গাবতলীতে এভাবেই আটকে রাখা হচ্ছে ট্রাক। বাধ্য করা হচ্ছে গাবতলী হাটে পশু নামাতে

শুরুতেই পুলিশ ও মাস্তান সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছেন
কোরবানির পশুব্যবসায়ীরা। কোরবানির পশু নিয়ে পছন্দের হাটে যেতে পারছেন না
তারা। প্রান্তিক এসব ব্যবসায়ী বাধ্য হচ্ছেন সিন্ডিকেটের নির্ধারিত হাটে
যেতে। এ ব্যাপারে দায়িত্বরত পুলিশকে জিজ্ঞেস করা হলে তাদের জবাব‘পুলিশ
কমিশনারের নির্দেশ রয়েছে। যতক্ষণ গাবতলী পশুর হাট পরিপূর্ণ না হবে ততক্ষণ
ব্যবসায়ীরা পশু নিয়ে অন্য কোনো হাটে যেতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা
বলেছেন, ‘গাবতলী হাটে খরচ বেশি। এখানে পশু বিক্রি করে তাদের লাভ থাকবে না।’
এ দিকে পশুবাহী যানবাহন আটকে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন ট্রাকচালক ও
ব্যবসায়ীরা।
কুষ্টিয়ার মিরপুরের ১১ প্রান্তিক ব্যবসায়ী এসেছেন ১৮টি গরু নিয়ে। তাদের
অনেকেই একটি মাত্র গরুর মালিক। ঘরে পুষে চড়া দাম দিয়ে খাবার খাইয়ে
কোরবানির সময় ঢাকায় এসেছেন বেশি দামে বিক্রি করার আশায়। কিন্তু ঢাকায়
ঢুকতেই হোঁচট খেলেন ওই ব্যবসায়ীরা। আমিনবাজার ব্রিজ পার হতেই পুলিশ আটকে
দিলো গাড়ি। ব্যবসায়ীদের বলা হলো ঢাকায় গরু বিক্রি করতে হলে গাবতলী হাটে
নামতে হবে। অন্য কোনো হাটে যাওয়া যাবে না। ওই গরু ব্যবসায়ীদের ইচ্ছে তারা
গরু নিয়ে রহমতগঞ্জ যাবেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তারা ঢাকায় আসেন। বিকেল
সাড়ে ৩টা পর্যন্ত গাবতলী হাটের সামনের রাস্তায় তাদের গাড়ি আটকে রাখা
হয়। দায়িত্বরত এসআই খোকন জানালেন, তাদের ওপর নির্দেশ রয়েছে গাবতলী হাট
যতক্ষণে কানায় কানায় পূর্ণ না হবে ততক্ষণে কেউ গরু নিয়ে অন্য কোনো হাটে
যেতে পারবে না। এসব কথা জানালেন ব্যবসায়ী ওয়াহেদ, সাইদুল, খলিল, আজিবার ও
আলমসহ অন্যরা। তারা বলেছেন, গরু নিয়ে তারা রহমতগঞ্জ যেতে চেয়েছিলেন। এ
দিকে ট্রাকে বসে থাকতে তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে, ট্রাক ভাড়া বাড়ছে, অপর
দিকে নির্দিষ্ট সময়ে গরু বিক্রি করতে না পারায় তাদের খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
যশোর থেকে গরু নিয়ে আসা জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাকে বাধ্য করা হয়েছে
গাবতলীতে গরু নামাতে। রাতে এখানে আরো পাঁচটি ট্রাক থেকে গরু নামানো হয় বলে
জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন। থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ
কমিশনার নিজেই নির্দেশ দিয়েছেন গাবতলী হাট পূর্ণ না হলে অন্য হাটে গরু
যাবে না। এ ব্যাপারে ঢাকার পুলিশ কমিশনারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে
তিনি ফোন ধরেননি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে গাবতলী হাটে আসা গরু ছাগল, মহিষ, ভেড়া ছাড়াও উটও ছিল
চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে দামীদামি পশুগুলোকে সাজানো
হয়েছে রঙবেরঙের জরির মালা আর লাল কাপড় দিয়ে। প্রায় দেড় কিলোমিটার
এলাকাজুড়ে গাবতলী পশুর হাটে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার
হাজার পশু আসছে। আসছে ভারতীয় গরুও। ভারতীয় প্রতিটি গরু বাংলাদেশে
প্রবেশপথে সরকারি রাজস্ব ৫০০ টাকা ধার্য থাকলেও ঘাটে ঘাটে ব্যাপারীদের
চাঁদা দিতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা থেকে দুই ট্রাক ভারতীয় গরু নিয়ে আসা
ব্যাপারী কিসমত আলী অভিযোগ করেন, সাতক্ষীরা থেকে গাবতলী আসা পর্যন্ত
গরুপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। এসব চাঁদার মধ্যে
ট্রাফিক পুলিশদের প্রতি ট্রাক গরুর জন্য বিশেষ টোকেন নিতে পাঁচ হাজার করে
টাকা দিতে হয়েছে। এ ছাড়াও ফেরিতে ওঠার আগে ৩০০ টাকার স্থলে এক হাজার ২০০
টাকা দিতে হয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাট শ্রমিক লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
রয়েছে, তারা সেখানে বসে চাঁদা নিচ্ছেন। সেখান থেকে মানিকগঞ্জ আসার পর আবার
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। সর্বশেষ সাভারে
ট্রাফিক পুলিশ নিয়েছে ৩০০ টাকা। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির
সাধারণ সম্পাদক মো: রুস্তুম আলী খান বলেছেন, পরিবহন ব্যবসায়ীদের সাথে
প্রশাসনের যে বৈঠক হয়েছিল সেখানে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি
উচ্চারণ করা হয়। কিন্তু চাঁদাবাজি থামছে না। তিনি বলেন, ট্রাক ড্রাইভার ও
ব্যাপারী সবাই কোরবানির পশুর ট্রাকে চাঁদাবাজির অভিযোগ করছেন।
গাবতলী পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার চেয়ে দালালের সংখ্যা বেশি। পুরোদমে
শুরু না হলেও গড়ে প্রতিদিন আড়াই হাজার পশু বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন ৯
নম্বর হাসিল ঘরের সুপারভাইজার ইউসুফ। তিনি বলেন, আগামী শুক্রবার থেকে আশা
করি পুরোপুরি বেচাকেনা শুরু হবে। হাসিলের ব্যাপারে তিনি বলেন, এবারে হাজারে
৩৫ টাকা করে হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্য দিকে হাট ঘুরে দেখা গেছে, এক
হাজার টাকায় ৩৫ টাকা হাসিল ধার্য থাকলেও বেশির ভাগ হাসিলঘরে ঈদ বকশিশের
নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। শেওড়াপাড়া থেকে কোরবানির পশু কিনতে আসা
হানিফ সিকদার অভিযোগ করেন, ৫২ হাজার টাকায় কেনা গরু হাসিল এক হাজার ৮২০
টাকা হলেও তারা জোর করে দুই হাজার টাকা আদায় করেছেন। আবার গাবতলী সিগন্যাল
পার হওয়ার আগেই আরেকজন এসে বলেন, এই হাসিল রসিদ চলবে না। সেখানে সেই যুবক
আমার কাছ থেকে জোর করে আরো ২০০ টাকা রেখে দেয়। তিনি বলেন, আগে কখনো এমন
নাজেহাল হতে হয়নি। মেসার্স লুৎফর এন্টারপ্রাইজ গাবতলী পশুর হাটটি ইজারা
নেয়। হাসিল আদায়ের জন্য প্রায় দেড় শতাধিক লোক নিয়োগ দিয়েছে
প্রতিষ্ঠানটি।
এ দিকে রাজধানীর আরমানিটোলা, কমলাপুর, নয়াবাজার, পোস্তগোলা, ধুপখোলা,
রহমতগঞ্জ হাটে গরু আসতে দিচ্ছে না পুলিশ। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১১
অক্টোবর যাত্রাবাড়ী ফাইওভার উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে ওইসব
হাটে গরু কেনাবেচার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। গত সোমবার
রাতে আরমানিটোলা হাটে ৭০টির মতো গরু এসেছিল। গতকাল সকালে তা সরিয়ে দিয়েছে
পুলিশ। অন্যান্য হাটেও বেশি গরু এখনো আসেনি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন,
তাদেরকে ওইসব হাটে বসতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ বরাবর ১০-১২ দিন আগেই এসব হাট
গরু-ছাগলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এসব হাট যারা ইজারা নিয়েছেন তাদের এখন
মাথায় হাত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন