাকেও একইভাবে গদিচ্যুত করা হবে।
জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, শেখ হাসিনার সরকার দেশকে একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। ইলিয়াস আলীসহ অসংখ্য বিরোধী নেতাকে গুম, খুন করেছে। ১৯ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। জয়সহ প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের দুর্নীতি প্রকাশ করায় আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ১০ মাস জেল খাটতে হয়েছে। সত্য প্রকাশের দায়ে গত ৬ মাস ধরে তাকে কারাবন্দি রাখা হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের কারাবন্দিত্ব গণমাধ্যমে ভয়ের শাসনের দৃষ্টান্ত। তিনি আরও বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশে ডাকাত পড়েছে। প্রবাসের সব বাংলাদেশী মিলে এই ডাকাত তাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুর্নীতির খতিয়ান প্রমাণসহ উপস্থাপনের ঘোষণা দিয়ে জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, জয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ ৫০০ মিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে জয় কালেকশন এজেন্সি খুলেছেন। তার সব দুর্নীতির ডকুমেন্ট আমরা পাবো। হাতে এলেই এসব প্রমাণ প্রকাশ করা হবে।
অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় আন্দোলনের তীব্রতা কঠোর আকার ধারণ করবে। হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাপিটাল হিল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এশিয়া—সর্বত্র আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা আলহাজ সোলায়মান ভুঁইয়া, হজরত আলী, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মনিরুল ইসলাম, ইলিয়াস মাস্টার, শিক্ষাবিদ ড. শওকত আলী, আজাদ বাকির, আনোয়ারুল ইসলাম, আবু সাঈদ আহমেদ, এবাদ চৌধুরী, আবদুল বাতেন, আতাউর রহমান আতা, সাবেক ছাত্রনেতা মাইনুল ইসলাম মহিদ, একে আজাদ, সোহরাব হোসেন, সাদি মিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সৈয়দ রেজা, আবদুর রহমান, শাহাদাত হোসেন রাজু, রাফেল তালুকদার, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, আফসানা আমিন, আমানত হোসেন আমান, বিল্লাল চৌধুরী, শেখ হায়দার আলী, নুরুল আমিন পলাশ, এমরান শাহরন, আতিকুল হক আহাদ, আবদুল মান্নাফ, মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন, মিজানুর রহমান, ফারুক হোসেন মজুমদার, এম এ আহাদ, আমিনুল ইসলাম স্বপন, মো. কায়সার, মোহাম্মদ আলী, দেলোয়ার হোসেন শিপন, আবুল কাশেম, আবদুল কাদের, মেজবাহউজ্জামান, আমজাদ হোসেন, মোহাম্মদ খোলকু প্রমুখ। মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানের স্পন্সর ছিলেন তাঁতী দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মনিরুল ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নতুন কমিটি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নেতারা বলেন, ‘হাইকমান্ড যখন যেভাবে ভালো মনে করবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি ঘোষণা দেবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলবেই।’
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment