বরিশালে সরোয়ার (মজিবর রহমান সরোয়ার

 
বরিশালে সরোয়ার (মজিবর রহমান সরোয়ার) পারলে ঢাকায় আপনারা পারবেন না কেনো? যাচ্ছেগ্রাম-গঞ্জে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে, মানুষ মারা । আপনারা এসির ভেতরে বসে মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এবার যারা রাস্তায় নামেনি তাদের তালিকা করুন, মোনাফেকদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে।
পাঁচদিন পরে নিজ কার্যালয়ে গিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস-চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের এ নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। কার্যত: দলের পলাতক ও আপসকামী নেতাদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ভীতু আর মোনাফেকদের জায়গা বিএনপিতে নয়।
গুলশান অফিস সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী সপ্তাহে সোম অথবা মঙ্গলবার থেকে আবারও তিন দিনের হরতালে যাবে ১৮ দল। পরের সপ্তাহ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে দুর্বার আন্দোলনের নির্দেশ দেওয়া হবে। সপ্তাহের পাঁচ দিনই হরতাল কর্মসূচিতে যাবে ১৮-দলীয় জোট। এ জন্য শুধু দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ভরসা না রেখে সম্প্রতি তিনি নিজেই মহানগর, জেলা, এমনকি স্থানভেদে উপজেলা পর্যায়েরও অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। যেসব নেতার ভূমিকায় চলমান আন্দোলন ন্যূনতম বিঘ্নিত হতে পারে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যারা সরকারের সঙ্গে আপসকামিতাসহ আন্দোলন কর্মসূচি এড়িয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহিষ্কারের মতো ব্যবস্থা নিতে পারেন খালেদা জিয়া।
১৯৯০-এর ছাত্র আন্দোলনে দলের স্বার্থ পরিপন্থী অবস্থান নেওয়ায় অভি-নিরুর বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এবং তারপর আন্দোলন যেভাবে চাঙ্গা হয়েছিল, এবারও অনেকটা সেরকমভাবেই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন তিনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীতে আন্দোলনে যথাযথ ভূমিকা পালন না করলে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের লোকালয়ে দেখা না গেলে তাদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে নিজ নিজ পদ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি দলের আপসকামী ও পলাতক কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও এবার আর কোনো ছাড় দেবেন না। চেয়ারপারসন হিসেবে তার নিজের কথা বাদ দিলেও হরতালের মতো কঠিন কর্মসূচিসহ জীবনবাজি রেখে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সারা দেশের এমন লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রেখে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা শুধু নিজেদের গা-বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং অর্জিত অর্থ-সম্পদ রক্ষায় সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে আপস করে চলছেন তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালেই ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
ওয়ান ইলেভেন পরবর্তীকালে যেভাবে তিনি ফোনে তৃণমূল পর্যায়ে কথা বলেছেন তেমনি শুধু কেন্দ্রীয় কিংবা ঢাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ওপর নির্ভর না করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক জেলা ও এলাকার মাঝারি পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ শুরু করেছেন। ফলে দেশের তৃণমূল নেতাদের প্রকৃত অবস্থান ও মনোভাবের সঠিক চিত্রটা জানতে পারছেন। তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতাই চাচ্ছেন- আন্দোলনে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা শৈথিল্য প্রদর্শন করছেন তাদের অন্তত দু-একজনের বিরুদ্ধে হলেও বহিষ্কারাদেশের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, তাতে সারা দেশের তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মনোবল আরও চাঙ্গা হবে। আর গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দেখা যাচ্ছে তা তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা দলের প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং মমত্ববোধ থেকে করছেন বলে মনে করছেন বেগম খালেদা জিয়া।
পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন, দল মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষই এখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারাও অনেকে রাস্তায় পর্যন্ত নেমে আসতে চাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে আপনারা পেশাজীবীরা আর বসে না থেকে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আমাদের দলের হতাহত ও গ্রেফতারকৃত দরিদ্র নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আইনি সহযোগিতাসহ সবধরনের সহায়তা দিন।
সূত্র জানায়, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে পুলিশি ধরপাকড় হলেই যারা অজ্ঞাত স্থানে চলে যান এসব পলাতক নেতার প্রতি চরম ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত বেগম খালেদা জিয়া। কারণ সারা দেশের তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সমর্থকরাও এখন বিব্রতবোধ করছেন এসব নেতার কাপুরুষোচিত ভূমিকার জন্য। তারাও রীতিমতো ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছেন। মুখ দেখাতে পারছেন না। বিশেষ করে দল ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান কঠিন দুঃসময়ে সারা দেশের লাখ লাখ নেতা-কর্মী ও সমর্থককে সরকারি দল ও পুলিশের গুলির মুখে ফেলে রেখে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পালিয়ে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে থাকার ঘটনায় তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মতো খালেদা জিয়া নিজেও চরম ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। দলের এই কঠিন সময়ে বিএনপির মতো একটি ‘বৃহৎ ও সবচেয়ে জনপ্রিয়’ রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের পালিয়ে থাকা নিয়ে এখন দল ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্যদিকে যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদের সাম্প্রতিক সুদৃঢ় ভূমিকায় খুশি হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। বলেছেন, ‘ছেলেটা অসুস্থ এবং তার পায়ে ব্যথা, তার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে পার্টি অফিসে গিয়েছে তা চিন্তাও করা যায় না।’ এছাড়া চট্টগ্রামে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে মজিবর রহমান সরওয়ার, রংপুরের আসাদুল হাবিব দুলু, রাজশাহীতে মিনু, বুলবুলের ভুমিকায় খুশি হয়েছেন খালেদা জিয়া। কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদের দেখে এদের শিখতে বলেন।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment