বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকায় দাতা সংস্থাগুলো চরমভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমবিষয়ক বিশেষায়িত সংবাদ সংস্থা ডেভেক্স বার্তা। শুক্রবারের 'এইড ইন দ্য ব্যালান্স-বাংলাদেশ'স পলিটিক্যাল মেস' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের পরও রাজনৈতিক অস্থিরতায় অব্যাহত থাকায় উদ্বিগ্ন দাতা সংস্থাগুলো। তারা মনে করছে, এরকম চলতে থাকলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো ব্যাহত করতে পারে। একই সাথে সহায়তাকেও কমিয়ে দেবে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের তথ্য প্রকাশ করেছে যে, বৈদেশিক সাহায্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে যা প্রায় ২৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে যেখানে ১.৬ বিলিয়ান ডলার দেয়ার অঙ্গীকার দেয় হয়েছিল, সেখানে ২০১৪ সালে এসে তা কমে ১.২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে।

গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী সামগ্রিক বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। প্রতিবেদনে সে কথাও উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১২ সালে যেখানে বৈদেশিক সাহায্য ৮০৯ মিলিয়ন ডলার ছিল সেখানে ২০১৩ সালে তা ৩১ শতাংশ কমে গিয়ে ৫৫৭ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক বিতর্কে বাংলাদেশে সুশাসনবিষয়ক প্রকল্পে ব্রিটিশ সাহায্যের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য এমপিদের দাবির এক দিন পর ডেভেক্স এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল।

ম্যানিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থাটি বলেছে, দেশটিতে তাদের সহায়তা বাড়বে না কমবে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টিও বিবেচিত হবে।

'এইড ইন দ্য ব্যালান্স্ত বাংলাদেশ'স পলিটিক্যাল মেস' শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, কোলাহলপূর্ণ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকায় দাতা সংস্থাগুলো বিরক্ত। বিশ্বব্যাংকের সামপ্রতিকতম তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে বৈদেশিক সাহায্যের অঙ্গীকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে, প্রায় ২৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে যে অঙ্গীকারের পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার, তা ২০১৪ সালে কমে ১২০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গত মাসে প্রকাশিত সামগ্রিক বৈদেশিক সহায়তা কমার তথ্যও উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশবিষয়ক বিতর্কে অংশগ্রহণকারী এমপিদের প্রায় সবাই সুশাসন শক্তিশালী করার প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন, ওই অর্থ আদৌ কোনো কাজে আসছে কি না। ব্রিটেন বাংলাদেশকে সাহায্য হিসেবে বছরে প্রায় ২৫ কোটি পাউন্ড দেয়। বিতর্কে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডেভিড লিডিংটন জানান, বাংলাদেশে ব্রিটিশ সহায়তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি প্রকল্পে যায় এবং তা-ও আন্তর্জাতিক দাতা প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে। সাহায্যের বাকিটা বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওগুলোর মাধ্যমে খরচ করা হয়। তবে, ওই বিতর্কে রাজনীতিকদের কলহের কারণে বাংলাদেশের দরিদ্র লোকেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই দিকটিও বিবেচনার কথা বলা হয়।

সমপ্রতি টেলিগ্রাফে দুটি প্রকল্পের বরাদ্দ হুমকির মুখে বলে খবর প্রকাশের পর ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন কোনো প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানায়। পরে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দপ্তর (ডিএফআইডিতে) বিষয়টিতে আরও ব্যাখ্যা জানতে চাইলে প্রকল্প পর্যালোচনার কথা নাকচ করা হয়নি।

ডেভেক্সের শুক্রবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটি কীভাবে আবার সঠিক ধারায় ফিরতে পারবে, এ রকম এক প্রশ্নের জবাবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নে ধীরগতি দেশটির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। ব্যাংক যদিও বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির উন্নয়ন চেষ্টায় সহায়তা করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও বাংলাদেশ সরকারকেই উন্নয়নের পথে ফিরে আসার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

এডিবির একজন মুখপাত্র বলেছেন, 'সুশাসন ও সক্ষমতা তৈরি করা কার্যকর উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য জরুরি এবং বাংলাদেশে এডিবির সহায়তা কার্যক্রমের একটি কৌশলগত অগ্রাধিকার হচ্ছে সুশাসন।'

মুখপাত্র জানান, দেশটির উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সহায়তার বিষয়টি এডিবির পক্ষে চূড়ান্ত করা থাকলেও দেশটিকে উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ও বৈদেশিক দাতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment