ফখরুলের চিঠি আশরাফের ফোন

অনেক দিন ধরেই আলোচনা ছিল দুই মহাসচিবের সংলাপ নিয়ে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তারা বসবেন, কথা বলবেন, চিঠি দেবেন এমন আলোচনাও ছিল। গতকাল কথা বলেছেন দু’জনে। চিঠিও দিয়েছেন একজন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল টেলিফোনে কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুলের পাঠানো চিঠি গ্রহণ করেছেন সৈয়দ আশরাফ। চিঠি পেয়ে তিনি ফোন করেছেন মির্জা ফখরুলকে। একজন আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যজন আশ্বাস দিয়েছেন। গতকাল দিনভর আলোচনায় ছিল এ দুই নেতার ফোনালাপ আর চিঠির বিষয়। তাদের কথোপকথনের পর চলমান সঙ্কট নিরসনে আশার আলোও দেখেছেন কেউ কেউ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হঠাৎ রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদল দুই দলের টানাপড়েনে বরফ গলারই ইঙ্গিত। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই নেত্রীর দেয়া প্রস্তাব পেশের পর দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা এ বিষয়ে একটি সমাধান নিয়ে আসতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। সোমবার রাতে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের সাবেক নেতা সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে গ্রেপ্তার ও বিরোধী নেত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে অপদস্ত করার বিষয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলন আহবান করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সকাল ১১টায় খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু আগেই মির্জা ফখরুলের চিঠি নিয়ে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল যায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের হেয়ার রোডের সরকারি বাসায়। ওই চিঠি হাতে পেয়েই সৈয়দ আশরাফ ফোন করেন মির্জা ফখরুলকে। ফখরুল তখন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনটি কয়েকটি টিভি চ্যানেল সরাসরি সমপ্রচার করছিল। এ সুবাদে ফখরুলের ফোনালাপটি সরাসরি দেখেছেন ও শুনেছেন অনেকে। উপস্থিত সাংবাদিকরাও ধরে নিয়েছিলেন ফখরুল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করেছেন। পরে ফখরুল নিজেই তা নিশ্চিত করেন।
নিজের মোবাইল ফোনে ওপ্রান্ত থেকে সৈয়দ আশরাফের ফোন দেখে হাসিমুখে তা গ্রহণ করেন মির্জা ফখরুল। ‘আস্‌সালামু আলাইকুম, কেমন আছেন ভাই’ বলে কথা শুরু করেন। ওপ্রান্ত থেকে সৈয়দ আশরাফ কুশল জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, জ্বী, ভাল।
চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি আশরাফ জানালেন ফখরুল বলেন, জ্বী, ভাই, চিঠি পাঠালাম, আশা করছি, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। আমরা এগিয়ে এসেছি.. আশা করি আপনারাও এগিয়ে আসবেন।পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল সৈয়দ আশরাফ ওপাশ থেকে কি বলেছেন তা জানান। তিনি বলেন, সৈয়দ আশরাফ চিঠির জন্য আমাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি দিনাজপুরে যাচ্ছেন। চিঠিটি সঙ্গে নিয়ে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফর করবেন তিনি, সে সময় চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা ও এ-সংশ্লিষ্ট আলোচনার প্রস্তাব দিয়েই এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে স্পষ্ট করেন ফখরুল। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় ফখরুলের পাশে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর, যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ।
এদিকে সৈয়দ আশরাফের বাসায় চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সংসদ সদস্য বরকতউল্লা বুলু ও শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এর আগে ১৮ই অক্টোবর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে পাল্টা প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া। এরপরই উভয় দলের মধ্যে বরফ গলা শুরু হয়।মির্জা ফখরুলের চিঠির শুরু সালাম দিয়ে। এতে বলা হয়, গত ২১.১০.১৩ই তারিখে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের লক্ষে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তার বিবেচনার জন্য সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবের অংশটুকু আপনার নিকট পাঠালাম। এ বিষয়ে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে আপনাকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। আজ আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া: সার্বিক বিষয়ে আজ প্রতিক্রিয়া জানাবে আওয়ামী লীগ। সকাল ১১টায় দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment