৫২৮ মেট্রিকটন গমেরআত্মসাৎ করেছেন অভিযোগ উঠেছে

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ আবদুল মান্নান কালীগঞ্জ উপজেলার ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় দেড় কোটি টাকার ৫২৮ মেট্রিক টন গমের বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বরাদ্দ গমের মূল্য প্রায় এক কোটি ৫৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। সাংসদ ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানে ১৭ হাজার করে মোট ২৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। বাকি এক কোটি ২৭ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের এই গম কোথাও ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে, কোথাও প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে, আবার কোথাও নামমাত্র কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার কলেজপাড়া বাসন্তী মন্দির সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চার মেট্রিক টন গম। এর সরকারি মূল্য এক লাখ ১৭ হাজার ৭৮৪ টাকা। এই টাকা ব্যয়ও দেখানো হয়েছে। অথচ ওই পাড়া ঘুরে কোনো মন্দির পাওয়া যায়নি। ওই পাড়ার বাসিন্দা রাম চন্দ্র ঘোষ জানান, তাঁদের পাড়ায় এই নামে কোনো মন্দির নেই।এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কলেজপাড়ার বাসিন্দা প্রভাষক অমলেন্দ্র পাল ওরফে সাধন পাল জানান, স্থানীয় সাংসদ আবদুল মান্নান তাঁকে ডেকে ১৭ হাজার টাকা দিয়েছেন। বলেছেন, পাড়ায় দুর্গাপূজা করতে খরচ হয়, সে জন্য এই টাকা দেওয়া হলো।

একইভাবে ঢাকালেপাড়া কালীমন্দির সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চার মেট্রিক টন গম। অথচ ওই পাড়ায় কোনো মন্দির নেই বলে জানান পাড়ার বাসিন্দারা। জনৈক হীরা লালকে সভাপতি করে ওই গম তুলে নেওয়া হয়েছে।

এলাকার কয়েকজন অভিযোগ করেন, এই বরাদ্দ গম আত্মসাৎ করতে বেশির ভাগ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ জন্য সাংসদ নিজ হাতেই টাকা বিতরণ করেছেন।

স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্র জানায়, কালীগঞ্জ পৌরসভা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টিআর প্রকল্পের আওতায় ৫২৮ মেট্রিক টন গম বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দ স্থানীয় সাংসদই ভাগ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম, বরাদ্দের পরিমাণ ও প্রকল্প সভাপতির নাম তিনিই ঠিক করেন। সেই নিয়মে সাংসদ আবদুল মান্নান ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামের একটি তালিকা দিয়েছেন। সরেজমিনে কয়েকটি মন্দির, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা গেছে, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা গম বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানেন না। স্থানীয় সাংসদ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা বলে কর্মকর্তাদের ডেকে ১৭ হাজার টাকা করে ধরিয়ে দিয়েছেন। তিন থেকে সাত টন পর্যন্ত গম বরাদ্দের ক্ষেত্রেও সবাইকে একই পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছে।

কোলাবাজার হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, কালীগঞ্জ পৌর এলাকার শ্রীরামপুর ঈদগাহ, উপজেলার কামালহাট কাত্যিয়ানী পূজামন্দির, কলেজপাড়া পূজামন্দির, খেদাপাড়া পশ্চিমপাড়া কাত্যিয়ানী পূজামন্দির সংস্কার এবং উপজেলার কাদিরকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে প্রকল্প দেখানো হলেও ১৭ হাজার টাকার বেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে টাকা বা গম কিছুই দেওয়া হয়নি।

উপজেলার রাকড়া ঘোষবাড়ীর মোড় থেকে নিতাই ঘোষের বাড়ি ও পান্তাডাঙ্গা পিচের মাথার সেতু থেকে রণজিতের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ১৪ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই দুই রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, ঘোষবাড়ীর রাস্তার ওপরের ঘাস কেটে নিচের মাটি বের করে দেওয়া হয়েছে। অন্যটির কোনো কাজ হয়নি।

পিআইও মো. নুরুজ্জামান জানান, একজন পিআইওর পক্ষে এতগুলো প্রকল্প দেখা সম্ভব নয়। তবে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হলে সেগুলো ফেরতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংসদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রকল্প সভাপতিরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। আমার হাতে কাউকে টাকা দেওয়ার কথা ঠিক নয়। আর আমার এলাকায় বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩০০ মেট্রিক টন গম। নির্বাচন সামনে রেখে আমাকে হেয় করার চেষ্টায় নানা অভিযোগ করা হচ্ছে।’

Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment