জাতিসংঘে ওবামা-রুহানির সম্ভাব্য করমর্দন আশাবাদ

বারাক ওবামা, হাসান রুহানি
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সাক্ষাৎ হতে পারে। দুজন হয়তো করমর্দনও করতে পারেন। বলতে পারেন সৌজন্যমূলক কথাবার্তা। এতে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের ৩০ বছরের বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঐতিহাসিক এ ঘটনার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে চিঠি, বিবৃতি, টেলিভিশন সাক্ষাৎকার এমনকি টুইটার বার্তায় উভয় পক্ষই সতর্কতা অবলম্বন করছে। দিচ্ছে সংযমের পরিচয়, যাতে তিন দশকের কূটনৈতিক অচলাবস্থা দূর হয়।যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ৩০ বছর ধরে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এত দিন ধরে পরোক্ষ বা মধ্যস্থতাকারীর সহযোগিতায় যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে দেশ দুটি। কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ওবামা-রুহানির সম্ভাব্য করমর্দন অনেকের মনে আশার আলো জাগিয়েছে।পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উদারপন্থী নেতা রুহানি গত জুনে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। মার্কিন নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁর।ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি রুহানিকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে ‘নমনীয়তা’ প্রদর্শন করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এতে ওয়াশিংটন আশাবাদী হয়ে উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক প্রকল্প বন্ধের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেহরানের কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। কয়েক দিন আগে এক মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুহানি বলেছেন, তাঁর দেশ কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বড় দুশমন’ প্রেসিডেন্ট রুহানি সত্যি কতটা আন্তরিক, তা খতিয়ে দেখতে চান ওবামা।
ইতিমধ্যে ওবামা ও রুহানি চিঠি আদান-প্রদান করেছেন। দুই নেতাই জাতিসংঘে পারস্পরিক স্বার্থে সম্মান প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। ওবামা ও রুহানির করমর্দনের মধ্য দিয়েও তাঁদের উভয়ের রাজনৈতিক জুয়া খেলার বিষয়টি ফুটে উঠবে। এ বিষয়ে দুই নেতাই আগে থেকে সতর্ক। পান থেকে চুন খসলেই সমালোচকদের তোপের মুখে পড়তে হবে।
এমআইটির সিকিউরিটি স্টাডিজ প্রোগ্রামের সহযোগী গবেষক জিম ওয়ালশ বলেন, ‘একটু করমর্দন, শুভেচ্ছা বিনিময়, ইতিবাচক হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে।’
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওবামা ও রুহানির মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে না। তবে দুই নেতার অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।এ বিষয়ে রুহানি কৌশলী জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজনীতির বিশ্বে যেকোনো কিছু ঘটা সম্ভব।দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল ইন্ডারফার্থ বলেছেন, ওয়াশিংটনকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তেহরানে ফিরে গিয়ে রুহানিকে বিপাকে পড়তে না হয়।ওবামা-রুহানির সম্ভাব্য সাক্ষাৎ নিয়ে এত আগ্রহের অনেক কারণের একটা হলো, রুহানি ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের ঠিক উল্টো। আহমাদিনেজাদ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলের কট্টর সমালোচক। রুহানি উদারপন্থী।
ওবামা মিসর, সিরিয়া ও ইরান নীতি নিয়ে নিজ দেশে সমালোচনার মুখে রয়েছেন। কিছু সন্দেহবাদী ডেমোক্র্যাট ও বিরোধী রিপাবলিকান নেতা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, রুহানিকে বাইরে থেকে আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। তবে সতর্ক থাকতে হবে। এমনও হতে পারে, তেহরানের পারমাণবিক প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা প্রলম্বিত করার কৌশল হাতে নিয়েছেন তিনি। ইসরায়েল গত পরশু দাবি করেছে, আর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে পারমাণবিক বোমা বানাবে ইরান। কিন্তু ইরানের ওপর নজর রাখেন এমন কয়েকজন বলেছেন, এমনও হতে পারে, ওবামা-রুহানির ক্ষণকালের জন্য দেখা হওয়া, করমর্দন ও কথা বলার সুবাদে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের ঢিমে তেতালায় চলা পরমাণু আলোচনায় আবার গতি সঞ্চার হতে পারে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়েও ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে আলোচনার অনেক কিছু আছে। তেহরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন জুগিয়ে আসছে। ওয়াশিংটন বিরোধীদের পক্ষ নিয়েছে।
ওবামা-রুহানির সাক্ষাৎ নিয়ে বিশ্বের গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে খবর প্রকাশ করবে। তবে তা তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে সামান্য ভূমিকাই রাখবে।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment