নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ডাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আগামীকাল সোমবার থেকে অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছে। এতে টানা হরতাল ও অবরোধে বিপাকে পড়ে যাওয়া উদ্যোক্তা, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বেশ কিছুদিন ধরে অবরোধ, হরতাল ও সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়ে যান। সরকার ও বিরোধী দল নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে কর্মসূচি পরিচালনা করায় উদ্যোক্তারা চরম হতাশ হয়ে পড়েন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তারা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় অবরোধ স্থগিতের ঘোষণা জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে।গতকাল শনিবার বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, সোমবার ৬টা থেকে অবরোধ থাকছে না। পরবর্তী কর্মসূচি পরে জানানো হবে। আজ রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এদিকে অবরোধ কর্মসূচি স্থগিতের ফলে দেশের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা কামনা করছেন, দেশের স্বার্থে সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড যেন ফের না আসে। কয়েক মাস ধরে দফায় দফায় হরতাল আর অবরোধে ইতিমধ্যে শিল্প উত্পাদন, শিক্ষা ব্যবস্থা ও দেশের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্যোক্তা ও শ্রমিকসহ সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক সহিংস কর্মসূচি বন্ধ না হলে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠবে।এদিকে গত প্রায় এক বছর ধরে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে উত্পাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। যেগুলো চালু রয়েছে, সেগুলোরও উত্পাদন অনেক কম। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ইতিপূর্বে ঋণ করে বেতন ভাতা দিলেও আর বেশিদিন তাও সম্ভব হবে না। ফলে অনেকেই শিগগির শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করতে পারেন। ইতিমধ্যে কিছু কিছু শিল্প কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।দীর্ঘ সময় ধরে সহিংস রাজনীতির ফলাফল ব্যাখ্যা করে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত একটি গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় এক বছর ধরে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। দফায় দফায় হরতাল অবরোধ আর সহিংসতার কারণে কাঁচামাল আনা ও পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। ফলে অর্ডার নিতে খুব সাবধানী হতে হচ্ছে। অর্ডার নেয়ার পর অনেক ক্ষেত্রেই সময়মতো তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিমানে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। পণ্য সরবরাহে দেরি হওয়ায় অর্ডার বাতিলও হয়ে যাচ্ছে। ওই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, কয়েক মাস ধরে ঋণ করে বেতন দিয়ে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। ঋণ করে হলেও চলতি মাস হয়তো শ্রমিকদের বেতন দিতে পারব। এরপরও সহিংসতা চলতে থাকলে শ্রমিক ছাঁটাই করে দিতে বাধ্য হবো। এ অবস্থায় অবরোধ স্থগিত করাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে সবাই।রাজনৈতিক অস্থিরতার সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার নতুন উদ্যোক্তারা। বিনিয়োগ করার পর পরই লোকসানের বোঝা বইতে গিয়ে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বেশি বিপাকে পড়েছেন যারা বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ করে বিনিয়োগ করেছেন। এ অবস্থায় যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিক সমঝোতার দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের সহিংসতা অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদি অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে। উদ্যোক্তারা বলছেন, যারা চায় দেশের রফতানি কমে গিয়ে বিশেষ কোন কোন দেশ লাভবান হোক, তাদের দেয়া কোন কর্মসূচিই আমাদের জন্য শুভ হতে পারে না।এদিকে অর্থনীতিবিদরা বার বার তাগিদ দিচ্ছেন যে কোনো মূল্যে সমঝোতার মাধ্যমে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য। অন্যথায় বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাবে। যা দেশের ইমেজ হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এমনিতেই আমেরিকার বাজারে জিএসপি (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা) স্থগিতের ঘোষণায় দেশের ইমেজ সংকটে পড়েছে। তার ওপর রাজনৈতিক অস্থিরতা বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সম্পর্কে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতির স্বার্থে অতি দ্রুত সহিংসতা বন্ধ করে নিরপদ পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় দেশের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবেন। তিনি বলেন, এভাবে রাজনৈতিক সহিংসতা চলতে থাকলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও প্রভাব পড়তে পারে।
- Blogger Comment
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন