বিস্তারিত রায় পড়তে এখানে ক্লিক করুনঘোষিত রায়ে প্রমাণিত ৯টি অভিযোগের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি, ৩টিতে ২০ বছর করে এবং বাকি ২টিতে ৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে সাকা চৌধুরীকে।
মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। মোট ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের মধ্যে সার-সংক্ষেপ পড়েন ট্রাইব্যুনাল।সকাল দশটা ৪৩ মিনিটে সূচনা বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর। তার এক মিনিটের বক্তব্য শেষ হলে রায়ের প্রথম অংশ পড়েন ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক। দ্বিতীয় অংশ পড়েন অপর সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। সবশেষে মূল রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম ফজলে কবীর। দুপুর একটা ১০ মিনিটে রায় ঘোষণা শেষ হয়।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ৩(২)(এ)(সি)(১)(জি)(এইচ) ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন বলে এসব অভিযোগে বলা হয়।প্রমাণিত ৭টি হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ এবং ৮ নম্বর অভিযোগে। এগুলো হচ্ছে মধ্য গহিরায় গণহত্যা (২নং অভিযোগ), গহিরা শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-মালিক অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা (৩নং অভিযোগ), চট্টগ্রামের জগৎমল্লপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে ৩২ হিন্দু নারী-পুরুষকে গণহারে হত্যা (৪নং অভিযোগ), সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্র ও অপর তিনজনকে হত্যা (৫নং অভিযোগ), ঊনসত্তরপাড়ায় ৬৯/৭০ জনকে গণহত্যা (৬নং অভিযোগ), রাউজান পৌরসভা এলাকার সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যা (৭নং অভিযোগ) এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার পুত্র শেখ আলমগীরকে হত্যার (৮নং অভিযোগ) অভিযোগ।আর প্রমাণিত অপহরণ ও নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ আনা হয়েছে ১৭নং অভিযোগে নিজাম উদ্দিন আহম্মদকে অপহরণ ও নির্যাতন এবং ১৮নং অভিযোগে সালেহউদ্দিন আহমদকে অপহরণ ও নির্যাতনের বিষয়ে।এগুলোর মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইবুনাল তার রায়ে। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তিনি পেয়েছেন ২০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ। ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে দেওয়া হয়েছে ৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড।
অন্যদিকে প্রমাণিত হয়নি ১, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২০ এবং ২৩ নম্বর অভিযোগ। এগুলোতে অভিযোগ আনা হয় যথাক্রমে গুডস হিলে সাতজনকে অপহরণ করে নির্যাতন, মানিক ধরের বাড়ি লুট, বোয়ালখালীর শাকপুরা গ্রামের গণহত্যা, বিজয় কৃষ্ণ ও দুইজনকে হত্যা, হানিফ হত্যা, মাহবুব আলম হত্যা, এখলাস হত্যা এবং সলিমুল্লাহর ওপর নির্যাতনের। ট্রাইব্যুনাল আলোচনা করেননি ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগে। এ ১৪টি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন সাকা চৌধুরী।প্রমাণিত ৪ হত্যা-গণহত্যায় ফাঁসি৩নং অভিযোগে গহিরা শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-মালিক অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা, ৫নং অভিযোগে সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্র ও অপর তিনজনকে হত্যা, ৬নং অভিযোগে ঊনসত্তরপাড়ায় ৬৯/৭০ জনকে গণহত্যা এবং ৮নং অভিযোগে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার পুত্র শেখ আলমগীরকে হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে সাকা চৌধুরীকে। ৩নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৩ এপ্রিল সকাল আনুমাণিক ৯টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে নিয়ে ঘটনাস্থল গহিরা শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ে আসেন। ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক নূতন চন্দ্র সিংহের সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনারা ৫-৭ মিনিট কথাবার্তা বলে চলে যায়। চলে যাওয়ার আনুমাণিক ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পুনরায় পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে কুণ্ডেশ্বরী ভবনে প্রবেশ করেন।ওই সময় নূতন চন্দ্র সিংহ বাড়ির ভিতরে মন্দিরে প্রার্থনারত ছিলেন। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে মন্দিরের ভিতর থেকে টেনে-হিঁচড়ে সামনে নিয়ে আসেন এবং উপস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের উদ্দেশে বলেন যে, একে হত্যা করার জন্য বাবার নির্দেশ আছে। পরে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করার জন্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী উপস্থিত পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের নির্দেশ প্রদান করেন। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারা কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে ব্রাশফায়ার করে। গুলিবিদ্ধ নূতন চন্দ্র সিংহ মাটিতে পড়ে ছটফট করা অবস্থায় আসামি সাকা চৌধুরী নিজে তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।সশস্ত্র অভিযান শেষে বেলা আনুমানিক ১০টা সোয়া দশটার দিকে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সাকা চৌধুরী।৫নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল বেলা আনুমানিক একটার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কতিপয় অনুসারীদের নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালান। সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার আগে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে সুলতানপুর গ্রামের বণিকপাড়ায় লোকজনদের কাছে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর প্রশংসা করেন এবং কাউকে বাড়ি না ছাড়তে বলেন। স্থানীয় লোকজন পুরোপুরি আস্থা স্থাপন না করতে পেরে নারী-শিশুদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেন।
সেনা সদস্যরা বণিকপাড়ায় প্রবেশ করে ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে এলাকার নেপাল চন্দ্র ধর, মণীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে একত্রিত করে গুলি করে। এতে প্রথম ৩ জন শহীদ ও শেষের জন আহত হন। হত্যাকাণ্ড শেষে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাদের অনুসারী ও পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের নিয়ে আনুমানিক আধা ঘণ্টার মধ্যে সুলতানপুর গ্রাম ত্যাগ করেন।৬নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টা থেকে ৫টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হিন্দু জনগোষ্ঠীর লোকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালান। ওই পাড়ায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা এলাকার হিন্দু নর-নারীদের স্থানীয় ক্ষিতীশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে একত্রিত করে। পরে সাকা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনারা নিরীহ নিরস্ত্র ও একত্রে বসানো হিন্দু নর-নারীদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।শহীদদের মধ্যে চন্দ্র কুমার পাল, তারা চরণ পাল, বাবুল মালী, গোপাল মালী, সন্তোষ মালী, বলরাম মালী, অভিমন্যু পাল, পাখী বালা পাল, বেনী মাধব পাল, ধীরেন্দ্র পাল, বিরজা বালা পাল, হিমাংশু পাল, সতীশ চন্দ্র, সুপ্রিয় পাল, দুর্গাচরণ পাল, শান্তিবালা পাল, নিকুঞ্জ বিহারী পাল, বলরাম পাল, শ্রীরাম পাল, ফনীন্দ্র পাল, তারাপদ পাল, পুনিল বিহারী পাল, নিকুঞ্জ পাল, নকুল পাল, হেমন্ত কুমার পাল, স্বপন কুমার সেন, ধীরেন্দ্র লাল চৌধুরী, নির্মল চৌধুরী, মধুসূদন চৌধুরী, শান্তিপদ চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী, বাবুল চৌধুরী, কৃষ্ণ চৌধুরী, রঞ্জিত কুমার রুদ্র. মণীন্দ্র চৌধুরী, জ্যোৎস্না বালা চৌধুরী, প্রীতিকনা চৌধুরী, মনিকুন্তলা চৌধুরী, কৃষ্ণা রানী চৌধুরী, মিলন দে, শ্রীপতি চৌধুরী, উপেন্দ্র লাল ঘোষ, মনোরঞ্জন ঘোষ, প্রতিমা দাস, জুনু ঘোষ, বাদল চৌধুরী- এই ৫০ জনের লাশ গ্রামবাসী শনাক্ত করে।বাকি ১৯/২০ জনের লাশ গ্রামবাসী শনাক্ত করতে পারেননি। কারণ, তারা ছিলেন বহিরাগত। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে ঊনসত্তরপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা।৮নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ১১টা। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ তার পুত্র শেখ আলমগীরসহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রাইভেটকারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসছিলেন। পথে হাটহাজারী থানার খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি তিন রাস্তার মোড়ে সকাল অনুমান ১১টার দিকে পৌঁছামাত্র আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি দখলদার সৈন্যরা তাদের প্রাইভেট গাড়িটি অবরোধ করে শেখ মোজাফফর আহম্মেদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আটক করে স্থানীয় পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।পরবর্তী সময়ে তাদের আত্মীয়-স্বজন পরিচিত সূত্রে চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ গুডসহিলে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে শেখ মোজাফফর আহম্মদ এবং তার পুত্র শেখ আলমগীরকে মুক্ত করার অনুরোধ জানান। ফজলুল কাদের চৌধুরী বিষয়টি দেখবেন বলে জানান এবং আলোচনার এক পর্যায়ে এও বলেন যে, ‘বিষয়টি সালাউদ্দিন কাদেরের ব্যাপার। দেখি কি করা যায়।’ ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কালক্ষেপণ করতে থাকেন। ফলে শেখ মোজাফফর আহম্মদ ওশেখ আলমগীরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।৩ হত্যা-গণহত্যায় ২০ বছর করে কারাদণ্ড২নং অভিযোগে চট্টগ্রামের মধ্য গহিরায় গণহত্যা, ৪নং অভিযোগে জগৎমল্লপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে ৩২ হিন্দু নারী-পুরুষকে গণহত্যা এবং ৭নং অভিযোগে রাউজান পৌরসভা এলাকার সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যার দায়ে২০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন সাকা চৌধুরী। ২নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একদল সদস্য গহিরা গ্রামে হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দুদের ডাক্তার মাখন লাল শর্মার বাড়িতে জড়ো করা হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যরা ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করে। সেখানে যাদের গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন, পঞ্চবালা শর্মা, সুনীল শর্মা, মতিলাল শর্মা ও দুলাল শর্মা। আহতদের মধ্যে মাখন লাল শর্মা মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখম হয়ে ৩-৪ দিন পর মারা যান। জয়ন্ত কুমার শর্মা পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে কয়েক বছর পর মারা যান।৪নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্থানীয় সহযোগীদেরসহ পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জগৎমল্লপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালান। ঘটনার দিন সাকা চৌধুরীর দুই সহযোগী আব্দুল মাবুদ ও অপর একজন জগৎমল্লপাড়ায় সেখানকার হিন্দু নর-নারীদের সবাইকে কথিত এক শান্তি মিটিংয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তাদের কাথায় বিশ্বাস করে এলাকাবাসী সবাই কিরণ বিকাশ চৌধুরীর বাড়ির আঙিনায় একে একে জড়ো হতে থাকেন। তখন তাদের একত্রিত করে বসানো হয়। পরে সাকার উপস্থিতিতে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এখানে গুলিতে ৩২ নারী-পুরুষ মারা যান।
যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন, তেজেন্দ্র লাল নন্দী, সমীর কান্তি চৌধুরী, অশোক চৌধুরী, সীতাংশু বিমল চৌধুরী, প্রেমাংশু বিমল চৌধুরী, কিরণ বিকাশ চৌধুরী, সুরেন্দ্র বিজয় চৌধুরী, চারুবালা চৌধুরানী, নিরুবালা চৌধুরানী, প্রভাতি চৌধুরী, রাজলক্ষ্মী চৌধুরানী, কুসুমবালা চৌধুরানী, যতীন্দ্র লাল সরকার, হীরেন্দ্র লাল সরকার, প্রভাতি সরকার, দেবেন্দ্র লাল চৌধুরী, রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী, অজিত কুমার চৌধুরী, পরিতোষ চৌধুরী, ভবতোষ চৌধুরী, গোপাল চৌধুরী, রানীবালা চৌধুরানী, মঞ্জুর চৌধুরী, ঝিনু চৌধুরী, রুনু চৌধুরী, দেবু চৌধুরী, স্বপন চৌধুরী, ফণীভূষণ চৌধুরী, মধুসূদন চৌধুরী, বিপিন চৌধুরী, কামিনী রুদ্র ও অনন্ত বালা পাল (নিরুবালা)।৭নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল দুপুর আনুমাণিক ১২টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সেনা সদস্য রাউজান পৌরসভা এলাকার সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে প্রবেশ করে। সতীশ চন্দ্র পালিত ওই সময় ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন যে, তাকে মেরে ফেলতে হবে। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যরা সতীশ চন্দ্র পালিতকে ঘরের ভেতর যেতে বলে। তিনি পেছন ফিরে ঘরের ভেতর প্রবেশ করাকালে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং তার লাশ কাঁথাকাপড় দিয়ে মুড়িয়ে তাতে পাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলে। পরে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ সৈন্যরা সবাই একসঙ্গে চলে যায়।২ অপহরণ-নির্যাতনে ৫ বছর করে কারাদণ্ডপ্রমাণিত ১৭নং অভিযোগে নিজাম উদ্দিন আহম্মদকে অপহরণ ও নির্যাতন এবং ১৮নং অভিযোগে সালেহউদ্দিন আহমদকে অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে সাকা চৌধুরীকে।১৭নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার আরও ২/৩ জন সহযোগীসহ পাকিস্তান সেনা সদস্যরা চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ি থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে ধরে নিয়ে যায়। অপহরণ করে তাদের গুডসহিলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেজর গজনফরের নেতৃত্বে ঘণ্টা দেড়েক তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। পরে সেদিন রাত ১১/১২টায় নিজাম উদ্দিন ও সিরাজকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে গিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়। সেখানে তারা দেশ স্বাধীন হওয়ায় আগ পর্যন্ত বন্দী ছিলেন।১৮নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদিন ভোর আনুমাণিক সাড়ে ৫টায় আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর মুসলিম লীগ নেতা শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৃত শামসু মিয়া সহযোগী তিনজন রাজাকারসমেত চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও থানার মোহারা গ্রামে আব্দুল মোতালেব চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারা মোঃ সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করেন। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গাড়িতে নিয়ে তাকে গুডসহিলে টর্চার সেলে নেওয়া হয়। বাড়ির বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে থাকা সাকা চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় সালেহ উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে ফজলুল কাদের চৌধুরী জানতে চান, তিনি সালেহউদ্দিন কিনা। এ কথা বলতে বলতে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে মোঃ সালেহ উদ্দিনের বাম গালে সজোরে একটি চড় মারেন।প্রমাণিত না হওয়া ৮ অভিযোগপ্রমাণিত না হওয়া প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে: একাত্তরের ৪ বা ৫ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৯টার পর মতিলাল চৌধুরী, অরুণ চৌধুরী, যোগেশ চন্দ্র দে ও পরিতোষ দাস, পাচক সুনীল প্রমুখ বন্ধুরা একত্রিত হয়ে শহীদ মতিলাল চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি থানার রামজন লেনের বাসভবনে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী আব্দুস সোবহান এ বাড়িতে ঢুকে তাদের দেখে সঙ্গে সঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে গুডসহিলে খবর দেন। তার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই দুই ট্রাক পাকিস্তানি সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে সোবহান বাসাটি ঘেরাও করে ফেলেন এবং তাদের অপহরণ করে ট্রাকে তুলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবনে স্থাপিত নির্যাতন কেন্দ্র গুডসহিলে নিয়ে যান।
তাদের সঙ্গে পাচক সুনীলকেও আটক ও অপহরণ করে পাকিস্তানি সেনাদের ট্রাকে তুলে গুডসহিলে নিয়ে যান সোবহান। পাচক বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ হওয়ায় তাকে গুডসহিলের নির্যাতন কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি ৬ জনকে আটক করা হয়। ছাড়া পাওয়ার কিছুক্ষণ পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী আব্দুস সোবহান মতিলাল চৌধুরীর বাসার সামনে সুনীলকে দেখতে পান।সুনীল যেহেতু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সেহেতু প্রমাণ বিনষ্ট করার জন্য সোবহান তাকে তালোয়ার দিয়ে কোপাতে শুরু করেন। কিন্তু অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে আটক করে রাখা সেই ৬ ব্যক্তির আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। যা থেকে নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায় যে, তাদের সেখানেই হত্যা করা হয়েছে।
১০নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানিরা সাকা চৌধুরীর সঙ্গে ডাবুয়া গ্রামে মানিক ধরের বাড়িতে এসে তার জিপ গাড়ি ও ধান ভাঙ্গার কল লুট করে নিয়ে যায়। মানিক ধর সাকা চৌধুরীসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।১১নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সকালবেলা কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী মুসলিম লীগের লোকজন তাদের নির্দেশেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং মুসলিম লীগ সমর্থক রাজাকার খয়রাতি, জহির এবং জসিমকে নিয়ে একযোগে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ যোগসাজশে ও চক্রান্তে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা শাকপুরা গ্রামে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে হিন্দুদের হত্যা করে। শাকপুরা প্রাথমিক স্কুলের নিকটবর্তী জঙ্গলে ও ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে নির্বিচারে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীকালে শহীদদের মধ্যে ৫২ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়। কিন্তু মোহরা, কালুরঘাট, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা অনেকেই ওই এলাকায় আশ্রয় নেন, যাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।এছাড়া আক্রমণকারীরা শাকপুরা গ্রামের দারোগার মাঠে নিয়ে নিকুঞ্জ চৌধুরী, অরবিন্দ রায়, ফণীন্দ্র শীল, প্রাণহরি শীল, নিকুঞ্জ শীল, ধনঞ্জয় চৌধুরী, নগেন্দ্র শীল, প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার সুখেন্দু বিকাশ নাগ, বিশ্বেশ্বর আচার্যকে গুলি করে হত্যা করে। এসব হত্যাকাণ্ড ছাড়াও শাকপুরা এলাকায় যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে আরও তিন শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়, যাদের সেখানে মাটিচাপা দিয়ে সমাধিস্থ করা হয়েছে।পরবর্তী সময়ে শাকপুরা প্রাইমারি স্কুলের নিকটবর্তী পুকুরপাড়ে রাস্তার পাশে শাকপুরা গ্রামের শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং তার সহযোগীদের হাতে শহীদ ৭৬ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। তারা হলেন- ফয়েজ আহম্মদ, জালাল আহম্মদ, হাবিলদার সেকেন্দার আলী, আমীর হামজা, আবুল হাশিম, আব্দুল মতিন, হাবিবুর রহমান লেদু, আহাম্মদ ছফা, অরবিন্দ রায়, নিকুঞ্জ রায়, ধীরেন্দ্র লাল দে, ফণীন্দ্র লাল শীল, নিকুঞ্জ শীল, প্রাণহরি শীল, নগেন্দ্র লাল শীল, দেবেশ চৌধুরী, গৌরাঙ্গ প্রসাদ চৌধুরী, বিশু চৌধুরী, গৌরাঙ্গ নন্দী, তপন নন্দী, ডা. মধুসূদন চৌধুরী, রঘুনন্দন চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী, সুখেন্দ্র বিকাশ নাগ, রবীন্দ্র লাল চৌধুরী, উপেন্দ্র লাল চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী, বিশ্বেশ্বর আচার্য, দয়াল হরি আচার্য, কামিনী শুক্ল দাস, যোগেন্দ্র লাল শুক্ল দাস, দেবেন্দ্র শর্মা, যতীন্দ্র লাল সেন, ধুর্জ্জটি বড়ুয়া, পণ্ডিত রমেশচন্দ্র বড়ুয়া, রতন চৌধুরী, প্রিয়তোষ চৌধুরী, চন্দন চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী, হরিরঞ্জন চৌধুরী, দীলিপ চৌধুরী, মিলন বিশ্বাস, সুবল বিশ্বাস, ব্রজেন্দ্র লাল চৌধুরী, গোপাল চৌধুরী, ধীরেন্দ্র চৌধুরী, রমণী চৌধুরী, গৌরাঙ্গ চৌধুরী, দয়াল নাথ, রাখাল সিংহ, মনমোহন চক্রবর্তী, শশাঙ্ক ঘোষ, সুখেন্দু বিকাশ চৌধুরী, ধীরেন্দ্র লাল চৌধুরী, বরদা চরণ চৌধুরী, মণীন্দ্র লাল খাস্তগীর, বঙ্কিমচন্দ্র সেন, সাধন ঘোষ, গৌরাঙ্গ চৌধুরী, ধনঞ্জয় কৈবর্ত, নলিনী কৈবর্ত, সমিত রঞ্জন বড়ুয়া, নারায়ণ চৌধুরী, যতীন্দ্র লাল দাস, মণীন্দ্র লাল দাস, রমেশ চৌধুরী, ডা. সুখেন্দু বিকাশ দত্ত, প্রদীপ কান্তি দাস, রায় মোহন চৌধুরী, হরিপদ চৌধুরী, অমল চৌধুরী, ডা. পূর্ণ চরণ ও মদন কুমার দাস।
১২নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ মে সকাল সাড়ে ১০টায় সাকা চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাউজান থানার জ্যোতিমল্ল গ্রামে গুলি করে বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরী রাখাল, বিভূতি ভূষণ চৌধুরী, হীরেন্দ্র লাল চৌধুরীকে হত্যা করে।১৪নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২০ মে বিকেল ৪টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে তার সহযোগী কয়েকজন রাজাকার সদস্য পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার পথেরহাটের কর্তার দীঘির পারে মোঃ হানিফের বাড়িতে যায়। তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করছিলেন। তাকে অপহরণ ও আটক করে গুডসহিল নির্যাতনকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। মোঃ হানিফের স্ত্রী এবং অন্যরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আত্মীয় নাজমা খাতুনের মাধ্যমে মোঃ হানিফকে গুডসহিল নির্যাতনকেন্দ্র থেকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করেন।নাজমা খাতুন গুডসহিল থেকে ফেরত এসে তাদের জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মোঃ হানিফকে ছাড়ার জন্য এক হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। ফলে মোঃ হানিফ গুডসহিল নির্যাতনকেন্দ্র থেকে আর ফেরত আসেননি। মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারার কারণে মোঃ হানিফকে হত্যা করা হয়।১৯নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে আটটায় হাটহাজারীর নেয়ামত আলী রোডের সাহেব মিয়ার বাড়ি (রজমান টেন্ডলের বাড়ি) ঘেরাও করে তার দু’ছেলে নুর মোহাম্মদ ও নুরুল আলমকে অপহরণ করা হয়। এরপর রশি দিয়ে বেঁধে গুডসহিলে টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের অপর ভাই মাহবুব আলমের সন্ধান পান। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নুর মোহাম্মদ ও নুরুল আলমকে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে গুডসহিলের নির্যাতনকেন্দ্রে থেকে ছেড়ে দেন।২০নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৭/২৮ জুলাই বিকেল ৩/৪টায় রাজাকার বাহিনী আকলাচ মিয়াকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু ঘটে।২৩নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সন্ধ্যা আনুমানিক সোয়া ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার সময় আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুসলিম ছাত্র পরিষদের সভাপতি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের আলশামস কমান্ডার হামিদুল কবির চৌধুরী খোকা, মাহবুব, সৈয়দ ওয়াহিদুর আলম গং চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার ৪০ আব্দুস সাত্তার রোড এলাকার এম সলিমুল্লাহর একজন হিন্দু কর্মচারীকে মিথ্যা এবং বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে মারধর করতে থাকেন। তাদের অভিযোগ হলো ওই হিন্দু কর্মচারী বিহারিদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছেন। এম সলিমুল্লাহ এতে বাধা দিলে তাকে গুডসহিলে নির্যাতন সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সারারাত নির্যাতন শেষে তার আত্মীয়দের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।আলোচনা না হওয়া ৬ অভিযোগ৯নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে এপ্রিলের মাঝামাঝি দু’টি বড় ট্রাকযোগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীতে আসে। একটি জিপে করে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একই সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার সিও অফিসস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে আসেন। ওই দু’টি ট্রাক একই থানার কদুরখিল গ্রামে যাওয়ার সময় মুন্সীরহাটের শান্তি দেবকে ধরে নিয়ে আসে। তাকে থানার উত্তর পাশে বণিকপাড়ায় গুলি করে হত্যা করে। অনতিদূরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তখন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। শান্তির দেবের লাশ ওই সময় কে বা কারা নিয়ে যায়। ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বণিকপাড়ার রামবাবুর ঘর-বাড়ি ও কদুরখিল হিন্দুপাড়া লুটপাট করে।১৩নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৫ মে বাদ মাগরিব অর্থাৎ সন্ধ্যার সময় আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে তাদের সহযোগী শান্তি কমিটির সদস্য অলি আহম্মদ (মইন্যাপাড়া, উত্তর হালিশহর, উত্তর গেট এলাকার রায় মোল্লার জামাতা) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ঘাসিমাঝির পার এলাকায় উপস্থিত হয়ে এলাকার লোকজন আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ায় রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত তাদের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ যোগসাজশে ও চক্রান্তে আক্রমণ করে লুটপাট, ৬ জনকে গুলি করে হত্যা, ২ জনকে গুরুতর আহত এবং অন্তত ৫ মহিলাকে ধর্ষণ করে। নিহতরা হলেন- নুরুল আলম, আবুল কালাম, জানে আলম, মিয়া খাঁ, আয়েশা খাতুন ও সালেহ জহুর। গুলিতে আহতরা হলেন- মুন্সী মিয়া ও খায়রুল বাশার।১৫নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি শেখ মায়মুন আলী চৌধুরী তার ভাগ্নি জামাই মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জের বাসায় ছিলেন। ঘটনার দিন কয়েক বন্ধুসহ চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার চন্দনপুরের ক্যাপ্টেন বখতিয়ারের বাসভবনে গল্প-গুজবরত অবস্থায় থাকাকালীন আনুমানিক বিকেল তিনটা সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ করে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে দু’টি ট্রাকে পাকিস্তানি সেনাসদস্যসহ বেসামরিক পোশাকে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সমেত এসে বাসাটি ঘেরাও করে। এর পর শেখ মায়মুন আলী চৌধুরীকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন ও পরিচালনাধীন গুডসহিল নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও ফজলুল কাদের চৌধুরীর নির্দেশে পরনের জাঙ্গিয়া ছাড়া সকল কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে হাত-পা বেঁধে তাকে দৈহিক নির্যাতন করা হয়।১৬নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৭ জুন রাজাকার মাকসুদুর রহমান ও আসামির পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় জামাল খান রোড থেকে ওমর ফারুককে ধরে নিয়ে গিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন গুডসহিলের চর্টার সেলে রাখেন। পরবর্তী সময়ে আটকাবস্থায় তাকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।২১নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫/৭ তারিখের দিকে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার বিনাজুরি গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী একই জেলার কোতোয়ালি থানার জেল রোডে অবস্থিত নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাগজের দোকানে যান। সেখান থেকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ৩/৪ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।২২নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন রাত আনুমাণিক ৯টায় মোঃ নুরুল আনোয়ার চৌধুরীকে অপহরণ করা হয়। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার সহযোগী আলশামস বাহিনীর সদস্যরা মৃত আশরাফ আব্দুল হাকিম চৌধুরীর বাসভবন ৪১/২ স্ট্যান্ড রোড সদরঘাট, থানা ডবলমুরিং জেলা চট্টগ্রাম থেকে তাকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যান। সেখানে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মোঃ নুরুল আনোয়ারের কাছ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন।সপ্তম রায় ট্রাইব্যুনালেরমুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এটি সপ্তম রায়। তবে এই প্রথম কোনো বিএনপি নেতার যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণা হলো।এর আগে ঘোষিত আরও ৬টি মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন জামায়াতের সাবেক-বর্তমান ৬ নেতা। এর মধ্যে ৪ মামলার রায় ট্রাইব্যুনাল-২ আর দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।ঘোষিত অন্য ৬টি রায়ের মধ্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও জামায়াতের পলাতক সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসি এবং জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিলেও সাজা বাড়িয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বাচ্চু রাজাকার ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে আপিল বিভাগে।মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রম২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায়ই সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ভোরে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। পরে ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। একই বছরের ১৪ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) জমা দেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।৫৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি ট্রাইব্যুনালে জমা দেন প্রসিকিউশন।গত বছরের ৪ এপ্রিল সাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ করে গুডস হিলে নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ। ৩ মে ও ৭ মে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাকা চৌধুরীর বিচার। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ মে থেকে গত ১৩ জুন পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের জেরা সম্পন্ন হয় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের। তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ নূরুল ইসলাম ঘটনা ও জব্দ তালিকার সাক্ষী মিলিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ৪১ জন সাক্ষী। আর ৪ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।এর মধ্যে ঘটনার সাক্ষীরা হচ্ছেন- বাংলা একাডেমীর সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালি, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের ভাতিজা গৌরাঙ্গ সিংহ ও পুত্র প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, শহীদ পরিবারের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা, আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ (আব্বাস চেয়ারম্যান), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য মোঃ সালেহ উদ্দিন, ব্যবসায়ী পরাগ ধর (ক্যামেরা ট্রায়াল), চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক ছাত্রনেতা কাজী নূরুল আফসার, মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপ কমান্ডার সৈয়দ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, শহীদ পরিবারের সদস্য অরুণাংশু বিমল চৌধুরী ও তার ভাতিজা আশীষ চৌধুরী, অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র দাশ, সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন আহমেদ, ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী, একজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল), শহীদ পরিবারের সদস্য দেবব্রত সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগীত শিল্পী সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম জুনু, শহীদ পরিবারের সদস্য শেখ মোরশেদ আনোয়ার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর, শহীদ পরিবারের সদস্য অনিল বরণ ধর, মুক্তিযোদ্ধা বনগোপাল দাশ, শহীদ পরিবারের সদস্য বাবুল চক্রবর্তী বুলবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের চৌধুরী, মো. সোলায়মান, ডা. এ কে এম শফিউল্লাহ, শহীদ পুত্র পরিতোষ কুমার পালিত, শহীদ পরিবারের সদস্য সুবল চন্দ্র শর্মা, শহীদ পরিবারের সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন, শহীদ পরিবারের সদস্য সুজিত মহাজন, শহীদের স্ত্রী বাসন্তি ঘোষ, মাহমুদ আলী, বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরী, কামাল উদ্দিন এবং শহীদ পরিবারের সদস্য চপলা রাণী।আর জব্দ তালিকার সাক্ষীরা হলেন- বাংলা একাডেমীর সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাব উদ্দিন মিয়া, চট্টগ্রামের রাউজান থানার জিআরও এএসআই মো. এরশাদুল হক, সাবেক জিআরও এসআই মোল্লা আব্দুল হাই ওচট্টগ্রামের বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের বুক শর্টার কাওসার শেখ।এছাড়া অন্য ৪ সাক্ষী মৃত জ্যোৎস্নাপালচৌধুরী,মৃতজানতি বালা চৌধুরী ও মৃত আবুল বশর এবং ভারতে থাকা বাদল বিশ্বাসের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে গত ১৭ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও রাষ্ট্রপক্ষের জেরা সম্পন্ন হয়। সাকা চৌধুরী নিজেসহ মোট ৪ জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য তিন সাফাই সাক্ষী হচ্ছেন তার কলেজ জীবনের বন্ধু নিজাম আহমেদ, এশিয়া-প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাইয়ুম রেজা চৌধুরী এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষ তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন।গত ২৮ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এবং ১৪ আগস্ট ৫ কার্যদিবসে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, জেয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সীমন।গত ১ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৭ কার্যদিবসে সাকা চৌধুরীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন