রাজনৈতিক সহিংসতায় এক বছরে পরিবহন খাতে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকা। গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৫ পরিবহন শ্রমিক। এই সময়ে এক হাজার যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার গাড়ি। এতে শুধু পরিবহন মালিকদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩০ কোটি টাকা। তাছাড়া রাজনৈতিক কারণে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০০ কোটি টাকার।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি ও বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিবহন খাতের ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ ও ঋণ পুনর্তফসিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে। এতে পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ২০১২ সালের শুরু থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। হরতাল, অবরোধসহ রাজনৈতিক নানা কর্মসূচীর নামে শুরু হয় জ্বালাও পোড়াও। প্রতিটি কর্মসূচীতে নির্বাচনবিরোধী জোট ও যুদ্ধাপরাধীদের অনুসারীরা রাজপথে সহিংস তা-ব চালায়। এ থেকে বাদ যায়নি পরিবহন সেক্টরও। যানবাহন চালাতে গিয়ে বোমা হামলা ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে যাত্রীসহ পরিবহন শ্রমিকদের অনেকেই মারা গেছেন।
দুই মাসের বেশি সময় যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশী নিরাপত্তায় সীমিত পর্যায়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও যাত্রী ছিল কম। এমন বাস্তবতায় পরিবহন সেক্টর বাঁচাতে মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বার বার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাসে দেয়া হয়েছে আগুন। নিক্ষেপ করা হয়েছে পেট্রোলবোমা। অকালে ঝরে গেছে বহু তাজা প্রাণ। নিঃস্ব হয়েছে অসংখ্য পরিবার। আগুনে পুড়ে পরিবহন চালক, শ্রমিকসহ যাত্রীদের অনেকে এখন ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, অক্টোবর ২০১২ থেকে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রায় এক হাজার বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি। এতে প্রায় ১৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে ৫৫ শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের আহ্বান করা হয়েছিল। তখন রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি ওঠে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে পরিবহন বন্ধ থাকলে দৈনিক প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সেই হিসাবে অক্টোবর ২০১২ থেকে পরিবহন খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন মালিকদের ঋণের সুদ মওকুফ ও ব্যাংক ঋণ পুনর্তফসিলের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ১৮ দলীয় জোটসহ সকল রাজনৈতিক দলের কাছে সহিংস রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবহন নেতৃবৃন্দ বলেন, পরিবহন সেক্টরকে জিম্মি রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচী অব্যাহত রাখলে মালিক-শ্রমিকদের পথে বসতে হবে। যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না অনেক মালিকের। এমন বাস্তবতায় আমাদের প্রত্যাশা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচী পালনে পরিবহন সেক্টরকে বাইরে রাখবে। অন্যথায় আমাদের পরিবহন চালানো ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পরিবহন চলাচলে সহযোগিতার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা। এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে দুই কোটি ৬৫ লাখ টাকা মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল তালুকদার ও রমেশ চন্দ্র, সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন, সহসভাপতি আবুল কালাম ও হাসান ইমাম, মোঃ রুস্তম আলী খান প্রমুখ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন