নির্বাচনের সময় সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দিয়ে সে-মন্ত্রিসভার জন্য বিরোধীদলের সদস্যদের নাম চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমরা সকল দলকে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-আশঙ্কার মধ্যেই জাতির উদ্দেশে এই ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সম্প্রচার করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলের কাছে আমার প্রস্তাব, আমরা সকল দলের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। জনগণের শান্তি। এ জন্য বিরোধীদলের সদস্যদের নাম চেয়ে তিনি বলেন, তাই আমি বিরোধীদলের কাছে প্রস্তাব করছি, বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন, যাদের আমরা অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি। নির্বাচনে যেন কারও কোনও সন্দেহ না থাকে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করুক, তাই আমরা চাই।সরকারের গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি সংবিধান থেকে উদ্ধৃত করে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে নিজের অবস্থানের ব্যাখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী। ৯০ দিনের মধ্যে যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য সকল দলের সঙ্গে বিশেষ করে মহাজোটের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতিকে যথাসময়ে লিখিত পরামর্শ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ ক্ষেত্রে আমি বিরোধীদলের কাছেও পরামর্শ আশা করি।সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৭২(১) অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান। এছাড়া তিনি সংবিধানে ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদও উল্লেখ করেন। বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের হিসাব শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবনই আমার জীবনের একমাত্র কাম্য। আসুন, সংঘাতের পথ পরিহার করে সমঝোতার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করি। বিরোধীদলীয় নেতাকে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে জনগণের জান-মালের ক্ষতি করবেন না।
কোরআন শরিফ পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা বন্ধ করুন। মাদ্রাসাকে বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করে এতিম বাচ্চাদের লাশ বানানো বন্ধ করুন। ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম কখনই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অনুমোদন দেয় না। যারা নির্দোষ মানুষকে ধর্মের নামে হত্যা করে, তাদের চূড়ান্ত ঠিকানা হবে দোজখ। কাজেই, ছুরি, দা, খন্তা ও কুড়াল নিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য আমি বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আমি সংলাপে ডেকেছিলাম। দুঃখের বিষয় তার জবাবে তিনি আলটিমেটাম দিলেন। বললেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে ক্ষমতাচ্যুত ও দেশছাড়া করবেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জাতীয় সংসদে বিএনপি মুলতবি প্রস্তাব দিয়েও প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। বলেন, প্রয়োজনে আবারও জাতীয় সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দিন। সুস্পষ্টভাবে বলুন, আপনারা কী চান।শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। কঠোর হাতে জঙ্গিবাদ দমন করেছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শাসনামলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হত্যা-সন্ত্রাস-ধর্ষণ-লুটপাট-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দেশকে অন্ধকারের পথে ঠেলে দিয়েছিল। সেই দুঃসহ দহন-জ্বালার আতঙ্ক মানুষকে এখনও তাড়া করে ফেরে। হাওয়া ভবন নামে সরকারের ভেতরে আরেকটি সরকার এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। বিএনপির অপকর্মের কারণেই ১/১১ এসেছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন