রাজনৈতিক দলে যোগ দিলেই প্রার্থী


আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ
নেতাদের দলবদল এবং কালোটাকা দিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রার্থী হতে বাধা থাকছে না
সংসদ নির্বাচনে কেউ কোনো দল থেকে প্রার্থী হতে চাইলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলে অন্তত তিন বছর সদস্যপদে থাকতে হবে। এখন এই বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে এই বিধান তুলে দিয়ে বিল চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিলটি পাস হলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য দলবদলের সুযোগ তৈরি হবে এবং ব্যবসায়ীসহ যে কেউ যেকোনো দলে যোগ দিয়েই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।গতকাল বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আরপিও সংশোধন বিল, ২০১৩ সংসদে উত্থাপিত হয়। এরপর বিলটি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে দালাল আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।আরপিওর ১২/জে ধারায় প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা সম্পর্কে বলা আছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন থেকে পূর্ববর্তী তিন বছরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে নিরবচ্ছিন্ন সদস্যপদ না থাকলে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। তবে নতুন নিবন্ধিত দলের প্রার্থীদের জন্য এই বিধান প্রযোজ্য নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আরপিও সংশোধন করে এই বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইনটি সংসদে অনুমোদন পায়। তবে গতকাল সংসদীয় কমিটি আরপিও থেকে এই বিধান বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে বিল প্রস্তুত করেছে। চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস হতে পারে।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বি মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনভিজ্ঞ একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু নিবন্ধিত দলের ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কমিটির মতে, এ বিধান সংবিধান পরিপন্থী। এ জন্য বিধানটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।এর আগে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ আরপিও থেকে এই বিধান বাতিলের সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে কমিশন এই চিঠি আমলে নেয়নি। এরপর আরপিও থেকে একই ধারা বাতিলের জন্য জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক সংসদে একটি বেসরকারি বিলও এনেছিলেন। কিন্তু বেসরকারি বিল-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এটিকে বিবেচনায় নেয়নি।
নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলে ভাঙন, নেতাদের দলবদল ও কালোটাকার দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীদের প্রার্থী হওয়া রোধ করতে আরপিওতে এই বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলকে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে আনতে এ আইন করা হয়েছে। তখন সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই এটি করা হয়েছে। এখন কীভাবে সংবিধান পরিপন্থী হয়ে গেল?
শামসুল হুদা আরও বলেন, এই আইন না থাকলে নির্বাচনে অরাজনৈতিক ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীরা কালোটাকা ব্যয় করে মনোনয়ন কিনে নেবেন। এতে প্রকৃত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বঞ্চিত হবেন। এই সুযোগে নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্যের প্রকোপ বাড়বে।আরপিওর ১২ ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সরকারের চুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে এবং বিলখেলাপি হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। কমিটির আগের বৈঠকে আরপিও থেকে এই বিধান বাতিলের ব্যাপারে আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে কমিটি ওই দুটি বিধানে কোনো ধরনের সংশোধনী আনছে না।ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে গতকালের বৈঠকে কমিটির সদস্য আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, রহমত আলী, আবদুল মতিন খসরু, নুরুল ইসলাম সুজন ও ফজিলাতুন নেসা অংশ নেন।নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংঘটিত সহিংসতার দায় এড়াতে ‘নির্বাচনপূর্ব সময়’-এর সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে তা কমিয়ে আনার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচনপূর্ব সময়সীমার দিন গণনা শুরু হওয়ার কথা সংসদের মেয়াদ শেষ বা ভেঙে যাওয়ার দিন থেকে। কমিশন তফসিল ঘোষণার দিন থেকে এই দিন গণনা শুরু করতে চায়।এই বিধান হলে নির্বাচনী আচরণবিধি ৪০-৪৫ দিনের মতো কার্যকর থাকবে। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী আচরণবিধি ৯০ দিন বা তার বেশি সময় কার্যকর থাকার কথা।জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনপূর্ব সময়ে আচরণবিধি কার্যকর থাকবে। তফসিল ঘোষণার আগেই যাতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু না হয়, সে জন্য ২০০৮ সালে এ বিধান করা হয়। তবে বর্তমানে বিধানটি প্রযোজ্য নয়। কারণ, এটি করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতির আলোকে। তা ছাড়া আগের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সংসদের মেয়াদ শেষে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর পরবর্তী ১৪-১৫ দিনের জন্য প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন। কিন্তু প্রার্থীরা তার আগেই প্রচারণা শুরু করেন। এটি বন্ধ করার জন্য সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আচরণবিধি কার্যকর করার বিধান করা হয়েছিল। এখন সংবিধান যেভাবে আছে, তাতে নির্বাচনের পূর্ববর্তী ৯০ দিনকে নির্বাচনপূর্ব সময় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা এবং ২৭ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হওয়া উচিত
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment