শিশুর মস্তিষ্কে জীবন্ত লার্ভার সিস্ট পাওয়া গেছে



বাড়ির বড়রা কেন বার বার হাত মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে খাবার খেতে বলেন তা হাড়ে হাড়ে টের পেল পশ্চিম মেদিনীপুরের পাঁচ বছরের ফিরোজা খাতুন । পূর্ব যাদবপুরের এক হাসপাতালে ডাক্তাররা যখন ওর মাথা থেকে ক্রিকেট বলের সাইজের সিস্ট বার করলেন তাতে কিলবিল করছিল এক ফিতাকৃমির কয়েক হাজার লার্ভা । অস্ত্রোপচারের সময়ে সার্জেনের হাত কেপে সেই সিস্ট ফেটে গেলেই কয়েক হাজার লার্ভা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ত । তখন ফিরোজাকে বাঁচানোই মুশকিল হতো । তবে শেষ ভাল যার সব ভাল তার । মানুষের পেটে পরজীবী কৃমিকীটের কথা সকলের জানা । কিন্তু মাথায় পোকা হওয়ার ব্যাপারটা সাধারণত কথার কথা হিসেবেই ধরা হয় । চিকিৎসকেরা কিন্তু জানাচ্ছেন শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে এক ধরনের ফিতাকৃমির লার্ভা জমে তৈরি এ ধরনের সিস্ট চিকিৎসা পরিভাষায় হাইড্যাটিড সিস্ট পাওয়া একেবারে বিরল নয় তবে বিরল হল মস্তিষ্কে এই ধরনের সিস্ট পাওয়া । সাধারণত যকৃৎ বা ফুসফুসে এই সিস্ট বেশি দেখতে পাওয়া যায় । মানুষের দেহে এই ধরনের সিস্ট মেলার কারণ হিসেবে চিকিৎসক এবং দেশ বিদেশের চিকিৎসা জার্নাল যা জানাচ্ছে তা ও রীতিমতো কপালে ভাঁজ ফেলার মতো হাত ধোয়ার বিষয়টা একটা বড় ভূমিকা নিলেও আসল কারণ হল কুকুর ।

মানুষের সঙ্গে যুগযুগান্ত ধরে কুকুরের সখ্য । কুকুরপ্রেমীর সংখ্যাও নেহাত কম নয় । সেই কুকুরের জন্য কী করে মানুষের দেহে এ রকম লার্ভা দিয়ে তৈরি সিস্ট হতে পারে । চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের ব্যাখ্যা কুকুরের দেহে এক ধরনের ফিতাকৃমি পাওয়া যায় । কুকুরের মলে সেই কৃমির ডিম অনেক সময়ে মিশে থাকে । কুকুর মাঠে ঘাটে মলত্যাগ করলে ঘাসের সঙ্গে তা মিশে যায় । সেই ঘাস ছাগল ভেড়া, হরিণ, গরু জাতীয় প্রাণিরা খেলে কৃমির ডিম তাদের দেহে ঢুকে ডিম ফেটে লার্ভা তৈরি হয় এবং শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশীতে ছড়িয়ে যায় । কিন্তু তা প্রাপ্তবয়স্ক ফিতাকৃমিতে পরিণত হতে পারে না । সেই সব প্রাণীর কাচা মাংস বা ভাল করে রান্না না হওয়া মাংস কুকুর খেলে লার্ভা আবার কুকুরের শরীরে ঢুকে পূর্ণদৈর্ঘ্যের প্রাপ্তবয়স্ক ফিতাকৃমিতে পরিণত হতে পারে এবং আবার ডিম পাড়ে । এ ভাবে তাদের জীবনশৈলী চলতে থাকে । আপাতভাবে এর মধ্যে মানুষের কোনও জায়গা নেই । মানুষের দেহে এর প্রবেশ নেহাতই দুর্ঘটনাবশত । কী ভাবে চিকিৎসক ভবতোষ বিশ্বাসের কথায় কুকুরের মলের সঙ্গে ফিতাকৃমির ডিম মিশে হয়তো মাঠে ঘাটে পড়ে রয়েছে । সেখানে কোনও মানুষ বসলে বা খেললে তার হাতে মল লেগে যেতে পারে । তার পরে ভাল করে হাত না ধুয়ে খাবার বা জল খেলে সেই ডিম মানুষের পেটে ঢুকে লার্ভা তৈরি হতে পারে । সুব্রত মৈত্রও বলেন যারা বাড়ির বা রাস্তার কুকুর নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করেন তাদের হাতেও কোনও ভাবে কুকুরের মল লাগতে পারে । তাই কোনোভাবে কুকুরের মলে হাত লাগলে বা মাঠেঘাটে ঘোরার পরে অবশ্যই হাত ভাল করে পরিষ্কার করতে হবে ।

চিকিৎসকদের মতে বাড়ির কুকুরকে সাধারণত ডি ওয়ার্ম করা হয় অর্থাৎ ওষুধ দিয়ে কৃমি নাশ করা হয় । কিন্তু ওষুধ দিলেও সব সময়ে সব কৃমি মারা যায় না । ফলে সাবধানতা সব সময়ে দরকার । ভবতোষবাবু জানালেন তিনি আর জি করে থাকার সময়ে প্রতি মাসে এই ধরনের সিস্টের কেস অন্তত ১০থেকে১২টি পেতেন । তবে সেগুলির বেশির ভাগই ছিল যকৃৎ বা ফুসফুসে । মস্তিষ্কে এমন সিস্ট বিরল । চিকিৎসকেরা বলছেন মানুষের শরীরে ডিম ফেটে লার্ভা ছড়িয়ে পড়ার সময়ে তা সাধারণত যকৃৎ বা ফুসফুসে বাধা পেয়ে সিস্ট তৈরি করে । মাত্র ১ শতাংশ ক্ষেত্রে কোথাও বাধা না পেয়ে লার্ভা পৌছে যায় মস্তিষ্কে । সেই ঘটনাই ঘটেছে ফিরোজার ক্ষেত্রে । গত পয়লা সেপ্টেম্বর পিয়ারলেস হাসপাতালের নিউরোসার্জন প্রসাদকৃষ্ণনের নেতৃত্বে চিকিৎসকেরা তার মস্তিষ্কে থাকা প্রায় ৯ সেন্টিমিটারের সিস্টটি বাদ দেন । কয়েক হাজার ফিতাকৃমির লার্ভা দিয়ে তৈরি সিস্টটি যাতে বার করার সময়ে ফেটে গিয়ে জীবন্ত লার্ভা গোটা মাথায় ছড়িয়ে না যায় তার জন্য বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল । আপাতত ফিরোজা সুস্থ । তার মাথায় ব্যথা এবং শরীরের একাংশের পঙ্গুত্ব চলে গেছে ।

তথ্য ও কৃতজ্ঞতাঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন ।
Share on Google Plus

About juwel ishlam

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment