বাড়ছে পরকীয় প্রেম ভাঙছে হাজারো ঘর
ভাই কি আর বলবো আমাদের এই আধুনীক যুগে কতকিছুই না দেখলাম এখনো আরো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে । চলুন আজ মোবাইল ফোন ও ফেসবুক চ্যাট নিয়ে যে সংবাদটি পড়লাম পত্রিকায় তা নিয়ে আলোচনা করি । এবং পারলে নিজেরাও এমন কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি ।
দুই সন্তানের জননী সাদিয়া । বয়স ৪০ ছই ছই । জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেছেন সাদিয়া । কাজ করেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে । তার স্বামী এনামুল হক এনামও ভালো বেতনে কাজ করেন একটি প্রতিষ্ঠানে । এই দম্পতির দুই সন্তানই পড়ে ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুলে । সবমিলিয়ে সুখের সংসার চলছিল তাদের । কিন্তু এই সুখ বেশিদিন দীর্ঘ হয়নি । শুরুটা হয় ২০১১ সালে ফেসবুক দিয়ে । ত্রিশ বছরের অবিবাহিত দেবাশীষকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান সাদিয়া ।
স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের মধ্যে হাই হ্যালো চলতে থাকে দুইজনের মধ্যে । আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে চ্যাট । অফিসের কম্পিউটার থেকে মোবাইল ফোন পযন্ত । দিন নেই আর রাত নেই চ্যাট চলতেই থাকে । এর মধ্যেই সাদিয়া দেবাশীষকে জানান তার স্বামী বয়স্ক । টাকা পয়সা বেশি আছে বলে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন সাদিয়ার মা বাবা । তাকে পেয়ে সাদিয়া সুখী নন । এই সুযোগটা কাজে লাগান দেবাশীষ । নিজের নিঃসঙ্গতার কথাও জানান দেবাশীষ । রাজধানীতে বেশ কয়েক বছর ধরেই থাকেন । দেবাশীষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন । কিন্তু দেবাশীষের কোন বান্ধবী নেই । সাদিয়ার মতো গার্লফ্রেন্ড পেলে নিজেকে সুখী মনে করবেন । সেই থেকে শুরু । সাদিয়া আর দেবাশীষ আস্তে আস্তে জড়িয়ে যান গন্তব্যহীন এক সম্পর্কে ভেতরে । প্রযুক্তির কল্যাণে এমন সম্পর্কে আজকাল জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই । বিশেষ করে ফেসবুক এবং মোবাইলফোনে নারী পুরুষের সম্পর্ক প্রথমে বন্ধু হিসেবে গড়ে ওঠে ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথমে বন্ধুতা পরে তা প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়ে যায় । আর বেশি ক্ষেত্রেই অদেখা ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন বিবাহিতরা । এই সম্পর্কের প্রভাব এতো বেশি যে ধর্ম বর্ণ বয়সের বাঁধ না মেনেই তা এগিয়ে চলে । পরকীয়া এই প্রেমের ফলে অহরহ ভাঙছে বহু সংসার ।
সাদিয়া দেবাশীষের কাহিনী এখানেই শেষ না । তাদের মত আরো অনেকেই বুঝে না বুঝে এরকম অহর অহর ঘটনা ঘটাচ্ছেন । তারপর শুরু হলো তাদের ফোনালাপ । সাদিয়া তার অতি কাছের এক বান্ধবীর নামে ফোন নম্বরটি নিজের মোবাইলে সেভ করে রাখেন । কথা বলতে বলতে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তারা । স্বামীর সামনে কথা বলতে না পারলেও দেবাশীষের কথা শুনা মিস করতে চান না সাদিয়া । তাই সাদিয়া অনেক সময় গান শুনার ভান করে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে রাখেন । এমন মনে হয় যেন গানের সঙ্গে তাল মিলাচ্ছেন সাদিয়া হুম হ্যা জবাব দিয়ে চলেন । স্বামী বেচারা তার পাশেই শুয়ে থাকে । কি ঘটছে তা সে বুঝে উঠতে পারেন না । কখন কখন স্বামী অফিসে চলে গেলে সাদিয়াদের বাসায় আসতেন দেবাশীষ ।
এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকে তাদের পরকীয় প্রেম । দুজনে এক সঙ্গে বিভিন্ন কফি শপ রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা । এই কারণে পরিচিতদের চোখে প্রায়ই ধরা পড়তো এই দৃশ্য । দেবাশীষের সঙ্গে প্রায়ই রিকশায় দেখা যেত তাকে । মাঝে মধ্যে সাদিয়াকে অফিসে পৌঁছে দেয়া এবং নিয়ে যাওয়ার কাজটিও করতেন দেবাশীষ । কাজের ফাকে কখনও কখনও ধানমন্ডি লেকে বসে গল্প করেন দুজনে । এরমধ্যেই সাদিয়া অফিস স্থানান্তরিত হলো তেজগাঁওয়ে তাতেও দেবাশীষের আসা যাওয়া বন্ধ হয়নি । কিন্তু সমস্যা দাঁড় হয় এক রাতে সাদিয়া তখন বাসার ফ্রেশরুমে ফ্রেস হচ্ছেন । এমন সময় মোবাইলফোনে মেসেজ এলার্ট বাঁজলো । এনাম অথাৎ সাদিয়ার হাজবেন্ড মোবাইলটি হাতে নিয়ে বাটন চাপতেই তার চোখে লেখা দেখলো ডার্লিং সম্বোধন করে লেখা । সাদিয়া এখন তোমাকে খুব মনে পড়ছে । আজ খুব হ্যাপি আমি আমাকে ধন্য করেছো তুমি । সাদিয়া ডালিং রোজ এভাবে চাই তোমাকে । বার্তাটি পড়ে অন্ধকার হয়ে আসে এনামের পৃথিবী। শুরু হয় তাদের স্বামী স্ত্রী এর মাঝে প্রচণ্ড ঝগড়া । কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেন না সাদিয়া । কথা বন্ধ দুই স্বামী স্ত্রীরির মধ্যে ।
চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এনাম তাদের দুই সন্তানের দিকে ভালো করে চেয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করতে চান । ফোনে কার সঙ্গে কথা বললেন সাদিয়া কখন অফিসে যায় কখন বাসায় ফিরে এইসব নানান বিষয়ে নজরদারি শুরু করেন । কিন্তু তাতেও বন্ধ হয় না সাদিয়া এবং দেবাশীষের প্রেম । এনাম যাতে তাকে সন্দেহ না করে তাই সাদিয়া স্বাভাবিক জামা কাপড় পরে অফিসে গেলেও পরে তা চেঞ্জ করে ভ্যানিটি ব্যাগে নিয়ে যাওয়া অন্য জামা পড়ে দেবাশীষ এর সাথে দেখা ও বেড়াতে যেতেন । কোন কোনদিন অন্তত এক ঘণ্টার মত সময় কাটাতেন দুজনে । আর এই যানজটের শহরে এরকম সময়ের ব্যাখা দেয়া কোন ব্যাপার ছিল না সাদিয়ার কাছে । এর মধ্যেই এক বন্ধুর মাধ্যমে এনাম জানতে পারেন সাদিয়া এবং এক যুবক রিকশায় যাচ্ছিলেন । যুবকটি তাকে জড়িয়ে ধরেছিল । এই কথা শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে বাগবিতণ্ডার পরে সাদিয়াকে মারধর করেন তার স্বামী এনাম । এখন এনাম সাদিয়ার সংসারে ভাঙনের শব্দ প্রবল ।
শুধু সাদিয়া নয় সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক মোবাইল এর মাধ্যমে এভাবে অনেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়াচ্ছেন । ভাঙছে বহু সংসার ।
বিঃদ্রঃ ফেসবুক মোবাইলের এ ধরনের ঘটনা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে । নিজেদের জন্য না হয় আমাদের
সন্তানদের কথা চিন্তা করে ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন