বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘সরকার সরাসরি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কবলিত। এসব জায়গা দেখে মনে পড়ে পাক হানাদারদের নৃশংসতার ঘটনা।’তিনি জানান, ‘দলীয় হিসেবে গত তিন মাসে সারাদেশে ২২৭ জন নিহত ও গুম হয়েছে ১৮৭ জন। আর জোটগত হিসাবে ১৮ দলসহ নিহতের এ সংখ্যা ২৯৪ জন।’সংবাদ সম্মেলনে গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিরোধী জোটের নিহত ও গুমের তালিকা সরবরাহ করা হয়। এতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে চট্টগ্রাম বিভাগে ১০১, সিলেটে ৩, রাজশাহীতে ৪০, রংপুরে ১৫, খুলনায় ৫০, ঢাকায় ১৩ ও বরিশাল বিভাগে ৫ জন মিলে বিএনপির ২২৭ জনকে হত্যার দাবি করা হয়।
এর সঙ্গে জামায়াতসহ জোটভুক্ত অন্যান্য দলের আরও ৬৭ জন মিলে যৌথবাহিনীর অভিযানে ১৮ দলীয় জোটের মোট নিহতের সংখ্যা ২৯৪ জন।
উল্লেখ্য, যৌথ বাহিনীকে নিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া বক্তব্যের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘কেন? আমাদের নেত্রী কী বলেছেন? আপনাদের কাছে প্রশ্ন (সাংবাদিক), নেত্রীর বক্তব্যে কোথায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা খুঁজে পেয়েছেন? মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা আশরাফ সাহেবের মানায় না।’ এই সময় তিনি হেসে বলেন, ‘আসলে তিনি (সৈয়দ আশরাফ) কোন অবস্থায় থেকে এসব কথা বলেছেন, তা আমি জানি না। আমাদের নেত্রী রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কোনো বক্তব্য দেননি।’ খালেদা জিয়া ক্ষমা না চাইলে ব্যবস্থা নেয়া হবে—সৈয়দ আশরাফের এমন হুশিয়ারির বিষয়ে প্রশ্ন করলে ফখরুল বলেন, ‘এখন গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। তারা ’৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল, এখনও ভিন্ন লেবাসে তা অব্যাহত রেখেছে।’নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছেমির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নজিরবিহীন কলঙ্কিত নির্বাচন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে ৫ শতাংশের কম মানুষ ভোট দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৩০টি দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। এই নির্বাচন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘নির্বাচনের পর ১৮ দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর ও সম্পদ লুট করা হয়েছে। সবচেয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠার ঘটনা খুন-গুম। পুলিশের খাতায় এজহারভুক্ত আসামিদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলার প্রধান তিন আসামির লাশ পাওয়া গেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র যখন নির্বাসিত তখন বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের এভাবে দমন করা হচ্ছে। সরকারের তথাকথিত মন্ত্রীদের মুখে প্রতিহত ছাড়া কোনো কথা নেই। পত্রিকায় বেরিয়েছে, বিদেশি মানবাধিকার সংস্থগুলো বলছে, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যারাই সমালোচনা করে, তাদেরই হিংসাত্মকভাবে দমন করা হচ্ছে।’ তিনি এসব জুডিশিয়াল কিলিংয়ের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আওয়ামী লীগের প্রতি বেশ কিছু বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছেন। সেগুলো হলো- হত্যাযজ্ঞ, খুন-গুম বন্ধ করা, কারাগারে আটক থাকা নেতাদের মুক্তি, দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল, আলাপ-আলোচনা করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
মির্জা ফখরুল হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘দ্রুত আমাদের প্রস্তাবগুলো মেনে নিন। ইতিহাস সাক্ষী, কোনো স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি, পারবেও না।’
সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আযাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, তকদির হোসেন জসিম প্রমুখ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন