এই সেই চিঠিনির্বাচনকালীন
সরকার নিয়ে সঙ্কট নিরসনে চিঠি আর ফোনালাপের মধ্য দিয়ে নাটকীয় গতি পেয়েছে
রাজনীতির চাকা। দশম সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের দিনগুলোয় রাষ্ট্রযন্ত্র কে
চালাবে- তা নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব নিয়ে যখন
সারাদেশে তুমুল আলোচনা, তখনই শুরু হয়েছে বরফ গলা।বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, সঙ্কট নিরসনে দ্রুত
আলোচনা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ক্ষমতাসীনদের আহ্বান জানিয়েছে
বিরোধী দল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওই চিঠি সোমবার
সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল
ইসলামের বাড়িতে পৌছে দেন দলের তিন নেতা। একই সময়ে গুলশানে সংবাদ সম্মেলন
করে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান ফখরুল। আর সংলাপের এই উদ্যোগ নাটকীয় মাত্রা পায় সৈয়দ আশরাফের একটি ফোনকলে। বিএনপির
যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক ও
সংসদ সদস্য শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী চিঠি নিয়ে আশরাফের বাড়িতে পৌঁছান
বেলা সোয়া ১১টার পর। আর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মির্জা
ফখরুলের সংবাদ সম্মেলন শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টায়।
স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে সরকারের সমালোচনার মধ্য দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন ফখরুল। সোমবার রাতে নয়া পল্টনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের একটি মাইক্রোবাসে পুলিশি হামলার অভিযোগ এনে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সহ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে আটকের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ফখরুল অভিযোগ করেন, বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব দেয়ার পরপরই পুলিশের এ ধরনের আচরণে প্রমাণ হয়েছে যে সরকার সমঝোতা চায় না। এরপর সভা সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ জনসভা করতে চাই। আমাদের ঘোষিত ২৫ অক্টোবরের জনসভাকে হুমকির মুখে ফেলবেন না। আমরা আশা করি সরকার এই নিশেষধাজ্ঞা তুলে নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার পথকে উন্মুক্ত করবে।'সংবাদ সম্মেলনের এই পর্যায়ে এসে পাশে এসে দাঁড়ানো ব্যক্তিগত সহকারী ফখরুলের দিকে এগিয়ে দেন ফোন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা ও উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য থামিয়ে ফোন কানে দিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে বিএনপির মুখপাত্র বলে ওঠেন, 'সস্নামালিকুম ভাই।'
টেলিভিশনে সরাসরি সমপ্রচারে চোখ রাখা দেশের মানুষের সামনেই মিনিটখানেক চলে এই নাটকীয় কথোপকথন। এ পাশ থেকে ফখরুলকে বলতে শোনা যায়- 'জি্ব ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন? জি্ব, জি্ব। আচ্ছা আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।'আমরা আশা করি, আপনারা এটাকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনাটা শুরু করবেন। আমরা এগিয়ে এসেছি। আপনারাও এগিয়ে আসবেন। 'থ্যাংক ইউ।'
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকসহ অনেকেই ততক্ষণে বুঝে গেছেন, ফোনের ওপাশে এতক্ষণ কথা বলছিলেন, আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
ফোন রেখে মির্জা ফখরুল হাসিমুখে হাত নেড়ে ইশারা দেন- 'হয়ে গেছে'। তার সংবাদ সম্মেলনের সুরও বদলে যায়। তিনি বলেন, 'আমার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফ সাহেবের এখনই কথা হয়েছে। টেলিফোনের কথাবার্তার সব কিছুই আপনারা শুনেছেন। তিনি চিঠিটি কিছুক্ষণ আগে গ্রহণ করেছেন। উনি চিঠির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফ আমাকে জানিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিনাজপুরে ট্র্যাভেল করছেন। এই চিঠিটি তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন।ফখরুল আশা প্রকাশ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে তার চিঠির ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে। রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে সরকার 'ইতিবাচক' ভূমিকা রাখবে।এদিকে গুলশানের এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই মিন্টো রোডে সৈয়দ আশরাফের বাসায় বসে ফখরুলের চিঠি পড়ে শোনান বরকত উল্লাহ বুলু্। ১৩ মিনিটের মধ্যে চিঠি হস্তান্তর পর্ব শেষ করে বাইরে এসে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদেরও চিঠির বক্তব্য পড়ে শোনান এই বিএনপি নেতা।চিঠিতে বলা হয়, 'গত ২১ অক্টোবর সংসদে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তার বিবেচনার জন্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেছেন। প্রস্তাবের অংশটুকু আপনার কাছে পাঠালাম।' 'এ বিষয়ে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে আপনাকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।'
এদিকে আওয়ামী লীগও বুধবার সকাল ১১টায় ধানম-িতে দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। ওই সংবাদ সম্মেলনেই বিএনপির আহ্বানের জবাব আসতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনমনে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যেই গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সরকারের জন্য বিরোধী দলের কাছে নামও চান তিনি।প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তিন দিন পর সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রস্তাব নাকচ করেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এর বদলে একজন 'সম্মানিত নাগরিকের' নেতৃত্বে সাবেক ১০ উপদেষ্টাকে নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৯৯৬ ও ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে ১০ জনকে নিয়ে এ সরকার হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি ৫টি করে নাম প্রস্তাব করবে।আর ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের 'ঐক্যমতের ভিত্তিতে' সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন 'সম্মানিত নাগরিককে' এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হবে।'শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে' প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বিরোধীদলীয় নেতা।খালেদার সংবাদ সম্মেলনের পর সোমবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাস্ত্রর রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, যিনি বরাবরই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের তাগিদ দিয়ে আসছেন।বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতাও আজ বক্তব্য রেখেছেন। আমরা আশাবাদী দুই নেত্রীর বক্তব্যে আলোচনার দ্বার উন্মোচিত হবে।' সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এই সময়ে সরকারে থাকবে আওয়ামী লীগ, সংসদও বহাল থাকবে, যা নিয়ে বিএনপি ও শরিকদের আপত্তি।নির্বাচনের আগে কবে সংসদ ভেঙে দেয়া হবে এবং সংসদের অধিবেশন কবে শেষ হবে তা নিয়েও দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান বিপরীতমুখী। তিন মাসের জন্য এসে বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর থাকা এবং দুর্নীতির অভিযোগে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রীসহ বহু রাজনীতিবিদকে জেলে পাঠানোর উদাহরণ তুলে ধরে 'অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক' শাসনের বিরোধিতা করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন 'নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য' হবে না- এই যুক্তিতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি করে আসছেন খালেদা। দুই নেত্রীর একজন ভাষণ দিয়ে এবং অন্যজন সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের 'প্রস্তাব' জাতির সামনে তুলে ধরলেও কার্যত দুজনেই তাদের আগের অবস্থানেই রয়েছেন। এই অচলাবস্থার নিরসনে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ দাতা দেশগুলো বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে থেকেও একাধিকবার আলোচনার আহ্বান জানানো হলেও এর আগে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আর দেখা যায়নি।
স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে সরকারের সমালোচনার মধ্য দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন ফখরুল। সোমবার রাতে নয়া পল্টনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের একটি মাইক্রোবাসে পুলিশি হামলার অভিযোগ এনে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সহ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে আটকের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ফখরুল অভিযোগ করেন, বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব দেয়ার পরপরই পুলিশের এ ধরনের আচরণে প্রমাণ হয়েছে যে সরকার সমঝোতা চায় না। এরপর সভা সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ জনসভা করতে চাই। আমাদের ঘোষিত ২৫ অক্টোবরের জনসভাকে হুমকির মুখে ফেলবেন না। আমরা আশা করি সরকার এই নিশেষধাজ্ঞা তুলে নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার পথকে উন্মুক্ত করবে।'সংবাদ সম্মেলনের এই পর্যায়ে এসে পাশে এসে দাঁড়ানো ব্যক্তিগত সহকারী ফখরুলের দিকে এগিয়ে দেন ফোন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা ও উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য থামিয়ে ফোন কানে দিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে বিএনপির মুখপাত্র বলে ওঠেন, 'সস্নামালিকুম ভাই।'
টেলিভিশনে সরাসরি সমপ্রচারে চোখ রাখা দেশের মানুষের সামনেই মিনিটখানেক চলে এই নাটকীয় কথোপকথন। এ পাশ থেকে ফখরুলকে বলতে শোনা যায়- 'জি্ব ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন? জি্ব, জি্ব। আচ্ছা আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।'আমরা আশা করি, আপনারা এটাকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনাটা শুরু করবেন। আমরা এগিয়ে এসেছি। আপনারাও এগিয়ে আসবেন। 'থ্যাংক ইউ।'
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকসহ অনেকেই ততক্ষণে বুঝে গেছেন, ফোনের ওপাশে এতক্ষণ কথা বলছিলেন, আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
ফোন রেখে মির্জা ফখরুল হাসিমুখে হাত নেড়ে ইশারা দেন- 'হয়ে গেছে'। তার সংবাদ সম্মেলনের সুরও বদলে যায়। তিনি বলেন, 'আমার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফ সাহেবের এখনই কথা হয়েছে। টেলিফোনের কথাবার্তার সব কিছুই আপনারা শুনেছেন। তিনি চিঠিটি কিছুক্ষণ আগে গ্রহণ করেছেন। উনি চিঠির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফ আমাকে জানিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিনাজপুরে ট্র্যাভেল করছেন। এই চিঠিটি তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন।ফখরুল আশা প্রকাশ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে তার চিঠির ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে। রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে সরকার 'ইতিবাচক' ভূমিকা রাখবে।এদিকে গুলশানের এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই মিন্টো রোডে সৈয়দ আশরাফের বাসায় বসে ফখরুলের চিঠি পড়ে শোনান বরকত উল্লাহ বুলু্। ১৩ মিনিটের মধ্যে চিঠি হস্তান্তর পর্ব শেষ করে বাইরে এসে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদেরও চিঠির বক্তব্য পড়ে শোনান এই বিএনপি নেতা।চিঠিতে বলা হয়, 'গত ২১ অক্টোবর সংসদে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তার বিবেচনার জন্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেছেন। প্রস্তাবের অংশটুকু আপনার কাছে পাঠালাম।' 'এ বিষয়ে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে আপনাকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।'
এদিকে আওয়ামী লীগও বুধবার সকাল ১১টায় ধানম-িতে দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। ওই সংবাদ সম্মেলনেই বিএনপির আহ্বানের জবাব আসতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনমনে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যেই গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সরকারের জন্য বিরোধী দলের কাছে নামও চান তিনি।প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তিন দিন পর সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রস্তাব নাকচ করেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এর বদলে একজন 'সম্মানিত নাগরিকের' নেতৃত্বে সাবেক ১০ উপদেষ্টাকে নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৯৯৬ ও ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে ১০ জনকে নিয়ে এ সরকার হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি ৫টি করে নাম প্রস্তাব করবে।আর ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের 'ঐক্যমতের ভিত্তিতে' সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন 'সম্মানিত নাগরিককে' এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হবে।'শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে' প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বিরোধীদলীয় নেতা।খালেদার সংবাদ সম্মেলনের পর সোমবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাস্ত্রর রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, যিনি বরাবরই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের তাগিদ দিয়ে আসছেন।বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতাও আজ বক্তব্য রেখেছেন। আমরা আশাবাদী দুই নেত্রীর বক্তব্যে আলোচনার দ্বার উন্মোচিত হবে।' সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এই সময়ে সরকারে থাকবে আওয়ামী লীগ, সংসদও বহাল থাকবে, যা নিয়ে বিএনপি ও শরিকদের আপত্তি।নির্বাচনের আগে কবে সংসদ ভেঙে দেয়া হবে এবং সংসদের অধিবেশন কবে শেষ হবে তা নিয়েও দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান বিপরীতমুখী। তিন মাসের জন্য এসে বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর থাকা এবং দুর্নীতির অভিযোগে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রীসহ বহু রাজনীতিবিদকে জেলে পাঠানোর উদাহরণ তুলে ধরে 'অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক' শাসনের বিরোধিতা করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন 'নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য' হবে না- এই যুক্তিতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি করে আসছেন খালেদা। দুই নেত্রীর একজন ভাষণ দিয়ে এবং অন্যজন সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের 'প্রস্তাব' জাতির সামনে তুলে ধরলেও কার্যত দুজনেই তাদের আগের অবস্থানেই রয়েছেন। এই অচলাবস্থার নিরসনে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ দাতা দেশগুলো বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে থেকেও একাধিকবার আলোচনার আহ্বান জানানো হলেও এর আগে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আর দেখা যায়নি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন