রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।



রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিতে বড় ধরনের আঘাত আসবে বলেও তাদের আশঙ্কা। একই কারণে চামড়া নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমাদের সময়কে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি মূল্যে বিক্রি হওয়ায় লাভবান হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ফড়িয়ারাও বেশি মূল্যেই ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন এমনটাই আশা পোস্তগোলার ফড়িয়াদের। তবে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর বেঁধে দেওয়া মূল্যের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি মূল্যে বেচা-কেনা হয়েছে এ বছর পশুর চামড়া। বিগত ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে এবারই চামড়ার মূল্য সবচেয়ে চড়া বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা।বাংলাদেশি চামড়ার মান ভালো হওয়ায় অনেক দেশই তাকিয়ে থাকেন এখানকার চামড়ার দিকে। ব্যবসায়ীরা রপ্তানিও করেন বেশ ভালো মূল্যে। গত বছরের তুলনায় এ বছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বছর রপ্তানি আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি করতে   পারবেন এমনটাই আশা রপ্তানিকারকদের। এদিকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা সিটির প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ চামড়া পোস্তা ও হাজারীবাগের ট্যানারিতে এসে পৌঁছেছে।  বাকি চামড়া বিভিন্ন জায়গায় লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে জাগ দেওয়া হয়েছে। এসব চামড়া কয়েকদিনের মধ্যেই দরদাম করে বিক্রি করা হবে। এখনও ঢাকার বাইরে থেকে তেমন চামড়া এসে পৌঁছেনি। বাইরে থেকে চামড়া আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। জানা গেছে, কোরবানির চামড়া বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানীতে প্রবেশ-নিষেধ থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে লবণ দিয়ে জাগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার চামড়ার চাপ গেলেই ঢাকার বাইরের চামড়া আসা শুরু হবে।  অভিযোগ উঠেছে, ভারত থেকে কিছু ব্যবসায়ী স্থানীয় ফড়িয়াদের সঙ্গে চুক্তি করে সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের পাঁয়তারা করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বেলাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, খুলনা, বেনাপোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকায় চামড়াপাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এলাকার স্থানীয়রা বেশি টাকার লোভে চামড়াপাচার করতে সাহায্য করছেন। চামড়ার মূল্য ওঠা-নামার পেছনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দায়ী বলেও মনে করেন তিনি।ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার পশু বেশি কোরবানি হওয়ায় চামড়ার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চামড়াপাচার রোধে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও কড়া নজর রাখতে হবে। চামড়াপাচার রোধ করা গেলে ট্যানারি মালিকরা যে পরিমাণ চামড়া ক্রয় করেছেন তাতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পোস্তগোলার চামড়া ব্যবসায়ী সজিব হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এ বছর চামড়ার মান ও মূল্য দুটোই ভালো। আশা করা যায়, কোনও ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে চামড়া ব্যবসায় ধস নামবে। তিনি বলেন, যেহেতু চামড়া পচনশীল পণ্য। এটা দীর্ঘদিন স্তূপ দিয়ে রাখা যায় না। কয়েক দিনের মধ্যেই পচন ধরে। রাজশাহীতে ফড়িয়াদের কাছে জিম্মি চামড়া ব্যবসায়ীরারাজশাহী প্রতিনিধি জানান, ঈদুল আজহা এলেই কোরবানির চামড়ায় দৃষ্টি দেন নিম্ন আয়ের মানুষ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীরা। চামড়া ও টাকা নিতে ঈদের দিন থেকেই মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষ বাড়ি-বাড়ি যান। এবারও তারা গেছেন, কিন্তু এবছর চামড়ার মূল্য তুলনামূলক কম হওয়ায় হতাশ হয়েছেন গরিব মানুষ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাগ্যে জুটেছে সামান্য টাকা। ফায়দা লুটেছে ফড়িয়ারা।তাই রাজশাহীতে এবছর গরিবের হকের টাকা চলে গেছে ফড়িয়া চামড়া ব্যবসায়ীদের পকেটে। মৌসুমি এই চামড়া ব্যবসায়ীরা শহরের বেশিরভাগ চামড়া কিনে নিয়েছে কমমূল্যে। গত বুধবার ঈদের দিন মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তারা ওইসব চামড়া পুরনো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছে চড়ামূল্যে। এভাবে প্রতিটি গরুর চামড়ায় তারা ৫-৬শ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করেছে। প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের দিন স্থানীয় ফড়িয়ারা তাদের এলাকায় ঢুকতেই দেয়নি। নিজেরা চামড়া কিনে বিকালে বিক্রি করেছে চড়ামূল্যে। তাই চামড়া কিনে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সহ-সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সদস্য সংখ্যা একশ। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা ২৫ হাজার গরু ও ৩০ হাজারের মতো ছাগল ও ভেড়ার চামড়া কিনেছেন। তবে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কারণে মহানগরীসহ জেলায় চামড়া কিনতে বাধার মুখোমুখি হয়েছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, গত কোরবানির ঈদে রাজশাহীতে প্রায় ৫৫ হাজার গরু ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এবার চামড়ার পরিমাণ কিছুটা কম। সাধারণ মানুষ ভালো মূল্য না পেলেও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা পাড়া-মহল্লায় ঢুকে কমমূল্যে চামড়া কিনে বেশিমূল্যে বিক্রি করে কয়েক ঘণ্টায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।শহর এলাকায় মূলত বিভিন্ন দলের স্থানীয় দাপুটে যুবকরাই চামড়া কিনেছে। ওইসব এলাকায় প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পাড়া-মহল্লায় এবার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে আড়াইশ টাকায়। কিন্তু ফড়িয়ারা প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে ওইসব চামড়া প্রতিটি বিক্রি করে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এতে তারা মোটা অঙ্কের লাভ করেছে। এভাবেই কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে চামড়া হাতবদলের কারণে গরিবের ভাগের টাকা চলে গেছে স্থানীয় যুবকদের পকেটে। এদিকে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, লবণও কিনে রেখেছিলেন। ফলে বসে না থেকে শেষ পর্যন্ত বেশিমূল্যেই তারা কিনেছেন। ওই চামড়ায় লাভ হবে কিনা সেটি নিয়ে এখন সংশয়ে রয়েছেন তারা।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment