বাংলাদেশ আওয়ামীলিগ সরকারের নেতাদের এক নতুন কন্ঠ


বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আন্দোলন থেকে সোরে যাওয়ায় সরকারের মেয়াদ নিয়ে মহাজোটের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের সুর পাল্টে গেছে। তারা এখন একসুরে বলে বেড়াচ্ছেন, প্রার্থী ও ভোটারবিহীন ৫ জানুয়ারির কলঙ্কিত নির্বাচনে জয়ী হলেও নতুন সরকার ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকবে। অথচ নির্বাচনের আগে তো বটেই, এমনকি নির্বাচনের পরও প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছিলেন, নতুন সরকার ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায় না। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে যে কোনো মুহূর্তে নতুন নির্বাচন হতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই ইউটার্নের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ দলটির উপদেষ্টা ও প্রবীণ নেতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্বাচনের দু’দিন আগে গত ৩ জানুয়ারি সিলেটে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, নতুন সরকার শপথ নেয়ার পর যে কোনো সময় আবারও নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনের পর সরকারের মেয়াদ ৫ বছর হবে কিনা জানতে চাইলে মুহিত সেদিন বলেছিলেন না ৫বছর তো আমরা বলি নাই। আমরা বলছি এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ হয় নাই। সুতরাং আমরা চাই আরেকটি নির্বাচন বাংলাদেশে হোক ।
বিরোধী দলকে উদ্দেশ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন আসেন বসেন এবংআমরাও এক সাথে বসি    এবংএক সাথে বসে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেই নতুন করে নিরভাচনে র তারিখ ঠিক করি
প্রয়োজনে কালকেও নিরভাচন হতে পারে, মানে ২৪ জানুয়ারির পরেও হতে পারে। নতুন সরকারের শপথের পর যে কোনো সময় হতে পারে।’ এর তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যান মুহিত। ২১ জানুয়ারি ঢাকায় সাংবাদিকদের মুহিত বলেন, নতুন সরকার ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকবে। আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিদেশের কোনো চাপ রয়েছে কিনা—সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে মুহিত বলেন হোয়াট ইজ চাপ আমরা ৫ বছরের
জন্য নির্বাচিত সরকার ৫ বছরই থাকব।অথচ এর আগে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপির উদ্দেশে সরকার বারবারই বলেছে যদি তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ এবং সহিসংতা বন্ধ করে তবে সংলাপের মাধ্যমে আগাম নির্বাচন হতে পারে।
শুধু মুহিত একা নন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে নতুন নির্বাচন হতে পারে।
১৫ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছি বলে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে হবে এমন নয়। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার মানসিকতা সরকারের নেই। পরিস্থিতিই বলে দেবে আমরা কতদিন ক্ষমতায় থাকবো। প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত।ভোটের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিএনপি না এলেও সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখতে এই নির্বাচন করতে হচ্ছে।ভোটের পরদিন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনেও শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যদি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ও সহিংসতার পথ ছাড়ে, তবে সংলাপে সমঝোতা হলে মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে।
তবে মাঠ ফাঁকা পেয়ে এখন মধ্যবর্তী নির্বাচনের চিন্তা থেকে দৃশ্যত সরে যাচ্ছে সরকার।
গতকাল আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, পাঁচ বছরের আগে ক্ষমতা ছাড়বেন না আওয়ামী লীগ। এমনকি বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্ভাবনাও নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। তোফায়েল আরও বলেছেন একটি সরকার পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়। এই সরকারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আগামী পাঁচ বছর ঘোষিত কার্যকলাপ চালিয়ে যাব।তিনি বলেন, সংলাপের কথা আমাদের না। এটা বিদেশিরা বলছে।আন্দোলনবিমুখ বিএনপি, বেপরোয়া সরকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজনীতিতে কার্যত চালকের আসনে ছিল ১৮ দল। ঢাকায় বিএনপির কোনো দৃশ্যমান উপস্থিতি না থাকলেও গত ২৫ অক্টোবর থেকেই ঢাকার বাইরে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।আন্দোলন এতোটাই সফল ছিল যে ঢাকার বাইরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসাও বলতে বাধ্য হন, শেখ হাসিনা শুধু ঢাকার প্রধানমন্ত্রী। টানা দুই মাস এভাবে দেশ অচল করে রাখেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।আন্দোলনের এই ধারাবাহিকতার মধ্যেই আসে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন।নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে সেদিন রচিত হয় নতুন মাইলফলক। আক্ষরিত অর্থেই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে জনগণ। নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকের মতে, আওয়ামী লীগের প্রতি দুর্বল ব্যক্তিও মন্তব্য করেন নির্বাচনে ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ঝানু কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে ১০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনের বিনা ভোটেই মহাজোটের জয়লাভ এবং ভোটারবিহীন নির্বাচনে বাকি ১৪৭ আসনে জয়ী হওয়ার ঘটনায় হতবাক হয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বিশ্ব গণমাধ্যমে নির্বাচনকে একবাক্যে প্রহসন বলে মন্তব্য করা হয়। নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো। এমনকি আওয়ামী লীগের জয়লাভের তিন সপ্তাহ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শপথের দুই সপ্তাহ পরও উল্লেখিত দেশ ও সংস্থাগুলো নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং সরকার প্রধানকে অভিনন্দন জানায়নি।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো পশ্চিমা বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল একটি দেশের কার্যত অবৈধ সরকারের ঘুম হারাম হওয়ার কথা। অথচ ঘটছে তার উল্টোটা। আওয়ামী লীগের নেতারা এখন জোর গলায় বলে বেড়াচ্ছেন ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকবে নতুন সরকার।রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক ইস্যুতে বিএনপির বারবার অবস্থানে পরিবর্তন এবং আন্দোলন থেকে পিছু হটার কারণেই সরকার এখন ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখতে পারছে।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment