বেছে বেছে দেশব্যাপী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো

দেশব্যাপী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিরুদ্ধে চলমান বিশেষ অভিযানেনেতাকর্মীদের হত্যা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহে জামায়াত ও শিবিরের উপজেলা পর্যায়ের তিন নেতাকে আটক করার পর গুলি করে হত্যা করেছে যৌথবাহিনী। গত ২০ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের আরও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসার পর সাতক্ষীরা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটল।
সাতক্ষীরার দেবহাটা থেকে দুদিন আগে আটক করে থানায় নির্যাতনের পর গত শনিবার রাতে স্থানীয় দুই শিবির নেতাকে গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী। নিহতরা হলেন—দেবহাটা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সম্পাদক আবুল কালাম ও শিবিরের সদস্যকর্মী মারুফ হাসান ছোট। একই রাতে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরেও এক জামায়াত নেতাকে গ্রেফতারের পর হত্যা করা হয়েছে। তিনি উপজেলা জামায়াতের অর্থ সম্পাদক এনামুল হককে। এদিকে নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে আজ ঝিনাইদহের কোট চাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে স্থানীয় জামায়াত। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :সাতক্ষীরায় ২ শিবির নেতাকে উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করেছে যৌথবাহিনী
আমাদের সাতক্ষীরা ও দেবহাটা প্রতিনিধিরা জানান, সাতক্ষীরার দেবহাটা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই শিবির নেতাকে আটক করে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা। এরপর তাদের থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের পর শনিবার রাতে উপজেলার নারকেলি গ্রামে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী।নিহতরা হলেন দেবহাটা উপজেলা শিবির সম্পাদক আবুল কালাম ও শিবিরের সদস্য কর্মী মারুফ হাসান ছোট। আবুল কালাম দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়নের আকবর আলির ছেলে। তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষ সম্মানের ছাত্র। অপরদিকে মারুফ হাসান ছোট একই এলাকার জামায়াত নেতা আশরাফুল ইসলামের ছেলে।নিহত মারুফ হাসানের ভাই মাকফুর জানান তার ছোট ভাইপক বাড়ি থেকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় যৌথবাহিনীর সদস্যরা আটক করে নিয়ে যায়। একইদিন আবুল কালামকে অন্যস্থান থেকে আটক করা হয়। এরপর তাদের দেবহাটা থানায় নিয়ে পুলিশ শারীরিক নির্যাতন চালায়। দুজনকে পুলিশের নির্যাতন থেকে রক্ষা করার নামে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দুই পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে বলেও জানান মাকফুর।
তিনি আরও বলেন, দুদিন থানায় আটক রেখে নির্যাতনের পর আদালতে হাজির না করে অস্ত্র উদ্ধারের সাজানো নাটক সাজিয়ে গত শনিবার রাতে দেবহাটার নারিকেলি এলাকায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে কোনো নাশকতার অভিযোগ নেই। শুধু শিবিরের রাজনীতি করার কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে।এদিকে পুলিশ অন্যান্য অনেক ঘটনার মতো দুই শিবির নেতার হত্যাকে ‘বুন্দকযুদ্ধে’ নিহত বলে দাবি করেছে। দেবহাটা থানার ওসি তারক বিশ্বাস বলেন, কালাম ও মারুফকে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাদের কাছে অস্ত্র আছে বলে স্বীকার করে। পরে গত শনিবার রাতে তাদের নিয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নারকেলি এলাকায় গেলে জামায়াত ও শিবির সদস্যরা তাদের ওপর ৫০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ ছাড়াও ১৫টি বোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় যৌথবাহিনীও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে আবুল কালাম ও মারুফ গুলিবিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় তাদের সাতক্ষীরা হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।পুলিশ আরও দাবি করে, ঘটনাস্থল থেকে দুটি পাইপ গান ও পাঁচটি বোমাসহ পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।এদিকে জেলা জামায়াত ও ছাত্রশিবির পক্ষ থেকে নেতাদের ধরে নিয়ে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। জামায়াত নেতারা বলেন, সরকার আদার্শিকভাবে পরাজিত হয়ে যৌথবাহিনী দিয়ে ছাত্র শিবিরের মেধাবী সত্ ও যোগ্য কর্মীদের হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
ঝিনাইদহে জামায়াত নেতাকে ধরে নিয়ে হত্যাআমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরেও এক জামায়াত নেতাকে গ্রেফতারের পর হত্যা করা হয়েছে। তিনি উপজেলা জামায়াতের অর্থ সম্পাদক এনামুল হককে (৪৫)। তবে পুলিশ বলছে, এনামুল কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।নিহত জামায়াত নেতা এনামুল হক কোটচাঁদপুর উপজেলার বলরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও চাঁদপাড়া গ্রামের আবদুল মালেক বিশ্বাসের ছেলে।নিহতের পরিবার ও দলীয় সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মুয়াবিয়া হোসেনের পক্ষে মনোনয়ন জমা দিতে শনিবার বিকালে এনামুল কোটচাঁদপুরের ইউএনও কার্যালয়ে যান। বিকাল ৪টার দিকে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে পুলিশের সাদা পোশাকধারী একটি দল তাকে আটক করে।আটকের পর তাকে রাতের কোনো এক সময়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম।তবে যৌথবাহিনীর দাবি, শনিবার রাত কোটচাঁদপুর উপজেলার নওদাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বন্দুকযুদ্ধের সময় এনামুল হক নিহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি সাটার গান ও দুটি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধে ৩০ রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ আহত হয়েছে বলে কোটচাঁদপুর থানার ওসি শাহজাহান আলী খান দাবি করেছেন।নিহত এনামুল হকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।আজ ঝিনাইদহের দুই উপজেলায় হরতালএদিকে যৌথবাহিনী কর্তৃক দলের নেতাকে ধরে নিয়ে হত্যার প্রতিবাদে আজ ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে স্থানীয় জামায়াত। আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ হরতাল কর্মসূচি চলবে
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment